সুচরিতাসু বনাম সুচরিতেষু / খুরশেদ আহমেদ - শুবাচ

সুচরিতাসু বনাম সুচরিতেষু :

অনেক হোঁচট খেয়ে খেয়ে অবশেষে শিখেছি: চিঠিতে বা কবিতায় বা গদ্যসাহিত্যে আমরা মেয়ে বন্ধুকে সম্বোধন করে লিখি বা বলি সুচরিতাসু; ছেলে বন্ধুকে - সুচরিতেষু।
আসুন দেখি বাংলা একাডেমি ব্যবহারিক বাংলা অভিধান (২০১৪) সুচরিত, সুচরিতা, সুচরিতেষু ও সুচরিতাসু সম্পর্কে কী লিখেছে:
"সুচরিত, সুচরিত্র [সুচোরিত্, -ত্‌ত্রো] বি উত্তম চরিত্র; সৎস্বভাব। বিণ সচ্চরিত্র। {স. সু+চরিত, সুপ্‌সুপা; সু+চরিত্র; বহু.}"
"সুচরিতা, সুচরিত্রা [সুচোরিতা, -ত্‌ত্রা] বি স্ত্রী. সৎস্বভাবা। বিণ সচ্চরিত্র। {স. সুচরিত+আ, সুচরিত্র+আ}"
"সুচরিতেষু [সুচোরিতেশু] সুচরিত্রের নিকট চিঠি লেখায় প্রথাসম্মত পাঠ। সুচরিতাসু স্ত্রী.। {স. সু+চরিত, ৭মী বহুব}”
সুচরিত থেকে স্ত্রীলিঙ্গে সুচরিতা - এটুকু বুঝতে কোনো অসুবিধা হয় না।
সুচরিতাকে সম্বোধন করে বলছি সুচরিতাসু - বলা চলে, এটাও সহজভাবে বোঝা যায় এবং মেনে নেওয়া যায়।
কিন্তু সুচরিতকে সম্বোধন করতে গিয়ে আমি থমকে দাঁড়াই, আমাকে বলতে হচ্ছে: সুচরিতেষু।
কেন?
আমি যেভাবে বুঝতে পারছি, সুচরিত শব্দটির সাথে ৭মী বিভক্তি এ যোগ হয়ে সুচরিতে হয়েছে, তারপর সুচরিতাসু-র মতো -সু যুক্ত না হয়ে যুক্ত হলো -ষু, আমরা পেলাম সুচরিতেষু।
প্রশ্নটি থেকে গেল: কেন -ষু? এবং কেন নয় -সু? বিষয়টি কি লিঙ্গবৈষম্য?
আমার মনকে বহুদিন ধরে আলোড়নকারী প্রশ্নটির জবাব পেলাম ড. মাহবুবুল হকের বাংলা বানানের নিয়ম (২০১৪) বই থেকে:
“১০.১.৩ …
“সন্ধিবদ্ধ, সমাসবদ্ধ কিংবা উপসর্গজাত শব্দের পরপদে কখনো /স/ এবং কখনো /ষ/ হয়। …
“খ. সম্ভাষণসূচক শব্দে এ-কারের পর /ষ/ হয়। যেমন :
কল্যাণবরেষু কল্যাণীয়েষু প্রীতিভাজনেষু প্রিয়বরেষু শ্রদ্ধাস্পদেষু সুচরিতেষু সুহৃদবরেষু কল্যাণীয়বরেষু প্রিয়ভাজনেষু শ্রদ্ধাভাজনেষু বন্ধুবরেষু শ্রীচরণেষু সুজনেষু স্নেহাস্পদেষু
লক্ষণীয় সম্ভাষণসূচক স্ত্রীবাচক শব্দে আ-কারের পর /স/ হয়। যেমন : কল্যাণীয়াসু।”
“১০.২.৩ …
“ঘ. আ-কারের পর স্ত্রীবাচক সম্ভাষণে /সু/ হয়। যেমন : কল্যাণীয়াসু, সুচরিতাসু, পূজণীয়াসু, মাননীয়াসু, সুপ্রিয়াসু ইত্যাদি। উল্লেখ্য, পুরুষবাচক সম্ভাষণে /ষু/ হয় …।”
বলে রাখি, ব্যাকরণের পুঙ্খানুপুঙ্খ নিয়ম জানার পরও ব্যবহারিক ক্ষেত্রে সুচরিতেষু ও সুচরিতাসু জাতীয় পদের প্রয়োগে শুদ্ধতা নিশ্চিত করার জন্য আমার এই নিমোনিক (mnemonic) বা মনে রাখার কৌশলটি আপনার কাজে লাগতে পারে:
পুরুষ-এ ষ আছে, মহিলা-য় ষ নাই; সুতরাং পুরুষকে সম্বোধন করতে ষ দিয়ে -ষু লিখব, -সু নয়: সুচরিতেষু;
মহিলা-য় আ-কার আছে, পুরুষ-এ আ-কার নাই; সুতরাং মহিলাকে সম্বোধন করতে আ-কারসহ -তা- লিখব, -তে- নয়: সুচরিতাসু।
সুচরিতাসু ও সুচরিতেষু, ধন্যবাদ আপনাদের সবাইকে, আপনাদের মনোযোগের জন্য!

Comments

  1. Extremely valuable information, I am grateful to you, thank you.

    ReplyDelete

Post a Comment

Popular posts from this blog

উপলক্ষ ও উপলক্ষ্য

পার ও পাড় / ড. মোহাম্মদ আমীন

তৎসম চেনার কৌশল / ড. মোহাম্মদ আমীন