বাংলায় টাইপিঙের আবশ্যকতা / মোরশেদ হাসান- শুবাচ

 বাংলা টাইপিঙের আবশ্যকতা

এখন ফেব্রুয়ারি মাস। এ মাসে বাংলা ভাষা নিয়ে বিশেষ আলোচনা করবো না-এমনটা হতেই পারে না।
তাই আজকের আলোচনা- ভাষার বিকৃত প্রয়োগ পরিহার করা। প্রথমেই ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি লেখাটি একটু রম্যভাবে লেখার জন্য।
অন লাইন জগতে এখন বাংলায় টাইপিং এর মাধ্যমে সুন্দরভাবে স্ট্যাটাস ও কমেন্ট লেখা যায় এবং এর গুরুত্বও অনস্বীকার্য। বাংলা বর্ণমালায় টাইপিং করে অনেকেই দক্ষতার সাথে লেখালিখি করে যাচ্ছেন; শুধু প্রয়োজন শেখার মানসিকতা ও তার প্রয়োগমুখী ব্যবহার। তারপরও ব্যবহারিক জীবনে দেখা যায় বৃহত্তর অন লাইন জনগোষ্ঠী এখনও ইংরেজি বর্ণমালা ব্যবহার করে বাংলা ভাষায় কমেন্ট, চ্যাটিং করে যাচ্ছেন। বাংলা হরফে টাইপিং না করে তাঁরা এটাকেই ভেবে বসে আছেন ভাব প্রকাশের চরম উপযোগী মাধ্যম এবং এটা ভাবতে গিয়ে প্রায় সময়ই ভয়াবহ বিপত্তি বাধিয়ে বসছেন। ইংরেজি বর্ণমালা ব্যবহার করে বাংলা লেখাকে অনেকে আবার ‘মুরাদ টাকলা’ বলে থাকেন। যাঁরা মুরাদ টাকলার কাহিনী জানেন না তাঁদের জন্য সংক্ষেপে বলছি। একদা জনৈক ব্যক্তি কমেন্ট করেছিলেন, “Murad takla jukti diya bal” অর্থাৎ মুরোদ থাকলে যুক্তি দিয়ে বল। সেই থেকে এই অভিনব প্রয়োগবিধির নাম ‘মুরাদ টাকলা’। এটাকে বাংলায় পড়া হয়েছে- মুরাদ টাকলা যুক্তি দিয়া বাল।

বাংলা হরফে না লিখে মুরাদ টাকলায় লিখে আমার বন্ধু শিহাব যে বিপত্তি বাঁধিয়েছিলেন সে ঘটনাই আজ বলছি-
শিহাব টগবগে ও চটপটে এক যুবক। মুরাদ টাকলা ব্যবহার করতে গিয়ে বুকের ভিতর খামোশ খেয়ে যাওয়ার অনেক কাহিনী সে শুনেছে কিন্তু সে নিজেই একদিন এর শিকার হয়ে যাবে তা কস্মিনকালেও ভাবে নি। তা কেউ কি আর আগেভাগে বলে কয়ে কোনোকালে ভাবতে পেরেছে? এই সেদিন যেমন শিহাব রীতিমতো জমে গেল ইনবক্সের আকর্ষণীয় চ্যাটিঙে। ভাবের জগতে তন্ময় হয়ে মগ্ন সময় কাটাচ্ছে সে। মনের ভিতর দখিনা হাওয়ার ঝড়ো ঝাপটা। কিবোর্ডের উপর ঝড়ের মতো অঙ্গুলি সঞ্চালিত হচ্ছে। কেউ অলক্ষ্যে থেকে শিহাবের এই গভীর মনোযোগ দেখলে ভাববে কিবোর্ডেরই কোন গোপন কুঠুরিতে বুঝি তার সত্যিকারের প্রাণ ভোমরাই লুকায়িত আছে।
আচানক ঘটলো সেই আকস্মিক ঘটনা। কিবোর্ডের সাথে পাল্লা দিয়ে সময়ের হুঁশ জ্ঞান হারিয়ে ফেলেছে সে। কিন্তু পেট তো চোঁ চোঁ। পেটে কিছু একটা না দিলেই যে আর নয়। তাই সে মুরাদ টাকলায় লিখল,
‘এভাবে যদি যায় যাক না দিন,
তবে একটু খেয়ে এখনি আবার আসছি’।
অপর প্রান্ত থেকে একটু পরেই রিপ্লাই এল- ‘Jan’।
উঠতে যাওয়ার সময় এটা দেখে শিহাবের বুকের ভিতর হৃৎপিণ্ডটা কেউ বুঝি খপাৎ করে ধরে ফেলল। ড্যাবড্যাব করে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে ‘Janu’ লেখার জন্য সে প্রায় ঝাঁপিয়ে পড়তে যাচ্ছিল কিবোর্ডের উপর।
এমন সময় তার নিজেরই লেখা উপরের কমেন্টটি শিহাবের নজরে এল-‘একটু খেয়ে এখনি আবার আসছি’।
এবার সত্যি সত্যি শিহাব খামোশ খেয়ে গেল। আহারে এই ‘Jan’ কেন সেই ‘জান’ হল না!
আহারে, তুমি এত নিঠুর হইলা কেন মুরাদ টাকলা!!

করণীয়: বাংলা বর্ণমালায় টাইপিং করুন ও অন্যকে লিখতে উৎসাহিত করুন এবং ভাষার বিকৃ্ত প্রয়োগ ও ব্যবহার পরিহার করুন।

Comments

Popular posts from this blog

উপলক্ষ ও উপলক্ষ্য

পার ও পাড় / ড. মোহাম্মদ আমীন

তৎসম চেনার কৌশল / ড. মোহাম্মদ আমীন