বারোয়ারি / ড. মোহাম্মদ আমীন


বাঙালি হিন্দুদের সর্বজনীন পূজা বা সর্বজনীন উৎসব ‘বারোয়ারি’ নামে পরিচিত। ‘বারো’ (১২) ও ‘ইয়ার’ (বন্ধু) শব্দ যুক্ত হয়ে বারোয়ারি শব্দের উদ্ভব।১৭৯০ খ্রিষ্টাব্দে (মতান্তরে ১৭৬১ খ্রিষ্টাব্দে) হুগলির গুপ্তিপাড়ায় বারো জন ব্রাহ্মণ বন্ধু একযোগে সর্বজনীন পূজা উৎসব পালনের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন। এজন্য প্রতিবেশি কয়েকজনের কাছ থেকে চাঁদা উত্তোলন করা হয়। কোনো একটা বাড়ির পুজোয় তাদের অংশগ্রহণ করতে না-দেওয়ায়, প্রতিবাদস্বরূপ তাঁরা একাজ করেছিলেন।বারো ইয়ার-এর উদ্যোগে পূজা অনুষ্ঠিত হয়েছিল। তাই এটি লোকমুখে ‘বারোইয়ারি পূজা>বারোয়ারি পূজা’ নামে পরিচিতি পায়।শব্দটি পশ্চিমবঙ্গে অধিক প্রচলিত। 
লক্ষ্মীপূজা, সরস্বতীপূজা ও বিশ্বকর্মাপূজা প্রভৃতি বারোয়ারি প্রথায় অনুষ্ঠিত হতে দেখা যায়। ১৯১০ খ্রিষ্টাব্দে ভবানীপুরের বলরাম বসু ঘাট রোডে ভবানীপুর সনাতন ধর্মোৎসাহিনী সভার উদ্যোগে প্রথম বারোয়ারি দুর্গাপূজা আয়োজিত হয়। বর্তমানে ‘বারোয়ারি’ শব্দের পরিবর্তে ‘সর্বজনীন’ শব্দটি অধিক ব্যবহৃত হতে দেখা যায়। বারোয়ারি দুর্গাপূজা মুষ্টিমেয় কয়েকজনের চাঁদার টাকায় অনুষ্ঠিত হয়। তবে সর্বজনীন দুর্গাপূজা হয়ে থাকে জনসাধারণের চাঁদার টাকায়। চাঁদা তোলার সময় উদ্যোক্তারা ধনী, দরিদ্র সবারই দ্বারস্থ হয়। 
১৬১০ খ্রিষ্টাব্দ থেকে সাবর্ণ রায়চৌধুরী-পরিবার বড়িশায় তাঁদের আদি বাসভবনে দুর্গাপূজার আয়োজন করে আসছেন। কথিত হয়, এটিই কলকাতার প্রাচীনতম দুর্গোৎসব। প্রথমদিকে, দুর্গাপূজা কেবল কলকাতার ধনীদের গৃহে আয়োজিত হতো। বারোয়ারি পূজা চালু হওয়ার পর ব্যক্তি উদ্যোগে পূজা অনুষ্ঠানের সংখ্যা হ্রাস পায় এবং দুর্গাপূজা ক্রমান্বযে সর্বজনীন উৎসবে পরিণত হয়।

Comments

Popular posts from this blog

উপলক্ষ ও উপলক্ষ্য

পার ও পাড় / ড. মোহাম্মদ আমীন

হিসাব আর হিসেবে / ড. মোহাম্মদ আমীন - শুবাচ