Posts

Showing posts from May, 2016

সাধু ভাষায় ‘ঙ্গ’ চলিত ভাষায় ‘ঙ’ / ড. মোহাম্মদ আমীন

সাধু ভাষায় ‘ঙ্গ’ চলিত ভাষায় ‘ঙ’: সাধু ভাষায় ব্যবহৃত কিছু শব্দের ‘ঙ্গ’- এর স্থলে চলিত ভাষায় কোমল রূপ হিসেবে ‘ঙ’ আসে। যেমন : আঙ্গুর> আঙুর; কাঙ্গাল> কাঙাল। তেমনি, আঙিনা, আঙুল, গাঙ, গোঙানি, ঘুঙুর, ঘেঙানি চঙর, চাঙারি, চোঙ, চোঙা, জাঙাল, ঝিঙে, টঙ, টাঙা টাঙানো, টাঙি, টুঙি, ঠোঙা, ঠ্যাঙানো, ঠ্যাঙাড়ে, ডাঙা ডিঙা, ডিঙানো, ডিঙি, ডোঙা, ঢ্যাঙা, ফিঙে, বাঙালি ভাঙ, ভাঙন, ভাঙা, ভাঙানো, ভেঙানি, ভ্যাঙানো, মাছরাঙা রঙ, রঙিন, রাঙা, রাঙামাটি, লাঙল, শিঙা, হাঙর, হিঙ ইত্যাদি।

দেশের গানের প্রাণ : গোবিন্দ হালদার / ড. মোহাম্মদ আমীন

গোবিন্দ হালদার একজন গীতিকার। তিনি ১৯৩০ খ্রিস্টাব্দের ২১ ফেব্রুয়ারি পশ্চিমবঙ্গের বনগাঁয়ে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর রচিত প্রথম কবিতা ‘আর কতদিন’। তিনি প্রায় সাড়ে তিন হাজার কবিতা ও গান লিখেছেন। তাঁর প্রকাশিত প্রথম কাব্য ‘দূরদিগন্ত’। মুক্তিযুদ্ধের সময় স্বাধীন বাংলা বেতারে সম্প্রচারিত তাঁর লেখা গানসমূহের মধ্যে ‘মোরা একটি ফুলকে বাঁচাবো বলে যুদ্ধ করি’, ‘এক সাগর রক্তের বিনিময়ে’, ‘পূর্ব দিগন্তে সূর্য উঠেছে’, ‘লেফট রাইট লেফট রাইট’ , ‘হুঁশিয়ার হুঁশিয়ার’, ‘পদ্মা মেঘনা যমুনা’, ‘চলো বীর সৈনিক’, ‘হুঁশিয়ার, হুঁশিয়ার বাংলার মাটি’ প্রভৃতি অন্যতম।   তাঁর গানসমূহের মধ্যে স্বাধীন বেতারে প্রথম প্রচারিত গান হচ্ছে সমর দাসের সুরারোপিত ‘পূর্ব দিগন্তে সূর্য উঠেছে’ গানটি। পাক বাহিনীর আত্মসমর্থনের খবর পাওয়ার পরপরই ১৬ ডিসেম্বর সন্ধ্যায় প্রচারিত হয় ‘এক সাগর রক্তের বিনিময়ে’ গানটি। এ গানে সুর দিয়েছিলেন আপেল মাহমুদ এবং মূল কণ্ঠ দিয়েছিলেন স্বপ্না রায়। তৎসঙ্গে কণ্ঠ দিয়েছিলেন আপেল মাহমুদ ও সহশিল্পীবৃন্দ।   দুই মাস যাবত কলকাতার মানিকতলায় জেএন রায় সেবা ভবন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন গোবিন্দ হালদার ২০১৫ খ্র

ণত্ব বিধান ও ষত্ব বিধান / শুবাচ

"ণত্ব বিধান  ও  ষত্ব বিধান" বাংলা ভাষার শব্দে দন্ত্য-ন এর মূর্ধন্য-ণ তে পরিবর্তনের নিয়মসমূহকে ণত্ব বিধান  এবং  দন্ত্য-স এর মূর্ধন্য-ষ তে পরিবর্তনের নিয়মসমূহকে ষত্ব বিধান বলা হয়। দন্ত্য-ন এর মূর্ধন্য-ণ তে পরিবর্তনের নিয়মসমূহঃ ঋ, র, ষ বর্ণের পরে দন্ত্য-ন মূর্ধন্য-ণ হয়। যেমন- ঋণ, বর্ণ, বিষ্ণু, বরণ, ঘৃণা। যদি ঋ, র, ষ বর্ণের পরে স্বরবর্ণ, ক-বর্গ, প-বর্গ, য, ব, হ অথবা অনুস্বার (ং) থাকে, তার পরবর্তী দন্ত্য-ন মূর্ধন্য-ণ হয়ে যায়। যেমন- কৃপণ, নির্বাণ, গ্রহণ। ট-বর্গের পূর্বের দন্ত্য-ন মূর্ধন্য-ণ হয়। যেমন- বণ্টন, লুণ্ঠন, খণ্ড। প্র, পরা, পরি, নির্‌- উপসর্গের  এবং  ‘অন্তর’ শব্দের পরে নদ্‌, নম্‌, নশ্‌, নহ্‌, নী, নুদ্‌, অন্‌, হন্‌- কয়েকটি ধাতুর দন্ত্য-ন মূর্ধন্য-ণ নয়। যেমন- প্রণাম, পরিণাম, প্রণাশ, পরিণতি, নির্ণয় ইত্যাদি। প্র, পরা ইত্যাদির পর ‘নি’ উপসর্গের দন্ত্য-ন মূর্ধন্য-ণ হয়। যেমন- প্রণিপাত, প্রণিধান ইত্যাদি। কতগুলো শব্দে স্বভাবতই মূর্ধন্য-ণ হয়। যেমন- কণা, গৌণ, নিপুণ, বাণিজ্য ইত্যাদি। কোথায় কোথায় ণত্ব বিধান নিষেধ বা খাটে নাঃ ত-বর্গযুক্ত দন্ত্য-ন মূর্ধন্

অনুজ্ঞায় নিষেধ / সুমন্ত বর্মণ

'না' কি কেবলই 'না'? বাংলা ভাষায় দু ধরনের 'না' আছে—একটি নিষেধাত্মক,  আর  একটি অনুজ্ঞায় পীড়াপীড়ি বা নির্বন্ধসূচক৷ দ্বিতীয়টির উদাহরণ: →যা-না, দেখ্-না ওখানে কে বসে আছে৷ →শোনো-না আমার কথাটা৷ →বলুন-না আজ কী দিয়ে ভাত খেয়েছেন৷ →ও একবার কথাটা পেড়েই দেখুক- না৷ উপর্যুক্ত 'না'গুলো নিষেধ প্রকাশ তো করেই না, উপরন্তু পীড়াপীড়ি, জেদ, গোঁ, গভীর আগ্রহ প্রকাশ করে৷ যদি অনুজ্ঞায় নিষেধ করতে হয়, অর্থাৎ কাউকে কিছু বারণ করতে হয় তবে বর্তমান অনুজ্ঞার ক্রিয়ারূপের সঙ্গে নয়, ভবিষ্যৎ অনুজ্ঞার সঙ্গে 'না' যোগ করতে হবে৷ এখানে অনুজ্ঞা, অনুজ্ঞা-নির্বন্ধ  এবং  অনুজ্ঞা-নিষেধ দিয়ে প্রক্রিয়াটি দেখানো হলো: অনুজ্ঞা: তুমি ওকে সেই কথাটা বলো৷ অনুজ্ঞানির্বন্ধ: তুমি ওকে সেই কথাটা বলো-না৷ অনুজ্ঞানিষেধ: তুমি ওকে সেই কথাটা বোলো না৷ অনুজ্ঞা: তুই জিনিসটা কেন্৷ অনুজ্ঞানির্বন্ধ: তুই জিনিসটা কেন্-না৷ অনুজ্ঞানিষেধ: তুই জিনিসটা কিনিস না৷ অনুজ্ঞা: আপনি হাত থেকে ওটা নামিয়ে রাখুন৷ অনুজ্ঞানির্বন্ধ: আপনি হাত থেকে ওটা নামিয়ে রাখুন-না৷ অনুজ্ঞানিষেধ: আপনি হাত থেকে ওটা নামিয়ে রাখবেন না৷ শুধু

হালনাগাদ-করা বাংলা শব্দভাণ্ডার চাই / খুরশেদ আহমেদ

হালনাগাদ-করা বাংলা শব্দভাণ্ডার চাই! বাংলা ভাষায় প্রতিনিয়ত নতুন শব্দ একদিকে এই ভাষার ভিতর থেকে তৈরি হচ্ছে অন্যদিকে বাইরে থেকে এসে ঢুকছে। এগুলো সামাল দেওয়া, একটা শৃঙ্খলার মধ্যে আনা বাংলার অভিভাবকদের, অভিধান প্রণেতাদের, বাংলা একাডেমির কাজ। আমি দেখি, বিভিন্ন ভাষার অভিভাবকেরা প্রতি বছর সদ্য-স্বীকৃত  ও  -আত্তীকৃত নতুন শব্দের তালিকা প্রকাশ করেন। Oxford English Dictionary প্রতি বছর তাদের শব্দভাণ্ডার চার বার হালনাগাদ করে। ২০১৫-র সেপ্টেম্বরে তাদের অভিধানে শত শত শব্দ, পদবন্ধ (phrases)  ও অর্থ (sense) অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। তাদের পরবর্তী আপডেট আসছে এই ডিসেম্বর ২০১৫-তে। সে তুলনায় আমাদের বাংলা প্রায়-অভিভাবকহীন, যেন খোলা রাস্তায় রোদ-বৃষ্টি-শীত-বসন্তে আপন শক্তিতে টিকে-থাকা টোকাই! বাংলা একাডেমি ব্যবহারিক বাংলা অভিধানটির প্রথম প্রকাশ : স্বরবর্ণ অংশ – ১৯৭৪, ব্যঞ্জনবর্ণ অংশ – ১৯৮৪। [লক্ষ করুন, মাঝখানে ১০ বছর।] দ্বিতীয় সংস্করণ : ১৯৯২। [মাঝখানে ৮ বছর।] পরবর্তী সংস্করণ - যাকে বাংলা একাডেমি তৃতীয় সংস্করণ বলা থেকে সংগত কারণেই বিরত থেকেছে, বলেছে পরিমার্জিত সংস্করণ – এর প্রকাশ : ২০০০। [মাঝখানে আবার ৮ বছর।] এই পরি

পুরস্কার, পরিষ্কার, তিরস্কার, আবিষ্কার / মোরশেদ হাসান

বানান লিখতে গিয়ে সমস্যায় পড়ে না বা ভুল হয় না এমন মানুষ বোধ করি বিরল। বাংলা ব্যাকরণ ভালো জানা থাকলে অনেক ভুলের হাত থেকে রক্ষা পাওয়া যায়। তবে সবাই ব্যাকরণে সিদ্ধহস্ত হবেন এমনটা আশা করাও বোধ করি ঠিক নয়। ব্যাকরণ অনেকের কাছে ভীতিকর বস্তুও বটে। সুতরাং এক্ষেত্রে কিছু সহজ কৌশল প্রয়োগ করে যদি ভুলের হাত থেকে উদ্ধার পাওয়া যায় তবে তা মনে হয় মন্দ নয়। আসুন নিচের শব্দগুলো দেখি---- পুরস্কার, পুরষ্কার, পরিস্কার, মনষ্কামনা, আবিস্কার, বহিষ্কার, পরিষ্কার, মনস্কামনা, আবিষ্কার, নমষ্কার, নমস্কার। এই শব্দগুলোর মধ্যে কোনটি সঠিক   আর   কোনটি ভুল কীভাবে বের করা যাবে? এখানে সমস্যাটি হচ্ছে যুক্তবর্ণে (যুক্তাক্ষর উচ্চারণ নয়) ‘স্ক’ হবে নাকি ‘ষ্ক’ হবে। এ নিশ্চয় দারুণ এক যন্ত্রণা। এর মধ্যে যদি বলি এসব বিসর্গ সন্ধির নিয়মে হচ্ছে, আসুন নিয়মটি দেখি----তবে তো স্ট্যাটাস পড়াই অনেকে ছেড়ে দেবেন। তার চেয়ে সহজ কৌশলে চলে আসি। প্রথমেই আপনি শব্দগুলোর চেহারা ভালো করে দেখুন। যুক্তবর্ণের ('স্ক' বা 'ষ্ক') ঠিক আগের বর্ণটির দিকে তাকান। এই আগের বর্ণটির সঙ্গে ই-কার বা উ-কার যুক্ত থাকলে ‘ষ্ক’ হবে  আর

মাদককে না বলুন

মাদককে না বলুন সিরাজ মিয়া মদ পান করছিল। এমন সময় পুলিশ আসতে দেখে সে জোরে জোরে না না বলে চিৎকার করতে শরু করল। পুলিশ তাকে মাতাল ভেবে ধরে কোর্টে চালান করে দিল। বিজ্ঞ বিচারক সিরাজ মিয়াকে জিজ্ঞাসা করল : পুলিশ যখন আপনাকে গ্রেফতার করে তখন কি আপনি মদ পান করছিলেন? না হুজুর। মদের এই বোতল কি আপনার হাতে ছিল না? জ্বি, ছিল হুজুর! এটা তো আমারই বোতল হুজুর। তাহলে যে বলছেন, আপনি মদ পান করেননি। আমি মদ পান করতে যাব কেন হুজুর? আমি তো মাদককে ‘না’ বলার জন্য ওই মদ কিনেছি!   তার মানে? হুজুর, একটা পোস্টারে লেখা দেখলাম, ‘মাদককে না’ বলুন। এ অবস্থায়, দূরের থেকে চিৎকার করলে তো   আর   মাদক শুনতে পাবে না। তাই মাদককে না বলার জন্য এক বোতল মদ কিনে তাকে শুনিয়ে শুনিয়ে না বলছিলাম হুজুর। এমন সময়  পুলিশ  আমাকে ধরে নিয়ে এসেছে। এটা তো নাগরিকের দায়িত্বপালনে বাধা প্রদানের অপরাধ হুজুর। বিজ্ঞ বিচারক সিরাজ মিয়ার বক্তব্য শুনে বললেন : আপনার মাদককে না বলার ধরনে আমি মুগ্ধ। কিন্তু আমার রায়ে আজও  কেউ মাদকমুক্ত হতে পারেনি। সবাই মাদকেমুগ্ধ থেকে গেছে।