Posts

Showing posts from April, 2017

মূর্ধন্য / খুরশেদ আহমেদ- শুবাচ

১। 'মূর্ধন্য’ মানে ‘মূর্ধা স্পর্শ করে উচ্চার্য'। এখন, প্রশ্ন, মূর্ধা বলতে বাগ্‌যন্ত্রের ঠিক কোন স্থানটিকে বুঝব? ২। বাংলা বর্ণমালা থেকে আমরা জানি ও চিনি─‘মূর্ধন্য’ বিশেষণে বিশেষিত বর্ণ─'মূর্ধন্য ণ' ও 'মূর্ধন্য ষ'। ৩। বাংলা একাডেমি প্রমিত বাংলা ব্যবহারিক ব্যাকরণ (প্রথম প্রকাশ: মাঘ ১৪২০/জানুয়ারি ২০১৪) থেকে আমরা জানতে পারি: ট ঠ ড ড় ঢ ঢ় ধ্বনিগুলো উচ্চারণ-স্থান অনুযায়ী মূর্ধন্য। ওখানে আবিষ্কার করে অবাক হই, এই মূর্ধন্য ধ্বনিগুলোর মধ্যে 'মূর্ধন্য ণ' ও 'মূর্ধন্য ষ' নেই, যদিও ‘মূর্ধন্য ণ’ ও ‘মূর্ধন্য ষ’ তাদের পরিচয়-জ্ঞাপক নামের মধ্যেই ‘মূর্ধন্য’ তকমাটি বয়ে চলেছে। ৪। বাংলা একাডেমি আধুনিক বাংলা অভিধান [প্রথম প্রকাশ ফেব্রুয়ারি ২০১৬] অনুযায়ী 'মূর্ধন্য’ ও ‘মূর্ধা’-র অভিধার্থ: 'মূর্ধন্য /মুর্‌ধোন্‌নো/ [স. মূর্ধন্‌+য] বিণ. জিহ্বার অগ্রভাগদ্বারা মূর্ধা স্পর্শ করে উচ্চার্য।' এবং ‘মূর্ধা /মুর্‌ধা/ [স. মুহ্‌+অন্‌] বি. মস্তক, মাথা।’ ৫। বাংলা একাডেমি আধুনিক বাংলা অভিধানে 'মূর্ধন্য’ ও ‘মূর্ধা’ দুটি অব্যবহিত সন্নিহিত ভুক্তি; কিন্তু, আমার সমস্যা, এই অভিধ

অগ্নি পরীক্ষা / ড. মোহাম্মদ আমীন

রাবণ বধের পর সীতা রাক্ষস - বাহিত শিবিকায় চড়ে   বিভীষণের সঙ্গে   রামের কাছে ফিরে আসেন । কিন্তু অনেক দিন রাবণপুরীতে অতিবাহিত করায় সীতার চরিত্র সম্পর্কে  প্ৰজাদের এবং রামচন্দ্রের মনে সন্দেহের প্রশ্ন ওঠে । এই অপমানের জন্য সীতা আগুনে প্ৰবেশ করে প্ৰাণবিসর্জন দেবেন ঠিক করেন । সকলের সম্মুখে সীতা প্ৰদীপ্ত চিতাগ্নির মধ্যে প্ৰবেশ করলে , অগ্নিদেব সীতাকে নিজ হস্তে ধারণ করে অগ্নির মধ্য থেকে উঠে , তাঁকে রামের হাতে অৰ্পণ করেন । এই অগ্নিপরীক্ষায় সীতার সতীত্ব প্ৰমাণিত হয় । সকলের মনের সন্দেহ বিদূরিত হয় ।   এ ঘটনা হতে অগ্নি পরীক্সা বাগধারার উদ্ভব। পুরাকালে ভারতবর্ষে অগ্নিপরীক্ষার আর একটি প্ৰথা ছিল। কোন নারীর সতীত্ব সম্বন্ধে সন্দেহ হলে , তার পবিত্ৰতা সম্বন্ধে সংশয় দূর করবার জন্য লাঙ্গলের অগ্নিতাপ্ত লৌহশিলা তাকে লেহন করতে হতো । জিহবা দগ্ধ না হলে সেই নারী যে যথার্থই সতী তা প্ৰমাণ হয়ে যেত । 

অক্ষপাদ / ড. মোহাম্মদ আমীন

পুরাণে বর্ণিত বিখ্যাত দার্শনিক ঋষি।  প্রকৃত নাম গৌতম। ব্যাসদেব, গৌতম-লিখিত ন্যায়শাস্ত্রের নিন্দা করলে গৌতম, ব্যাসের মুখদর্শন করবেন না বলে প্ৰতিজ্ঞা করেন। ব্যাসদেব ক্ষমা প্রার্থনা করলে গৌতম প্ৰসন্ন হন, কিন্তু প্ৰতিজ্ঞাভঙ্গের ভয়ে চক্ষুদ্বারা দর্শন না করে নিজের চরণের উপর চক্ষু সৃষ্টি করে ব্যাসের মুখদর্শন করেন। সেই হতে গৌতম অক্ষপাদ নামে খ্যাত। 

অসামরিক ও বেসামরিক / ড. মোহাম্মদ আমীন

অসামরিক ও বেসামরিক শব্দ দুটোর মধ্যে অর্থগত কোনো পার্থক্য নেই। একটিতে অ দিয়ে এবং অন্যটিতে বে দিয়ে সামরিক শব্দটির বিপরীত অর্থ প্রকাশ করা হয়েছে। তাই বলা যায়, অসামরিক অর্থ বেসামরিক এবং বেসামরিক অর্থ অসামরিক। অসামরিক ও বেসামরিক উভয়েরই অভিধার্থ 'সমরবিষয়ক নয় এমন', 'civil'। অসামরিক ও বেসামরিক শব্দ দুটিতে অ ও বে যথাক্রমে সংস্কৃত ও ফারসি উপসর্গ, সামরিক সংস্কৃত শব্দে যুক্ত হয়েছে।   দ্ব্যর্থতার শঙ্কা না করেই বলা যায়, 'অসামরিক (বা বেসামরিক) পরমাণু চুক্তি'', বিমান হামলায় অসামরিক (বা বেসামরিক) মানুষের মৃত্যু, কিংবা কোনো সামরিক সংস্থায় অসামরিক (বা বেসামরিক) পদে নিয়োগ। তবে, যখন একটি সংস্থা বা প্রতিষ্ঠান বা কর্তৃপক্ষের নাম হয় 'বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ', কিংবা যখন একটি আইনের নাম হয় 'বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ আইন, ২০১৭', তখন 'বেসামরিক' শব্দটির জায়গায় 'অসামরিক' লিখলে চলবে না, কারণ ওটাই তার নাম, অন্য কিছু তার নাম নয়।

খুন ও হত্যা / ড. মোহাম্মদ আমীন

Image
সাধারণভাবে ‘হত্যা’ ও ‘খুন’ অর্থগতভাবে অভিন্ন অর্থ বহন করে। তবে ‘খুন’ সাধারণত মানুষের বেলায় কিন্তু ‘হত্যা’ শব্দটি মানুষ ও পশু উভয়ের ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হয়। যেমন : অযথা পশুহত্যা অনুচিত।শিশুটিকে খুন করা হয়েছে। তাই সকল ‘হত্যা’ খুন কিন্তু সকল ‘খুন’ হত্যা শব্দ দিয়ে প্রকাশ করা যায় না।সাধারণত কেউ লিখেন না : বাঘটিকে খুন করা হয়েছে, বরং লিখেন : বাঘটিকে হত্যা করা হয়েছে। খুনি বাঘটা একটা মানুষ খুন/হত্যা করেছে।   আবার কোনো সন্ত্রাসী বা ধ্বংসাত্মক কাজ নির্দেশ করতেও ‘খুন’ শব্দটি ব্ যবহার করা হয়। যদি এখানে মৃত্যু না-ও ঘটে। যেমন : খুনখারাবি, খুনজখম, খুনগুম প্রভৃতি। রক্ত বুঝাতেও ‘খুন’ শব্দ ব্যবহার করা হয়। প্রকৃতপক্ষে ‘খুন’ অর্থ রক্ত। তা্ই সাধারণভাবে ঝরানো মৃত্যুকে অনেক সময় খুন বলা হয়।তবে সব খুনে রক্তপাত থাকে না। যেমন : বিষ প্রয়োগে খুন। অন্যদিকে, সব খুনে উদ্দেশ্য থাকে কিন্তু সব হত্যায় উদ্দেশ্য না-ও থাকতে পারে।  সাধারণভাবে  খুন এবং হত্যা অভিন্ন অর্থে ব্যবহৃত হতেও দেখা যায়। মিল। সব খুনে উদ্দেশ্য থাকে। কিন্তু সব হত্যায় উদ্দেশ্য না-ও থাকতে পারে। আবার সব খুনে রক্তপাত থাকে না। যেমন- বিষ প্রয়োগে খুন।