Posts

Showing posts from August, 2017

তলোয়ার নয় তরোয়াল / ড. মোহাম্মদ আমীন

সংস্কৃত ‘তরবারি’ শব্দ থেকে ‘তরোয়াল’ ও ‘তলোয়ার’ শব্দের উদ্ভব। ব্যুৎপত্তি বিশ্লেষণ করলে ‘তলোয়ার’ শব্দের চেয়ে ‘তরোয়াল’ বানানাই অধিক সংগত। বাংলা একাডেমি আধুনিক বাংলা অভিধানে ‘তরোয়াল শব্দকে প্রমিত বলা হয়েছে। এই অভিধানে পৃথক ভুক্তি হিসেবে ‘তরোয়াল’ বানান নেই। তবে ‘তরোয়াল’ শব্দের অর্থ হিসেবে তরবারি ও অসির সঙ্গে তলোয়ার শব্দটিও রাখা হয়েছে। অনেক অভিধানে ‘তলোয়ার’ শব্দটি ভুক্তি হিসেবে দেখা যায়। যে কারণে হোক না, ‘তলোয়ার’ বানান ‘তরোয়াল’ বানানের চেয়ে বেশি প্রচলিত। প্রচলন বিবেচনা করলে এটাকে অসংগত বলা যাবে না। যেহেতু বাংলা একাডেমি ‘তলোয়ার’ বানানকে প্রমিত করেছে এবং ব্যুৎপত্তি বিশ্লেষণ করলে এই বানানটিই ব্যাকরণগতভাবে সমধিক সিদ্ধ, তাই তরবারি, অসি বা তলোয়ার অর্থে ‘তরোয়াল’ বানান লেখাই সমীচীন। সূত্র : ড. মোহাম্মদ আমীন, বাংলা বানান কোথায় কী লিখবেন এবং কেন লিখবেন।

উল্লেখিত / উল্লিখিত / ড. মোহাম্মদ আমীন

বাংলা ব্যাকরণের নিয়ম মেনে নিলে. উপরে যা লেখা হয়েছে অর্থ প্রকাশে ‘উল্লেখিত’ অশুদ্ধ। উৎ + লিখিত = উল্লিখিত, ‘উল্লেখিত’ নয়। ‘উৎ’ মানে উপরে বা আগে এবং ‘লিখিত’ মানে ‘যা লেখা হয়েছে’। সুতরাং, ‘উল্লিখিত’ শব্দের অর্থ ‘উপরে লিখিত বা আগে লিখিত’। ‘উল্লেখিত’ শব্দটি অনেকে ‘উপরে বা পূর্বে লেখা হয়েছে’ অর্থ প্রকাশে প্রয়োগ করে থাকেন। কিন্তু ‘যা উপরে/পূর্বে লেখা হয়েছে’ এবং ‘যা অন্যকে দিয়ে উল্লেখ করানো হয়েছে’ অর্থের দিক থেকে অভিন্ন নয়। সুভাষ ভট্টাচার্য বলেছেন,“ বাংলাা ও সংস্কৃতে ‘উল্লেখ’ ও ‘উল্লিখিত শব্দের ধাতুমূল ‘লিখ্’ হলেও এর সঙ্গে লেখা, লেখন, লেখনী প্রভৃতি শব্দ গভীর সংশ্লিষ্টতার কারণে এসে যায়, তেমনি এসে যায় লিখিত কিন্তু লেখিত আসে না। একই কারণে উল্লেখ (্উৎ + লেখ) হলেও উল্লেখিত নয়, উল্লিখিত লিখতে হবে। এসম্পর্কে সতর্কতা প্রয়োজন। জ্যোতিভূষণ চাকী বাংলা ভাষার ব্যাকরণ [প্রথম প্রকাশ ১৯৯৬, তৃতীয় মুদ্রণ ২০১৩] পৃষ্ঠা ২৯ পৃষ্ঠায় লিখেছেন, “ণিজন্ত হলেই 'উল্লেখিত' হতে পারে উদ্─লিখ্-ণিচ্+ত। যা উল্লেখ করা হয়েছে অর্থে উল্লিখিত, কিন্তু যা অন্যকে দিয়ে উল্লেখ করানো হয়েছে সে অর্থে 'উল্লেখিত'।” অতএব উপরে

উপরোক্ত উপর্যুক্ত ও উপরিউক্ত / ড. মোহাম্মদ আমীন

অতৎসম ‘উপর’ শব্দের সঙ্গে তৎসম ‘উক্ত’ শব্দের সন্ধির ফলে ‘উপরোক্ত’ শব্দের উদ্ভব। তৎসম ‘ উক্ত’ শব্দের বিশ্লেষণ হচ্ছে, বচ্ + ক্ত। অতৎসম শব্দের সঙ্গে তৎসম শব্দের সন্ধি বৈয়াকরণগণ বিধেয় মনে করেন না। তাই তাঁদের মতে, ‘উপরোক্ত’ শব্দটি অসিদ্ধ। সুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায় বলেছেন, “সংস্কৃত সন্ধির নিয়ম বাঙ্গালার পক্ষে খাটে না, বাঙ্গালা সন্ধির অন্য নিয়ম আছে।” এজন্য বৈয়াকরণগণ ‘উপর’ শব্দের সঙ্গে ‘উক্ত’ শব্দের সন্ধি না করে তৎসম ‘উপরি’ শব্দের সঙ্গে তৎসম ‘উক্ত’ শব্দের সন্ধি করাই সমীচীন মনে করেন। এভাবে সন্ধি করলে হয়, উপরি + উক্ত = উপর্যুক্ত। এই বিশ্লেষণ অনুযায়ী ‘উপরোক্ত’ শব্দটি অসিদ্ধ, ‘উপর্যুক্ত’ শব্দই সিদ্ধ। ‘উপর্যুক্ত’ অর্থ প্রকাশে ‘উপরিউক্ত’ শব্দের ব্যবহারও লক্ষণীয়। বাংলা একাডেমি আধুনিক বাংলা অভিধানেও ‘উপর্যুক্ত’ অর্থে ‘উপরিউক্ত’ শব্দটি ভুক্তি হিসেবে পাওয়া যায় কিন্তু ‘উপরোক্ত’ শব্দটি পাওয়া যায় না।সুভাষ ভট্টাচার্য বলেছেন, “একথা ঠিক যে সন্ধির খাঁটি বাংলা নিয়ম এখনও রচিত হয়নি এবং এও ঠিক যে আমরা তদুপরি লিখি ; এখনও বাঙালি লেখকেরা তদুপরে লিখতে শুরু করেননি। তবু ‘উপরোক্ত’ শব্দটি দীর্ঘকাল ধরে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। উনি

আফগানিস্তান, পাকিস্তান, হিন্দুস্থান / ড. মোহাম্মদ আমীন

Image
‘স্তান’ ফারসি শব্দ এবং ‘স্থান’ সংস্কৃত শব্দ। পাক-ই-স্তান = পাকিস্তান এবং আফগান-ই-স্তান = আফগানিস্তান। তাই উৎস বিবেচনায় এই দুই শব্দের বানানে ‘স্থান’ লেখা সমীচীন নয়। যদিও শব্দের ব্যবহার, প্রয়োগ, প্রচলন বা জনপ্রিয়তা শব্দের উৎস কিংবা উৎপত্তির চলছে।” সৈয়দ মুজতবা আলী কেন ‘পাকিস্তান’ ও ‘আফগানিস্তান’ নামের দুই দেশের নামের বানানে একটিতে ‘স্তান’ এবং অন্যটিতে ‘স্থান’ লিখেছেন তার কোনো ব্যাখ্যা আমার কাছে নেই। যদিও ফারসি ‘স্তান’ এবং সংস্কৃত ‘স্থান’ প্রায় সমার্থক। ধার ধারে না। অনেকে ‘আফগানিস্থান’ লিখে থাকেন। সৈয়দ মুজতবা আলী ‘বড়বাবু’ গ্রন্থে লিখেছেন, “ইরানের সঙ্গে আফগানিস্থানের মনের মিল নেই, এদিকে তেমনি আফগান পাকিস্তানীতে মন-কষাকষি সুভাস ভট্টাচার্যের মতে, “তবু ইসলামি দেশনামে ‘স্তান’ লেখাই রীতি এবং হিন্দুস্থান শব্দে ‘স্তান’ লেখা সমীচীন নয়। ‘হিন্দুস্থান’ নামের উর্দু উচ্চারণ ‘হিন্দোস্তাঁ’ হলেও দীর্ঘ কাল ধরে হিন্দুস্থান’ বানানই বাংলায় বহুল প্রচলিত।” হয়তো ‘হিন্দু’ আর ‘স্থান’ শব্দের অভিন্ন উৎসই এর অন্যতম কারণ। সূত্র : বাংলা ভাষার মজা লেখক : ড. মোহাম্মদ আমীন প্রকাশক : পাঞ্জেরী পাবলিকেশন্স লি.

ময়নতদন্ত / ড. মোহাম্মদ আমীন

Image
‘ময়না’ ও ‘তদন্ত’ শব্দের সমন্বয়ে ‘ময়নাতদন্ত’ শব্দ গঠিত।‘তদন্ত’ শব্দের অর্থ কোনো বিষয়ে তদন্ত করে সত্য নিরূপণ। বাংলা ভাষায় ব্যবহৃত ‘ময়না’ শব্দের তিনটি অর্থ আছে। ‘ময়না’ যখন দেশি শব্দ তখন এর অর্থ, কালো পালকাবৃত শালিকজাতীয় পাখি। নুসন্ধান। আরবি ‘মু'আইনা’ শব্দের অর্থ, চক্ষু দিয়ে, চোখের সামনে, প্রত্যক্ষভাবে, পরিষ্কারভাবে । বাংলায় এসে শব্দটি তার আসল রূপ হারালেও অন্তর্নিহিত অর্থ পুরোপুরি হারায়নি। ‘মু'আইনা’ বাংলায় এসে ‘ময়না’ হয়ে গেলেও ‘অনুসন্ধান’ অর্থ নিয়ে সে তার মূল অর্থকে আরও ব্যাপকভাবে প্রসারিত করেছে। এভাবে শব্দার্থের নানা পরিবর্তন ঘটে। ‘ময়না’ যখন সংস্কৃত শব্দ তখন এর অর্থ, ডাকিনি বা খল স্বভাবের নারী। অভিধানে সংস্কৃত ‘ময়না’ শব্দ দ্বারা বাংলা লোকসংগীতের রাজা মানিকচন্দ্রের জাদুবিদ্যায় পারদর্শী পত্নীকেও চিহ্নিত করা হয়েছে। ‘ময়না’ যখন আরবি শব্দ তখন এর অর্থ অ ‘ময়নাতদন্ত’ শব্দের ‘ময়না’ বাংলা ও সংস্কৃত ‘ময়না’ নয়। এটি হচ্ছে ‘আরবি’ ময়না। মূলত আরবি ‘মু’আয়িনা’ শব্দ থেকে বাংলায় অনুসন্ধান অর্থে ব্যবহৃত ‘ময়না’ শব্দের উদ্ভব। এই আরবি ‘ময়না’ শব্দের সঙ্গে সংস্কৃত ‘তদন্ত’ শব্দ যুক্ত হয়ে গঠিত হয়েছে ‘ময়ন