অর্থবোধক একক ধ্বনি / অভিজিৎ অভি -শুবাচ

আমরা জানি কতগুলো অক্ষর(ধ্বনি) মিলে শব্দ গঠিত হয়। আবার একটি ধ্বনি বা একটি অক্ষরও শব্দের মর্যাদা পেতে পারে। বাংলায় অনেকগুলো অক্ষর এমন অর্থবোধক শব্দ হিসেবে ব্যবহৃত হয়। সেগুলো একবার দেখে নেয়া যাক।
অ- সম্বোধন করা হয় অ দিয়ে, যেমন “অ ভাই, কী খবর?”
আ- বিস্ময়সূচক ধ্বনি, যেমন “আ মরি বাংলা ভাষা”
ই- বাক্যের কোন অংশে জোর দিতে শব্দের শেষে ই বসানো হয়। যেমন “আমি বাড়ি যাব” এই বাক্যে বিভিন্ন অংশে জোর দিতে আমরা ই বসাতে পারি।
১। আমিই বাড়ি যাব। (আমি ছাড়া অন্য কেউ নয়)
২। আমি বাড়িই যাব। (বাড়ি ছাড়া অন্য কোথাও নয়)
৩। আমি বাড়ি যাবই। (যাওয়া ছাড়া অন্য কোন কাজ নয়)
ঋ- সংগীতে স্বরগ্রামের দ্বিতীয় স্বর ঋষভ এর সংক্ষিপ্ত রূপ।
এ- ‘এই’ বোঝাতে শুধু এ ব্যবহৃত হয়। যেমন এ কথা, এ পথ, এ ঘটনা ইত্যাদি।
ঐ- ‘ওই’ অর্থ প্রকাশ করে।
ও- ও এর অনেক অর্থ।
১। এবং বোঝাতে ও ব্যবহৃত হয়। যেমন “রাজা ও রানি।”
২। ‘সে’ অর্থে প্রয়োগ হয়। যেমন “ও কি পারবে?”
৩। ওই অর্থে ব্যবহৃত হয়। যেমন “ওখানে যেয়ো না।”
৪। সম্বোধন। যেমন “ও ভাই!”
৫। সাড়া। যেমন “ও আচ্ছা।”, “ও তাই না কি!”
ক- কত অর্থে ক হয়। যেমন ক-রকম, ক-বার ইত্যাদি।
খ- খ মানে আকাশ।
গ- শব্দের পরে গ যুক্ত হলে বিচরণকারী বা গমনকারী বোঝায়। যেমন খগ= খ(আকাশ) তে চরে যে, সহগ=সহ গমন করে যে।
ছ- ছয় এর সংক্ষিপ্ত রূপ। যেমন ছ-বার, ছ-মাস।
জ- জ এর একটি অর্থ হল সিকি-ইঞ্চি পরিমাণ। আবার কোন স্থানের শেষে বসলে ওইস্থানে উৎপন্ন বা জন্মানো অর্থ বোঝায়। যেমন জলজ(যা জলে জন্মায়), বনজ(যা বনে জন্মায়)।
ত- ত একটি অব্যয়পদ যার অনেক অর্থ হতে পারে। যথা:
১। প্রশ্নসূচক পদ। যেমন “খেয়েছ ত?”
২। অনুরোধসূচক পদ। যেমন “একটু দেখুন ত।”
৩। বাক্যে জোর দেওয়া। যেমন “আমি ত দেখলাম।”
৪। ‘যদি-তবে’ অথবা ‘যদি-তাহলে’ অর্থে প্রয়োগ। যেমন “বাঁচতে চাও ত ঔষধ খাও।” (‘যদি বাঁচতে চাও তাহলে ঔষধ খাও’ বাক্যের অনুরূপ)
৫। সন্দেহসূচক পদ। যেমন “ওকে দিয়ে কাজটা হবে ত?”
৬। নিরর্থক। যেমন “আমি ত জানি না।” (এখানে ত থাকলেও যা বোঝায়, না থাকলেও তাই বোঝায়)
থ- থ মানে হতভম্ব, অবাক বা স্তম্ভিত। যেমন “তার কথা শুনে আমি থ!”
দ- ‘হাঁটুভাঙা দ’ একটি বাগধারা, এর অর্থ হতাশায় পা মুড়ে বসে পড়া। শব্দের শেষে দ যুক্ত হলে ‘প্রদানকারী’ অর্থ হয়। যেমন জলদ=জল প্রদানকারী (মেঘ), ফলদ= ফলপ্রদানকারী।
ন- নয়(৯) এর সংক্ষিপ্ত রূপ, যেমন নটা বাজে, ন’দিন পরে। বড়,মেজ,সেজ এর পরবর্তী চতুর্থ ব্যক্তি; যেমন ন’রানি, ন’বৌ, ন’দাদা। নিষেধসূচক শব্দ, যেমন ন গণ্য=নগণ্য, ন অতি দীর্ঘ= নাতিদীর্ঘ। অনেক সময় ন সমাসে ‘অ’ বা ‘অন’ দ্বারা প্রতিস্থাপিত হয়। যেমন ন ধর্ম= অধর্ম, ন উচিত= অনুচিত।
প- পরপদে প যুক্ত হলে পালনকারী অর্থ প্রদান করে যেমন ভূ(দেশ/রাজ্য) পালন করে যে= ভূপ, গো (গরু) পালন করে যে= গোপ। আবার পানকারী অর্থেও প্রযুক্ত হয় যেমন মধু পান করে যে= মধুপ।
ভ- ভ মানে গ্রহ বা নক্ষত্র।
য- যত এর সংক্ষিপ্ত রূপ যেমন যদিন,যবার।
ল- আইন। ইংরেজি law এর বাংলা প্রতিরূপ।
শ- শত এর সংক্ষিপ্ত রূপ যেমন একশ টাকা, কয়েকশ প্রজাতি।
স- সমাসের পূর্বপদে থাকলে ‘সহ’ অর্থ প্রদান করে যেমন সপরিবারে, সহাস্য, সজ্ঞান ইত্যাদি। আবার ‘সমান’ অর্থেও পূর্বে যুক্ত হয় যেমন সতীর্থ, সগোত্র প্রভৃতি।কখনও অতিশয় অর্থ বহন করে যেমন সঠিক, সক্ষম।
হ- ‘হ্যাঁ’ এর কথ্যরূপ। হওয়া ক্রিয়াপদের মধ্যমপুরুষের তুচ্ছার্থক রূপ যেমন ‘তুই সুখী হ’, ‘দূর হ’। প্রাচীন বাংলায় বা কাব্যে ক্রিয়াপদের শেষে কখনও কখনও হ যুক্ত হয়। যেমন ‘অন্ধজনে দেহ আলো’

Comments

Popular posts from this blog

উপলক্ষ ও উপলক্ষ্য

পার ও পাড় / ড. মোহাম্মদ আমীন

তৎসম চেনার কৌশল / ড. মোহাম্মদ আমীন