কলকাতার প্রথম সখের যাত্রাদল ও গোপাল উড়ে / ড. মোহাম্মদ আমীন - শুদ্ধ বানান চর্চা (শুবাচ)

কলকাতার প্রথম সখের যাত্রাদল ও গোপাল উড়ে

গোপাল উড়ের টপ্পা হতে নেয়া দুটি সাহিত্য-প্রবাদ:
১. কাটা ঘায়ে নুনের ছিটে।
২. গাছে কাঁঠাল গোঁফে তেল।
কবি গোপাল উড়ে - জাতিতে করণ ছিলেন। জন্মগ্রহণ: উড়িস্যার কটক জেলার জাজপুর গ্রামে। দরিদ্র পিতা মুকুন্দ, বেগুন ও আদা চাষ করে জীবিকা নির্বাহ করতেন। গোপাল ছিলেন তিন পুত্রের মধ্যম। গোপাল ১৮-১৯ বছর বয়সে কলকাতায় এসে ফল ফিরি করার কাজ নেন। দুর্গাদাস লাহিড়ী তাঁর “বাঙ্গালী গান” গ্রন্থে, ১৯০৫ খ্রিস্টাব্দে লিখেছেন, প্রায় ৭০ বছর আগে গোপাল কলকাতায় এসে তাঁর সুরেলা গলার জন্য রাধামোহন সরকারের “বিদ্যাসুন্দর” যাত্রাদলে ১০টাকা বেতনে চাকরি পেয়েছিলেন। এ থেকে হিসেব করলে গোপালের জন্ম সাল অনুমান ১৮১৭ খ্রিস্টাব্দ। প্রায় চল্লিশ বছর বয়সে গোপালের মৃত্যু হয়। সেই হিসেবে তাঁর মৃত্যু সাল দাঁড়ায় ১৮৫৭ খ্রিস্টাব্দ।

দুর্গাদাস লাহিড়ীর মতে, রাধামোহন সরকারের “বিদ্যাসুন্দর” যাত্রাদলই কলকাতার প্রথম সখের যাত্রাদল।

গোপাল যখন প্রথম কলকাতায় আসেন তখন তিনি বাংলা ভাষা একদমই জানতেন না। রাধামোহন সরকারের কাছে এক বছরের মধ্যেই তিনি বাংলা শিখে নেন এবং সেখানেই বাবুদের ওস্তাদজী হরিকিষণ মিশ্রর কাছে সঙ্গীত শিক্ষা লাভ করেন। তিনি ঠুংরী গানও সহজেই আয়ত্ব করে নেন। দুবছর আখড়াইএর (মহড়া) পর এই যাত্রার প্রথম আসর বসে রাজা নবকৃষ্ণের বাড়ীতে। এই আসরে গোপাল মালিনী সেজেছিলেন। এই যাত্রা এত প্রশংসিত হয়েছিল যে গোপালের মায়না ৫০টাকা করে দেওয়া হয়। রাধামোহনের “বিদ্যাসুন্দর” যাত্রার আর মাত্র দুবার আসর বসেছিল। একবার হাটখোলার দত্তবাবুদের বাড়ীতে আর এক বার শিমুলিয়ার ছাতুবাবুর বাড়ীতে।

রাধামোহনের মৃত্যুর পর যাত্রাদল ভেঙে যায়। গোপাল রাধামোহনের দলের সব আসবাবপত্র পেয়েছিলেন। তিনি আবার নতুন করে যাত্রাদল তৈরি করেন। এবার গানগুলি নিজে সহজ বাংলা ভাষায় লেখেন। গোপাল উড়ের এই যাত্রাদল জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। সখের যাত্রাদলের বদলে তা হয়ে দাঁড়ায় গোপালের পেশাদার যাত্রাদল।এটি তিনি প্রায় দশ বছর চালিয়েছিলেন। তাঁর মৃত্যুর পরে সেই পালাই নাকি “ভুলো যাত্রাওয়ালা”-র দল অভিনয় করে গেছে, দুর্গাদাস লাহিড়ীর “বাঙ্গালীর গান” গ্রন্থের রচনার সময় পর্যন্ত।

ডঃ শিশিরকুমার দাশের মতে, গোপাল উড়ের দলে রাম অধিকারী এবং পরমানন্দ অধিকারী প্রমূখ গান রচনা করতেন। দুর্গাদাস লাহিড়ীর “বাঙ্গালীর গান” গ্রন্থে গোপাল উড়ের ৩৩৯টি গান রয়েছে, যা কিনা সেই গ্রন্থে রবীন্দ্রনাথের গানের সংখ্যার চেয়ে বেশি!

Comments

Popular posts from this blog

উপলক্ষ ও উপলক্ষ্য

পার ও পাড় / ড. মোহাম্মদ আমীন

তৎসম চেনার কৌশল / ড. মোহাম্মদ আমীন