বাংলা বানান / ড. মোহাম্মদ আমীন


কয়েকটি বহুল ব্যবহৃত শব্দের বানান/৩:

তিরস্কার, ত্বরান্বিত (তরান্বিত নয়), দণ্ডবৎ, দরুন, দারুণ, দামি, দায়ী, দারিদ্র্য, দরিদ্রতা,
দিগ্‌ভ্রম,দিগ্‌ভ্রান্ত, দিগ্‌হারা, দিঘি, দিঙ্‌নির্ণয় (দিক্‌নির্ণয় নয়), দিঙ্‌নির্দেশ,
দিঙ্‌নির্দেশনা, দিশারি,দীর্ঘসূত্রী, দুরুচ্চার্য, দুরূহ, দুর্গ, দুষ্কৃতকারী, দূর্বা (ঘাস),
দূষণীয় (দোষনীয় নয়), দৃক্‌পাত, দেওয়াল (দেয়াল নয়), দৌড়ঝাঁপ, 
দৌরাত্ম্য, দ্বন্দ্ব, ধনাঢ্য, ধরন, ধারণ, ধারণা, ধূমপান,
ধ্যানধারণা, ধ্বংসোন্মুখ, নগণ্য, নচেৎ,
নতুন, নূতন, নভশ্চর,
নয়তো, নাগাড়,
নানি।



কটূক্তি (কটুক্তি নয়), কণা, কণ্ঠস্থ, কত, কতগুলো, কথামতো, কথোপকথন, 
কদাচিৎ, কপর্দকশূন্য, কয়েক বার, কেরানি, করণিক, কর্তৃবৃন্দ, 
কর্মকর্তৃবৃন্দ, কাঁঠালচাঁপা,কল্যাণীয়াসু (মহিলার ক্ষেত্রে)
কল্যাণীয়েষু (পুরুষের ক্ষেত্রে),কাঙ্ক্ষিত, কাচ, কিম্ভূত, 
কূটনীতি, কূপ, কূলকিনারা, কৃচ্ছ্রতা (কৃচ্ছতা নয়), 
কেননা, ক্বচিৎ, ক্রূর, ক্ষান্ত, ক্ষুণ্ন, খুঁটিনাটি, 
খুনীখুশি, খেলাধুলা, খোঁজ, খোঁজখবর, 
খোঁয়াড়, গড্ডলিকা (গড্ডালিকা নয়), 
গণনা, গণপূর্ত,
গরিষ্ঠ।


নারায়ণ, নারায়ণগঞ্জ, নিয়মতান্ত্রিকভাবে, নিরীক্ষণ, নিরীহ, নির্ভীক, নিষ্প্রয়োজন, নীরোগ,
নীহারিকা, নূতন, নূপুর, নেহাৎ, নৈঃশব্দ্য (নৈঃশব্দ নয়), নৈঃসঙ্গ্য, ন্যস্ত, ন্যায্য,
ন্যায়, ন্যূন, ন্যূনতম, ন্যূনপক্ষে, পঁয়ষট্টি, পক্ব (পক্ক নয়), পঙ্‌ক্তি, পচা,
পড়াশুনো/পড়াশোন (পড়াশুনা নয়), পণ্ডিম্মন্যতা, হীনম্মন্যতা, পদবি,
পরপর, পরবর্তী কালে, পরবর্তী সময়ে,পরাঙ্মুখ (পরান্মুখ নয়), 
পরামর্শমতো, পরাস্ত, পরিবহণ, পর্যটনকেন্দ্র, পাশ্চাৎপদ,
পশ্চাৎপট, পশ্চাদ্‌গামী, পাণিনি, পিএইচ.ডি
পিপীলিকা, পীড়াপীড়ি।


পুজো/পুজা, পুনঃপুনঃ, পুরুষকণ্ঠ (কিন্তু পরুষ কণ্ঠ), পুষ্করিণী, পৃথক্করণ (পৃথকীকরণ নয়), পৃথগন্ন,
পোশাক, পোশাকআশাক, পৌনঃপুনিক, পৌরোহিত্য, প্রজ্বলন, প্রণিধান, প্রতিদ্বন্দ্বী, প্রধানমন্ত্রী,
প্রবীণ, প্রাচীন, প্রশাসন-ভবন (প্রশাসনিক ভবন নয়), প্রশংসা, প্রাণপণ, প্রাণিজগৎ,
প্রিয়তমাসু (মহিলার ক্ষেত্রে), প্রিয়তমেষু (পুরুষের ক্ষেত্রে), প্রোজ্জ্বল,
ফলপ্রসূ, ফুরসত, ফুর্তি, স্ফূর্তি, বক্ষ্যমাণ, বন্দি, বধূ, 
বক্ষঃস্থল, (কিন্তু অন্তস্তল), বয়ঃকনিষ্ঠ,বয়ঃসন্ধি, 

গাঁথা (মালা গাঁথা), গাথা (কাহিনী), গার্হস্থ্য, গুণ, গুনে গুনে, গুলী (পিস্তলের)
গৃহবধূ, গৃহীত, গোধূলি, গোষ্ঠী, গোষ্পদ, ঘুঁটি (দাবার), ঘনিষ্ঠ, ঘাঁটি, ঘুণ,
ঘূর্ণি, ঘূর্ণ্যমান/ঘূর্ণায়মান, ঘোরাঘুরি, চলনশক্তিরহিত, চিক্কণ,
চিত্রাঙ্কণ, চূষ্য (চোষ্য নয়), ছাঁকনি, জগদ্বিখ্যাত,
জাগরূক, জাতীয়করণ, জাত্যভিমান, ঝুঁকিপূর্ণ,
ঢুঁ মারা, তক্ষুনি, তৎসংক্রান্ত, তত,
তদনুসারে (তদানুসারে নয়)
তর্জনী, তাঁতি, 
তাবৎ।


বাল্মীকি, বাহাদুরি, বারণ, বিদূষী, বিদ্বৎসমাজ, বিপণন, বিপৎসংকুল, বিপৎসংকেত,
বিপদ্‌গ্রস্ত, বিবদমান, বিভীষণ, বিভূতিভূষণ, বিশ্রী, বিশ্বজিৎ, বীথি, বুড়ি,
বুদ্ধিজীবী, বুভুক্ষ, বৈদগ্ধ্য, বৈদ্যুতীকরণ, ব্যবধান, ব্যভিচার, ব্যর্থ,
ব্যাকরণ, ব্রাহ্মণ, ভঙ্গ, ভণিতা, ভবিষ্যৎ, ভবিষ্যদ্বাণী,
ভরণপোষণ, ভস্ম (কিন্তু ভীষ্ম), ভালো মতো, 
ভালো (মন্দের বিপরীত), ভীরু, ভুঁড়ি,
ভুজ, ভুজঙ্গ, 
ভুবন।

স্বায়ত্তশাসন, স্মরণিকা, হয়তো, হা-পিত্যেশ, হৃৎপিণ্ড, হীনম্মন্যতা, হৃৎস্পন্নদ, হৃদ্‌রোগ,
অকালপক্ব, অগ্রহায়ণ, অঙ্কন, অঙ্গীভূত, অঙ্গুলি (কিন্তু আঙুল), অচিন্ত্য,
অঞ্জলি, অণু-পরমাণু, অদ্ভুত, অধীনস্থ, অনন্যোপায়, অনূর্ধ্ব, অন্তঃকরণ,
অন্তঃসত্ত্বা, অন্তঃসারশূন্য, অন্তর্ভুক্ত, অন্তর্ভূত, অন্ধকূপ, অন্বেষণ,
অপরাহ্ণ, অর্পণা, অপাঙ্‌ক্তেয়, অভিভূত, অমাবস্যা, অলঙ্ঘ্য,
আঁকাবাঁকা, আঁটোসাঁটো, আঁধার (অন্ধকার), আধার (স্থান)
আকাঙ্ক্ষা, আনুষঙ্গিক, আন্তঃরাষ্ট্রীয়, আপৎকালীন,
অবির্ভাব, আবিষ্কার, আমূল, আয়ত্ত,
আর্দ্র, আশিস্‌।
 


·         শব্দের মধ্যাংশে বিসর্গ/২

নিঃসম্পাত, নিঃসম্বল, নিঃসহায়, নিঃসাড়, নিঃসারণ, নিঃস্ব, নিঃস্বার্থ, নিঃস্বীকরণ,
পয়ঃপ্রণালী, পুনঃপুন, পুনঃপ্রবেশ, পৌনঃপুনিক, প্রাতঃকাল, প্রাতঃকৃত্য,
প্রাতঃক্রিয়া, প্রাতঃপ্রণাম, প্রাতঃসন্ধ্য, বয়ঃপ্রাপ্ত, বয়ঃসন্ধি, বয়ঃস্থ,
বহিঃপ্রকাশ, বহিঃশত্রু, বহিঃশুল্ক, বহিঃসমুদ্র, বহিঃস্থ,
মনঃকল্পিত, মনঃকষ্ট, মনঃক্ষুণ্ন, মনঃক্ষোভ,
মনঃপীড়া, মনঃপুত, মনঃপ্রাণ,
যশঃকীর্তন, শিরঃপীড়া,
শিরঃশূল।


অতঃপর, অধঃকৃত, অধঃক্রম, অধঃক্ষেপণ, অধঃপতন,
অন্তঃসত্ত্বা, অন্তঃসলিলা, অন্তঃসার, তপঃক্লেশ,
নিঃশব্দ, নিঃশর্ত, নিঃস্নেহ,
অন্তঃরাষ্ট্রিক।


শব্দের মধ্যাংশে বিসর্গ:
অন্তঃস্থ, ইতঃপর, ইতঃপূর্বে, উচ্চৈঃস্বরে, চক্ষুঃশূল, চতুঃসীমা, ছন্দঃপতন,
জ্যোতিঃপুঞ্জ, অন্তঃপুর, অন্তঃক্রীড়া, অন্তঃকোণ, অন্তঃকরণ, অধঃস্থ,
অধঃপতিত, অন্তঃশত্রু, দুঃশাসন, দুঃসংবাদ, দুঃসময়,
দুঃসাধ্য, দুঃসহ, দুঃস্বপ্ন, দুঃসাহসিক, দুঃস্থ, 
নিঃশঙ্ক, নমঃশুদ্র, নিঃশ্মশ্রু, নিঃশ্রেণি, 
নিঃসংকোচ, নিঃসংশয়, নিঃসঙ্গ, 
নিঃসন্তান, নিঃশ্বাস
নিঃসন্দেহ, 
নিঃস্ব।

প্রাতঃকৃত, প্রাতঃক্রিয়া, প্রাতঃস্নান, প্রাতঃস্মরণীয়, বয়ঃক্রম, বয়ঃসন্ধি,
বহিঃপ্রকাশ, বহিঃশুল্ক, বহিঃসমুদ্র, মনঃকষ্ট, মনঃক্ষুণ্ন,
মনঃপীড়া, মনঃপুত, মনঃপ্রাণ, মনঃসংযোগ,
মনঃসমীক্ষা, শিরঃপীড়া, স্বতঃপ্রবৃত্ত
স্বতঃপ্রণোদিত, স্বতঃসিদ্ধ
স্বতঃস্ফূর্ত।
 

অতঃপর, অধঃপতন, অন্তঃকরণ, অন্তঃকোণ, অন্তঃক্রীড়া, অন্তঃপুর, অন্তঃরাষ্ট্রিক,
অন্তঃসার, দুঃশাসন, দুঃসংবাদ, দুঃসময়, দুঃসহ, দুঃসাহস, দুঃস্বপ্ন,
নিঃশঙ্ক, নিঃশব্দ, নিঃশর্ত, নিঃশেষ, নিঃসঙ্কোচ, নিঃসংশয়,
নিঃসঙ্গ, নিঃসন্তান, নিঃসন্দেহ, নিঃসম্বল, নিঃসরণ,
নিঃসহায়, নিঃসাড়, নিঃসীম, পয়ঃপ্রণালি, 
পুনঃপুন, পুনঃপ্রবেশ, পৌনঃপুনিক, 
প্রাতঃকাল।

শব্দের মধ্যাংশে বিসর্গ/৩:

সদ্যঃকৃত, সদ্যঃপক্ব, সদ্যঃপ্রবিষ্ট, সদ্যঃপ্রসূত, সদ্যঃস্নাত, মনঃসংযোগ,
স্বতঃপ্রবৃত্ত, স্বতঃপ্রকাশিত, স্বতঃপ্রণোদিত, মনঃসমীক্ষা,
স্বতঃপ্রমাণিত, স্বতঃস্ফূর্ত, মনঃস্থ, নিঃস্পৃহ,
স্রোতঃপথ, বয়ঃকনিষ্ঠ, বক্ষঃস্থল, 
প্রাতঃস্মরণীয়, প্রাতঃস্নান,
নিঃসীম, নিঃসৃত,
নিঃস্রাব।



বিসর্গ দেবেন; কিন্তু দেবেন না:
অন্তঃকরণ কিন্তু অন্তরঙ্গ; অন্তঃপুর কিন্তু অন্তরীণ;
অন্তঃসার কিন্তু অন্তরাল; নিঃশঙ্ক কিন্তু নিসর্গ;
নিঃশেষ কিন্তু নিষেধ; নিঃসৃত কিন্তু নিসৃষ্ট
প্রাতঃকাল কিন্তু প্রাতরাশ।

বক্ষঃস্থল কিন্তু বক্ষ্যমাণ, বয়ঃক্রম কিন্তু বয়োধর্ম
বয়ঃসন্ধি কিন্তু বয়োবৃদ্ধ; মনঃকষ্ট কিন্তু মনস্তত্ত্ব
মনঃক্ষুণ্ন কিন্তু মনোদুঃখ; মনঃসংযোগ কিন্তু মনোবিজ্ঞান
স্বতঃসিদ্ধ কিন্তু স্বতবিরোধ।


অন্তঃকরণ কিন্তু অন্তরঙ্গ; অন্তঃপুর কিন্তু অন্তরীণ;
অন্তঃসার কিন্তু অন্তরাল; নিঃশঙ্ক কিন্তু নিসর্গ;
নিঃশেষ কিন্তু নিষেধ; নিঃসৃত কিন্তু নিসৃষ্ট
প্রাতঃকাল কিন্তু প্রাতরাশ।


শব্দের শেষের বিসর্গ দেবেন না:
শব্দের শেষের বিসর্গ উচ্চারিত হয় না। তাই আধুনিক বাংলা বানানে বিস্ময়সূচক শব্দ ছাড়া (আঃ উঃ)
অন্ত্য-বিসর্গ বর্জিত। যেমন:
প্রথমত, অন্তত, অংশত, ইতস্তত, ক্রমশ, তৃতীয়ত, প্রায়শ,
নভ, পয়, প্রথমত, প্রধানত, বক্ষ, বস্তুত, গৌণত, তপ,
বিশেষত, মুখ্যত,যশ, সাধারণত, প্রকাশ্যত,
স্বত, স্বভাবত ইত্যাদি।
সন্ধিজাত শব্দের মধ্যাংশে /স্ত, স্থ, স্প, শ্ব, স্র/ যুক্তব্যঞ্জনগুলোর পূর্বে অবস্থিত বিসর্গ বিকল্পে লুপ্ত হতে পারে।
এসব ক্ষেত্রে বিসর্গ না দিলেও বানানে ভুল হয় না। যেমন:
অন্তস্থ, নিস্তব্ধ, নিস্পন্দ, নিস্পৃহ, দুস্থ,
মনস্থ, বক্ষস্থল, বয়স্থ, নিশ্বাস,
নিস্রাব, বহিস্থ।


হস্‌-চিহ্ন দিতে হবে/নইলে বানান ভুল হবে:
নিচে কয়েকটি শব্দ দেয়া হল, শব্দগুলোতে হস্‌-চিহ্ন দিতে হবে।
উদ্‌ঘাটন, উদ্‌বেগ, উদ্‌ভ্রান্ত, উদ্‌যাপন, দিক্‌পাল,
দিক্‌ভ্রম, দিক্‌ভ্রষ্ট, দিগ্‌দর্শন,
প্রাক্‌-কথন, বাক্‌-সর্বস্ব, 
বাগ্‌বিতণ্ডা,
বাগ্‌দেবী।


Comments

  1. অনেক অনেক উপকৃত হলেম। ধন্যবাদ।

    ReplyDelete

Post a Comment

Popular posts from this blog

উপলক্ষ ও উপলক্ষ্য

পার ও পাড় / ড. মোহাম্মদ আমীন

তৎসম চেনার কৌশল / ড. মোহাম্মদ আমীন