শুবাচ গোলটেবিল বৈঠক / ড. মোহাম্মদ আমীন


চায়ের কাপ থেকে মুখ তুলে চারিদিকে তাকান মডারেটর ড. মোহাম্মদ আমীন। শুবাচের অনেক সম্মানিত সদস্য উপস্থিত। তবে কয়েকজন সম্মানিত সদস্য অনুপুস্থিত। হয়ত বা পথে, এক্ষুণি এসে পৌঁছবেন বলে। প্রতিদিনের মতো আজকের বিষয়ও অনির্ধারিত। আলোচনার মুখ্য বিষয় বাংলা বানান হলেও ভাষা থেকে জীবন-যাপন অনেক কিছুই উঠে আসে। পরস্পর সম্প্রীতি ও শ্রদ্ধাবোধের মাঝে চায়ের ফাঁকে ফাঁকে আলাপ। কারও প্রস্তাব অনেকক্ষণ আবার কারও প্রস্তাব অণুক্ষণ।
মোহাম্মদ আমীন : আপনারা এবং আপনাদের উপস্থিতিই শুবাচের প্রাণ। সবাইকে স্বাগত।
এনামুল হক: আমার একটা প্রস্তাব ছিল স্যার।
মোহাম্মদ আমীন : বলুন।
এনামুলক হক : বিসমিল্লায়ই গলদ! 'বানান চর্চা' আলাদা না হয়ে একশব্দে 'বানানচর্চা' হওয়া (মুল : হ-ওয়া) উচিত। উদাহরণ হিসেবে বলা যেতে পারে- আমরা ধর্মচর্চা- শরীরচর্চা-সাহিত্যচর্চা-বিজ্ঞানচর্চা-সংস্কৃতিচর্চা- অনধিকারচর্চা লিখি, (সমাসবদ্ধ পদ সেঁটে বসবে)। সে যাক, এবার আরেকটু সামনে এগোই।'নামকরণ' সেটা মানুষের বা জিনিসের যেটারই হোক অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, অর্থবহ হতে হবে। আপাতদৃষ্টিতে গ্রুপের নাম "শুদ্ধ বানান চর্চা" দেখে মনে হবে এখানে কেবল বানানচর্চা করা হয়, অন্য কিছু নয়। কিন্তু আসলে ব্যাপারটা আদৌ তা নয়। আমি এ গ্রুপে দীর্ঘদিন ধরে আছি, বেশুমার শিক্ষণীয় পোস্ট নিয়মিত পড়ে প্রতিনিয়ত উপকৃত হচ্ছি; সে-হিসেবে লক্ষ করলাম- এখানে কেবল বানানই নয়, বরং পুরো ভাষাই চর্চা করা হয়। বাঙলাভাষা চর্চা।গ্রুপের সম্মানিত সদস্যদের প্রতি যথাযথ শ্রদ্ধা রেখেই বলছি, সুদূরপ্রসারী- লক্ষ্যার্থী (মুল : লক্ষার্থী) এ গ্রুপের নাম "শুদ্ধ বানান চর্চা" থেকে বদলে "শুদ্ধ বাঙলাভাষা চর্চা" করা উচিত। গ্রুপের নামের সংক্ষিপ্ত রূপ হিসেবে 'শুবাচ' কিন্তু অক্ষুণ্নই থাকবে। প্রত্যাশা করছি আমার সুচিন্তিত এ প্রস্তাব সব সদস্যের (বিশেষ করে ঊর্ধ্বতন সদস্যদের) কাছে আদৃত হবে। সবার মতামত কামনা করছি, ধন্যবাদ।
সবাই মন দিয়ে তাঁর বক্তব্য শুনলেন। নিঃসন্দেহে গুরুত্বপূর্ণ প্রস্তাব। কিছুক্ষণ সবাই চুপ, হয়ত মডারেটর কিছু বলবেন তাই। না তিনিও কিছু বলছেন না। আরও কয়েক সেকেন্ড পর মুখ খোলেন কাজী জুবায়ের আহমেদ: হুম (hmm)
এনামুল হক : Thanks for agreement.
হাসান ফয়েজ : ঠিকই তো! আমিও মনে করি নামটা পরিবর্তন হওয়া উচিত।
এনামুল হক : হাসান ফয়েজ, Thanks for help me by supporting my opinion.
খুরেশেদ আহমেদ : আমি বলি : শুদ্ধ বাংলা চর্চা - শুবাচ। প্রমিত বানান 'বাংলা', এনামুল হক।
এনামুল হক : I've done a misspell/fault (lokkharthi), as this status updated by converting! Oh shame!!!
খুরশেদ আহমেদ : আপনি তো আপনার স্ট্যাটাস এডিট করে শব্দটি ঠিক করে দিতে পারেন, এনামুল হক! এত লজ্জিত হওয়ার কিছু নেই! আমরা সবাই ভুল করি; এবং যখন ভুলটি ধরতে পারি বা কেউ ধরিয়ে দেয়, তখন সম্ভব হলে সংশোধন করে নেই, লেঠা চুকে যায়!
শাহিদুল হক : “বিসমিল্লায়ই গলদ!” এই বাক্যের প্রতি আপনার দৃষ্টি আকর্ষণ করছি। যে বা যারাই এটা প্রচলন করুক না কেন, আমি এটা সমর্থন করতে চাচ্ছি না। দ্বিতীয়ত, বানানের চর্চা= বানানচর্চা শব্দটি সেঁটে বসবে তাতে আমার দ্বিমত নেই। বাকি প্রস্তাবের বিষয়ে ভিন্ন মত রয়েছে। জনাব এনামুল হক, ‘লক্ষ ’ বানান লিখে লজ্জা পাওয়ার কোন কারণ নেই। কেননা, ‘ লক্ষ করা’ এবং‘ লক্ষ রাখাতে’ য-ফলা হবে না। যদিও আমরা দিয়ে থাকি।
এনামুল হক : খুরশেদ আহমেদ স্যার, It is not mistake, both spell're correct. Editing impossible so to say, status updated via www.writebangla.com.কুতায়বা আহসান : বিসমিল্লায় গলদ মানে গোড়ায়ই গলদ। কিন্তু আমাদের জন্য বিসমিল্লায়ই গলদ ব্যবহার করাটা উচিৎ না। এটা কিন্তু হিন্দুত্ববাদী লেখকগণ কর্তৃক চাপিয়ে দেওয়া। আমাদের দৃঢ় বিশ্বাস পবিত্র কুরআনে যেমন কোন ভুল নেই তেমনি বিসমিল্লায়ও কোন ভুল নেই। যেহেতু এর মর্মার্থ বুঝানোর জন্য বিকল্প শব্দ আছে তাই এটা আমরা পরিহার করে চলব ইন্শা আল্লাহ।
বুলবুল আহমেদ : আমি মনে করি "শুদ্ধ বানান চর্চা" নামে কোন ভুল নেই। অবশ্য "শুদ্ধ বানানচর্চা" হলেও কোন ভুল হবে না। তবে সমাসবদ্ধ পদ সেঁটে বসে হিসেবে করলে সবচেয়ে শুদ্ধ হয় "শুদ্ধবানানচর্চা"/ "শুদ্ধ-বানান-চর্চা"। কিন্তু এটার প্রস্তাব যেহেতু আসছে না, আমার মনে হয় "শুদ্ধ বানান চর্চা" নামটিই থাকা অধিক যুক্তিযুক্ত। এরপর আবার ‘শুদ্ধবানানচর্চা’ প্রস্তাব আসতে পারি। আমি পোস্টের কয়েকটি বিষয়ে এনামুল হক সাহেবের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি : পোস্টে বর্ণিত ‘হ-ওয়া’ শব্দের অর্থ কী? বাংলাভাষা না কি বাংলা ভাষা? ‘পুরো ভাষাই চর্চা করা হয়’ বাক্ভঙ্গির অর্থ কী? ‘বাংলাভাষা চর্চা’ না কি বাংলাভাষাচর্চা, না কি বাংলা ভাষা চর্চা?
এনামুল হক : Shahidul Haque Sir, may be you didn't understand what I wanted to express. There're two 'lokSo' (pronounced lokko/lokkyo) in Bangla vocabulary. I'm sure that it (lokkarthi) is mistake. Thanks Kutayba Ahsan, I'll use "gooray golod" from now in my conversation. It does not mean that I did not knew it before this topic.
এনায়েত উল্লাহ্ : যুক্তিযুক্ত প্রস্তাব। সমাসবদ্ধ পদ আলাদা লিখলে অর্থ-বিভ্রাট ঘটে। আর যেহেতু গ্রুপটিতে শুদ্ধ বাঙলা শেখান হয় সুতরাং এর নামটা অশুদ্ধ থাকা লজ্জাজনক। ধন্যবাদ অনুসন্ধিৎসু এনামুল হক!
মোস্তাক হাসান : চর্চা ভাষার হোক অথবা বানানের, বাংলা ছেড়ে ইংলিশ কেন ?
খুরশেদ আহমেদ : বাংলা একাডেমি প্রমিত বাংলা ব্যবহারিক ব্যাকরণ (২০১৪) পৃষ্ঠা-১৯২ থেকে আমি একটা উদ্ধৃতি দিচ্ছি : 'শুদ্ধ বানান চর্চা' সমাসবদ্ধ ‘শব্দটি' ফাঁক রেখে নাকি নিরেটভাবে লিখতে হবে, সে বিতর্কের সমাধানে কিছুটা সাহায্য করতে পারে বলে মনে করি :-
“সমাসবদ্ধ শব্দ-লিখনরীতি : সমাসবদ্ধ শব্দ সাধারণত নিম্নলিখিত রীতিতে লেখা হয়ে থাকে :
ক. নিরেটভাবে (কোনো ফাঁক না রেখে) : বনভূমি, হাতঘড়ি, জনসমুদ্র।
খ. হাইফেন যোগে : নাগরা-জুতো, ক্রিয়া-বিশেষণ, ঘিয়ে-ভাজা, কলে-ছাঁটা, রবীন্দ্র-চর্চা।
গ. অসংলগ্নভাবে : ঘোড়ার ডিম, বাংলা ভাষা সম্মেলন, হাতে তৈরি, সমাজ সংস্কার আন্দোলন।”
এনায়েত উল্লাহ : জনাব বুলবুল আহমেদ 'শুদ্ধ বানান চর্চা' - নামে ভুল নেই - কথাটি বোধগম্য নয়। বানান ও চর্চা -শব্দদ্বয় আলাদা পড়লে এদের আলাদা আলাদা অর্থই কেবল পাওয়া যায়, সমাসোত্পন্ন (?) অর্থ নয়; যা এখানে উদ্দিষ্ট।
এনায়েত উল্লাহ : খুরশেদ আহমেদ স্যার, গ- ক্রমিকে বর্ণিত কথাটি সমাসবদ্ব পদ লেখার নিয়ম হতে পারে না। কারণ এটাকে নিয়ম মানলে অর্থবিভ্রাট তো ঘটবেই, উপরন্তু আমার মতো দুষ্টু ছেলেরা সমাসের ন্যায় জটিল অধ্যায়টা না-পড়ে 'তাকে' তুলে রাখবে।
মোহাম্মদ আমীন : ‘শু্দধ বানান চর্চা’ হবে না কি ‘শুদ্ধ বানানচর্চা’ হবে তা নিয়ে আমি কয়েক বার উপদেষ্টা পরিষদের সঙ্গে আলোচনা করেছি। বানান কমিটির প্রধান হিসেবে উপদেষ্টা পরিষদের পক্ষে ড. হায়াৎ মামুদ বিষয়টা দেখে থাকেন। তিনি ‘শুদ্ধ বানান চর্চা’ নামটি বহাল রাখার পক্ষে মত দিয়েছেন। তিনি খুরশেদ আহমেদ স্যারের উদ্ধৃতিটিসহ আরও কয়েকটি উদ্ধৃতি ও কিছু ব্যাখ্যাও দিয়েছেন। তাঁর যুক্তি খণ্ডানোর যোগ্যতা আমার নেই।তিনি বলেছেন ‘শুদ্ধ বানান চর্চা’ বাক্ভঙ্গিটি শুদ্ধ।
মির্জা বায়েজিদ আহমেদ : সুন্দর একটা প্রস্তাব আনার জন ধন্যবাদ, জনাব এনামুল।
খুরশেদ আহমেদ : জনাব এনায়েত উল্লাহ আপনাকে ধন্যবাদ। আমি যখন সমাসবদ্ধ শব্দ-লিখনরীতির 'গ' রীতিটি প্রথমবার পড়ি, তখন অবাক হয়ে ভেবেছিলাম তাহলে সমাসবদ্ধতার থাকলটা কী! 'বাংলা ভাষা সম্মেলন' কি একটি সমাসবদ্ধ শব্দ, নাকি তিনটি আলাদা শব্দ? পরে আস্তে আস্তে আমার বোধে এসেছে যে বঙ্কিমচন্দ্রের সমাসবদ্ধ পদ বিবর্তনের মধ্য দিয়ে পরিণত হয়েছে আজকের বাংলা ব্যাকরণের সমাসবদ্ধ শব্দে যা প্রকাশিত হতে পারে এই তিনটি রূপের যে কোন এক বা একাধিক রূপে : ক) নিরেট, খ) হাইফেনযুক্ত ও গ) একেবারে মুক্ত। বাস্তবে বিরাজমান মুক্ত রূপটি গ্রহণ করার জন্য আমাদের এখন দরকার সংস্কৃত ব্যাকরণের জারক রস থেকে আমাদের মননকে মুক্ত করা।
মোহাম্মদ আমীন : সমাসবদ্ধ পদ বিবেচনা করলে তো লিখতে হয় ‘বাংলাভাষাসম্মেলন’, শুদ্ধবানানচর্চা। তবে মডারেটর হিসেবে আমি এখানে এ বিষয়ে কোন মন্তব্য করতে চাই না। আপনাদের বক্তব্য আমি বানান কমিটির নিকট উপস্থাপন করব।
হাজী রফিক : এখানে মূল কথা হল 'বানান' এবং 'চর্চা'র মাঝখানে সুপ্ত ষষ্টি বিভক্তি 'র' / 'এর' বিদ্যমান বিধায় প্রচলিত বিধি মোতাবেক শব্দটি 'বানানচর্চা' হতে বাধ্য। তবে, সংগঠন/ গ্রুপ/ কোম্পানি ফার্মের ক্ষেত্রে এই বিধান শিথিলযোগ্য। এখন ধরি ‘চর্চা’ যদি অনুশীলন বোঝায়, দিনের নির্দিষ্ট কিছু সময়ের জন্য অথবা ওয়াক্তের জন্য, তবে এটি কোনভাবেই মূল শব্দকে ছেড়ে যাবে না। যেমন 'ধর্মচর্চা' 'শরীরচর্চা।' এক্ষেত্রে মহাত্মা শ্রী হরিচরণ এর 'বঙ্গীয় শব্দকোষ' দ্রষ্টব্য। কিন্তু 'প্রতিষ্ঠান' [আধুনিক এবং এক্সপান্ডেড অর্থে ফেইসবুক গ্রুপ] এর ক্ষেত্রে এই ধারণা শিথিলযোগ্য। এই গ্রুপকে প্রতিষ্ঠান রূপে জ্ঞান করলে আমি কোনরূপ ত্রুটি দেখি না টাইটেলে।
নাঈমা সেহেলী : খুরশেদ আহমেদ ভাই যথার্থ বলেছেন। অলুক ষষ্ঠী তৎপুরুষ সমাসে সমস্ত পদ আলাদাভাবে ব্যাকরণ বইতে ( এস এস সি জন্য নির্ধারিত ) লিপিবদ্ধ আছে । যেমন - ঘোড়ার ডিম , মাটির মানুষ , হাতের পাঁচ , মামার বাড়ি , মনের মানুষ , কলের গান । খুরশেদ আহমেদ ভাই যথার্থ বলেছেন ।
এনামুল হক : জনাব বুলবুল আহমেদ ও খুরশেদ আহমেদ , 'বাঙলা' ও 'বাংলা' উভয়টি প্রমিত।শাহিদুল হক সাহেবের প্রশ্নের সূত্রে বলছি, লক্ষ= খেয়াল রাখা- (লক্ষ করি নি, বানানটা ভুল হয়ে গেছে)। লক্ষ্য= উদ্দেশ্য (আপনার জীবনের লক্ষ্য কী?)। আমি এই পার্থক্যটা বোঝাতে চেয়েছিলাম আগে, এখন এডিট করে দিয়েছি 'লক্ষ্যার্থী'। এনায়েত উল্লাহ ভাইকে ঐকমত্যের জন্যে আন্তরিক ধন্যবাদ। আর একটা বিষয় বলতে চাই, খুরশেদ স্যারের উদ্ধৃত অংশের 'গ'এ বর্ণিত নিয়ম মানা যায় না। তাহলে তো সমাস আর সমাসই থাকে না!
বুলবুল আহমেদ : এ বিষয়ে আমার দ্বিমত আছে। শুদ্ধ বানান চর্চা প্রমিত রীতি অনুযায়ী শুদ্ধ। বাংলায় শব্দকে সমাস করার সুযোগ এত অবারিত যে কয়েকটি পদ ছাড়া সবগুলো সমাসে নিয়ে আসা যায়। সে ক্ষেত্রে বাক্য বলে আর কিছু থাকে না। শুধু সমাসবদ্ধ পদ থাকে।
এনামুল হক খুরশেদ স্যার, আপনার মন্তব্যে এক জায়গায় লিখেছেন 'ব্যবহারিক' শব্দটি, যেটি ঠিক নয়। 'ব্যবহার', কিন্তু 'ইক' প্রত্যয় যুক্ত করলে প্রথম অক্ষরের পর আ-কার আসবে। অর্থাৎ, 'ব্যবহার' > 'ব্যাবহারিক।' রমনার বটমূলসহ অনেক জায়গায় ঘুরলাম, কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হয় নি। ডক্টর হায়াৎ মামুদ প্রস্তাবটি নাকচ করায় আমার মানসিক-শ্রম হল পণ্ড, আর রোদনটা হল অরণ্যে; কে জানে অরণ্যে না হয়ে তেপান্তরের মাঠেও হতে পারে! বাদ দিলাম, 'বানানচর্চা' বা 'বানান চর্চা' যে কোনটি সিদ্ধ হোক। কিন্তু গ্রুপের নামটিকে বানানে সীমাবদ্ধ না রেখে ভাষা পর্যন্ত পৌঁছানো উচিত নয় কি? অর্থাৎ 'শুদ্ধ বাঙলাভাষা চর্চা' শিরোনামের উপর হায়াৎ মামুদ স্যারের মত কী, আমীন স্যার?
মোহাম্মদ আমীন : জনাব এনামুল হক ৥ ‘গ্রুপের নামটিকে বানানে সীমাবদ্ধ না রেখে ভাষা পর্যন্ত পৌঁছানো উচিত নয় কি?’ আপনার এ প্রশ্নের বিষয়ে কী সিদ্ধান্ত হবে সে বিষয়ে আমাদের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী উপদেষ্টা পরিষদের কোন এখতিয়ার নেই। এটি সদস্যগণের দায়িত্ব। আপনারাই নির্ধারণ করবেন নাম কী হবে। উপদেষ্টা পরিষদ শুধু ‘বানান’ শুদ্ধ বা সংগত কি না তা দেখেন। সুতরাং এ বিষয়ে হায়াৎ মামুদ স্যারের মতামত নেওয়ার প্রয়োজন নেই। অধিকাংশ সদস্য যেমন চাইবেন তেমন হবে।
এনামুল হক : "ঘোড়ার ডিম" আর "মামার বাড়ি" সমাসের যে নিয়মে আছে, সে নিয়মের প্রবর্তকরা ভাষাকে মামার বাড়ি পেয়েছেন না কি যাচ্ছেতাই আইন করবেন? তাদের এ নিয়ম আসলেই ঘোড়ার ডিম।
নাঈমা সেহেলী : কোন কোন ক্ষেত্রে কৃৎ প্রত্যয় যোগ করলে কৃৎ প্রকৃতির আদিস্বর পরিবর্তন হয় । এই পরিবর্তনকে বলে গুণ বা বৃদ্ধি । বৃদ্ধি-র নিয়মে অ >আ তে রূপান্তরিত হয় । যেমন - পঠ + ণক = পাঠক। ব্যবহারিক + ইক = ব্যাবহারিক হয় । এনামুল হক কি জানাবেন কোন বইতে এই 'ব্যাবহারিক' পেয়েছেন । বইটি পেলে আমার জানার পরিধি বাড়াতে পারতাম ।
হাজী রফিক : একটা গ্রুপ বা পেইজ নির্দিষ্ট সংখ্যক সদস্য দ্বারা পরিচালিত হলে [অনধিক ২০০] গ্রুপের নাম বদলানো যায়। এখন এই ধরনের আবদার অপ্রত্যাশিত। যিনি বানান সচেতন, তিনি ভাষা সচেতন। 'It does not mean that I did not knew it before this topic.' এই ধরনের ইংরেজী বাক্য লেখা অথবা খুব আগ্রাসীভাবে বক্তব্য উপস্থাপন করার আগে বানান শেখা কর্তব্য মনে করি। 'শুবাচ' এখন ইমরান এইচ সরকারের চেয়েও অধিক পরিচিত। তাই এটিই unprecedentedly স্বীকৃত।
শাহিদুল হক : এ বিষয়ে আমার একটা ছড়া পোস্টে দেওয়া আছে। সেখানে মন্তব্যে বলেছি, শব্দের শেষে -ইক প্রত্যয় যুক্ত হলে বানানে পরিবর্তন আসে। শব্দের প্রথমে ‘অ-কার’ থাকলে তা পরিবর্তিত হয়ে ‘আ-কার’ হবে। যেমন- ব্যবসায়> ব্যাবসায়িক, ব্যবহার>ব্যাবহারিক ইত্যাদি। শ্রদ্ধেয়া নাইমা সেহেলী আপা।
হাজী রফিক : কিন্তু 'ব্যবহারিক' অশুদ্ধ নয়। দুটো বানানই applied. এমনকি বাংলা একাডেমী'র অভিধানটার নাম 'ব্যবহারিক বাংলা অভিধান।' খুরশেদ আহমেদ সাহেবকে যেভাবে এনামুল সাহেব প্রত্যয় শেখালেন তা দৃষ্টিকটু লাগল। কেউ চাইলে আমি কাভারটা স্ক্যান করে পাঠাতে পারি।
মির্জা বায়েজিদ : আমি জনাব এনামুল হকের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।
হাজী রফিক : 'ব্যবহারিক বাংলা অভিধান' মোহাম্মদ আমীন, খুরশেদ আহমেদ ও এনামুল হকের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।
মডারেটর : দেখলাম, বাংলা একাডেমী [একাডেমি] ব্যবহারিক বাংলা অভিধান। এখানে ‘ব্যবহারিক’ বানানে ‘ব্য’, ‘ব্যা’ নয়।
এনামুল হক : Thanks Shahidul Haque Sir, your educative rhyme very interesting, praiseworthy too. Hajee Rafique Sir, Bangla Academy is not correct from up to down, "ekademi" and "byaboharik" is certainly mistake. I do not trust on Bangla Academy fully.
হাজী রফিক : Mr. Haque [not sure whether you spell it this way], this is the image of the cover page. For detail plz visit page 910, where they have opined that both words are grammatically correct. It is, to me at least, immaterial whom do you trust or not; rather I will appreciate with deep respect to express your thoughtful views on linguistic expertise more humble and modest way. This is for your kind information only.
নাঈমা সেহেলী : ঘোড়ারডিম / ঘোড়ার ডিম পরেরটাকেই তো চোখসহা লাগছে বলে মনে হচ্ছে । 'কলুর বলদ' বাগধারা দিয়ে যখন বাক্য গঠন করি তখনও তো আলাদা করে লেখা হয় । '৯২ থেকে যে ব্যাকরণ বইটি পড়ে ছাত্র-ছাত্রিদের এস এস সি পাশ করতে হয় - আমার সামনে সে বইটা রয়েছে (পুনর্মুদ্রণ : জুন , ২০১৩) সে বইতেও অলুক ষষ্ঠী তৎপুরুষ সমাসের সমস্তপদ আলদা করে লেখা রয়েছে। এনামুল হক প্রথমে 'ঘোড়ারডিম' লিখলেও পরে লিখেছেন অবশ্য 'ঘোড়ার ডিম' ।
শাহিদুল হক : বাংলা একাডেমি বাংলার বারটা বাজিয়েই ছাড়বে।
নাঈমা সেহেলী : জনাব শাহিদুল, দুটো শব্দের দ্বারা গঠিত সমাসবদ্ধ শব্দের অথবা উপসর্গযুক্ত শব্দের সঙ্গে তদ্ধিত প্রত্যয় যুক্ত হলে উপসর্গসহ শব্দের বা শব্দ দুটোর মূল স্বরের বৃদ্ধি হয় । যেমন- পরলোক +ষ্ণিক/ইক = পারলৌকিক , সুভগ + ষ্ণ্য = সৌভাগ্য । কিন্তু 'ব্যাবহারিক' বানান কখনই চোখে পড়েনি । তাই ভাবছি শব্দটা নিয়ে । আপনার ছড়া তো ব্যাকরণের সূত্র মনে রাখার সুন্দর এক উপায় ।
হাজী রফিক : 'সংক্ষিপ্ত বাংলা অভিধান' নামক আরেকটি অভিধানের ৪২৭ নম্বর পাতায় 'ব্যবহারিক'-শব্দটিকে শুদ্ধ বলা হয়েছে।
খুরশেদ আহমেদ : বাংলা একাডেমির যত দূর্বলতাই থাকুক, বাংলা একাডেমিই আমাদের অভিভাবক, আমাদের রেফারেন্স। বাংলা একাডেমির নাম দেরিতে হলেও ইতোমধ্যে বাংলা একাডেমি হয়েছে। নাম পরিবর্তনের সংশ্লিষ্ট দলিলটি শুবাচের পুরনো কোন এক পোস্টে পাবেন। আমি শুবাচে যোগ দেওয়ার পর শুবাচ বন্ধুদের কাছ থেকে শিখেছি যে একটি শব্দের একাধিক বানান থাকলে প্রমিত বানান একটিই হয়। প্রমিত বানান সম্পর্কে রেফারেন্স দেখেছি বাংলা একাডেমির ব্যবহারিক বাংলা অভিধানে (২০১৪) :
ক) পরিমার্জিত সংস্করণের মুখবন্ধ ও ব্যবহারবিধির বানান অনুচ্ছেদে (পৃষ্ঠা-বাইশ), যেখানে বলা হয়েছে, "…ভুক্তির শীর্ষশব্দ হিসেবে একই শব্দের জন্য একাধিক বানান থাকলে প্রথম বানানটির বানান প্রমিত করা হয়েছে, এবং সেই অনুযায়ী ভুক্তিটি বিন্যস্ত হয়েছে।" এবং খ) প্রচ্ছদ-মলাটের সামনের ফ্ল্যাপে যার ছবি এখানে সংযুক্ত করেছি এবং যেখানে লিখা আছে, “অভিধা অংশ এবং ভুক্তি-উপভুক্তির শীর্ষশব্দের প্রথমটির বানান বাংলা একাডেমীর প্রমিত বানান অনুযায়ী করা হয়েছে। “এখন এই অভিধানে ‘ব্যবহার’ ভুক্তিটি দেখুন। ওতে পাবেন, ‘ব্যবহারিক, ব্যাবহারিক’ এই ক্রমে দুটি বানান সাজানো হয়েছে, যা থেকে স্পষ্ট ‘ব্যবহারিক’ বানানটিই প্রমিত, ব্যাবহারিক বানানটি প্রমিত নয়।
মাসউদুর রহমান খান : সুন্দর প্রস্তাব!
হাজী রফিক : আলহামদুলিল্লাহ। অতএব 'ব্যবহারিক' জয়যুক্ত হয়েছে। জয়যুক্ত হয়েছে। জয়যুক্ত হয়েছে। এই বিষয়ে আলোচনা এখনেই শেষ। 'জনাব হক এবং এসোসিয়েটস' এবং 'জনাব খুরশেদ এবং এসোসিয়েটস' এর এই বিতণ্ডা আশা করি উপভোগ্য হয়েছে। এখন স্বঘোষিত সঞ্চালকের মতামত হলো, বন্ধুরা, কথায় কথায় অভিধানকে গালিগালাজ করা / অবজ্ঞা করা / তাচ্ছিল্য করা কাম্য নয়। শুবাচ এর সম্মানিত সদস্যদের কাছে আরো প্রমিত বিনয় আশা করি। এখানে সবাই সমাজের প্রতিষ্ঠিত নাগরিক। আমাদের ভাষাপ্রকাশ ভবিষ্যতে আরো মুগ্ধকর হওয়া উচিত। কারো বয়ান শ্রেয়তরো মনে না হলে, কেন শ্রেয় নয় তা যুক্তি সহযোগে পেশ করলে সবাই / সকল পক্ষ উপকৃত হবেন। শুভ রাত্রি
খুরশেদ আহমেদ : মহামান্য স্পিকারের মতো রায় দিয়ে অধিবেশনের সমাপ্তি ঘোষণা করে দিলেন,
হাজী রফিক : শুভরাত্রি। কিন্তু মডারেটর কিছুই বলছেন না। তাঁর কী কিছুই বলার নেই?
মোহাম্মদ আমীন : আপনাদের আলোচনা এত প্রাণবন্ত যে, আমি শুনছিলাম। স্যার, আমার অনেক বলার আছে কিন্তু এডমিন হিসেবে সব কিছু বলতে পারি না, বলা উচিতও নয়। শুবাচ একটি সর্বজনীন ক্ষেত্র, এটি সবার জন্য - আমি মডারেটর মাত্র। আমাকে সবার দিকে লক্ষ রাখতে হয়, সবার প্রতি সম্মান দেখানই আমার দায়িত্ব। তবে আশ্চর্য হয়ে দেখি আপনাদের মতো ঋদ্ধ ব্যক্তিদের কারণে শেষ পর্যন্ত বিষয়টা ঠিক জায়গায় গিয়ে পৌঁছে। খুরশেদ স্যার এখানে যে মেধাশ্রম দিয়েছেন, শাহিদুল, এনামুল ও বুলবূল গুলবাগিচার মতো যে পুষ্পরেনু ছড়িয়েছেন তা আপনার সংগীতময় সজ্জায় ঐশ্বর্যময় হয়ে উঠেছে। সবাইকে ধন্যবাদ, কৃতজ্ঞতা ও শ্রদ্ধা।
মির্জা বায়েজীদ আহমেদ : সব যেন শেষ হয়ে-ও হয় না শেষ। Hajee Rafiqe স্যার, আপনার দু'টি লেখায় 'ইংরেজী' এবং 'একাডেমী' ---রূপে দু'টো শব্দ লেখা থাকতে দেখেছি বলে মনে হয়। এগুলো কি জেনে-শুনেই? নাকি অজ্ঞাতসারে! কারণ,আপনার লেখার প্রত্যেকটা শব্দ-ই আমি অনুসরণ করে অনুপ্রাণিত হই।
হাজী রফিক : 'একাডেমী' আমি এভাবেই লিখি, 'মি' দিয়ে লিখতে শুরু করি নি এখনও। English জাতি ও ভাষা দুই অর্থে ব্যবহৃত হয়। বাংলায় ভাষাটাকে 'ইংরেজি' এবং জাতিটাকে 'ইংরেজ' করা হয়েছে। 'হিন্দি' আমরা এভাবে লিখলেও কলিকাতা এবং আসামে 'হিন্দী' লিখে। 'বাংলাদেশি' ও 'বাংলাদেশী' দুটোই চালু আছে। তেমনি 'ইংরেজী' বানানও চালু আছে। তবে বাংলা একাডেমী তাদের অভিধানে 'ইংরেজি' বানানকে প্রমিত করেছে।
মির্জা বায়েজীদ আহমেদ : 'বাংলা একাডেমী' কর্তৃপক্ষ আইন পরিবর্তন করে তার নাম 'বাংলা একাডেমি' করেছেন এবং বাংলাভাষী সকলকে পরিবর্তিত নাম ব্যবহার করার সুপারিশ করেছেন। (সম্ভবত, ইংরেজি শব্দ বাংলা ফনেটিকে লিখলে শব্দস্থিত ঈ/ই- ধ্বনি ই/ি-কার-এ প্রতিকায়িত হবে,এমনটাই জানতাম,তবে এই নিয়মও ব্যতিক্রমের বাইরে নয়।) পরিবর্তনের পরিবর্তিত রূপের সাথে তাল না মিলালে মাননীয় স্পিকারের মুখেও 'মাননীয় স্পিকার' বলতে শোনা যায়। আপনার লিখিত 'ষষ্ট' [আমি ষষ্ঠ জানতাম] বানানটিও আমার তরু-মস্তিষ্কে ধরছে না। তারপর আরো আছে, 'শুরুকরিনি'। ব্যাকরণের কোন ক্ষমতা এই বিচ্ছিন্ন শব্দগুলোকে আগলে রেখেছে,তা-ও বোধগম্য নয়। একটু বলবেন কি হাজী রফিক স্যার?
হাজী রফিক : অনেক সময় দ্রুত লিখতে গেলে এক আধটু ভুল হতে পারে। 'শুরুকরিনি' কোথায় লিখেছি দেখলাম না। 'একাডেমী' লেখা আমি আপাতত বদলাব না। আরও কয়েক বছর চলুক। আপনিও 'ঠান্ডা' লিখেন, আসলে হবে 'ঠাণ্ডা।' আপনি কমেন্টে যে সব বিষয় তুলে ধরেছেন, সেগুলো এই আলোচনার মেজর নয়।
মির্জা বায়েজীদ আহমেদ : 'বাংলা একাডেমী' কর্তৃপক্ষ আইন পরিবর্তন করে তার নাম 'বাংলা একাডেমি' করেছেন এবং বাংলাভাষী সকলকে পরিবর্তিত নাম ব্যবহার করার সুপারিশ করেছেন। (সম্ভবত, ইংরেজি শব্দ বাংলা ফনেটিকে লিখলে শব্দস্থিত ঈ/ই- ধ্বনি ই/ি-কার-এ প্রতিকায়িত হবে,এমনটাই জানতাম,তবে এই নিয়মও ব্যতিক্রমের বাইরে নয়।) পরিবর্তনের পরিবর্তিত রূপের সাথে তাল না মিলালে মাননীয় স্পিকারের মুখেও 'মাননীয় স্পিকার' বলতে শোনা যায়। আপনার লিখিত 'ষষ্ট' [আমি ষষ্ঠ জানতাম] বানানটিও আমার তরু-মস্তিষ্কে ধরছে না। 'শ্রেয়তরো' শব্দটা মনে হল প্রথম দেখলাম,যদিও বাংলা একাডেমি অভিধানে আমি খুঁজে পাই নি। যদিও এ যাবতকাল যে কয়টা শব্দ খোঁজার চেষ্টা করেছি তার খুব কমই পাওয়া গেছে, বার বছরের পুরনো ওই অভিধানে।তারপর আরো আছে, 'শুরুকরিনি' ব্যাকরণের কোন ক্ষমতা এই বিচ্ছিন্ন শব্দগুলোকে আগলে রেখেছে,তা-ও বোধগম্য নয়। একটু বলবেন কী রফিক স্যার,
হাজী রফিক : 'Law' and 'Ordinance' / 'আইন' এবং 'অধ্যাদেশ' এর প্রভেদ আছে। আইন শুধু জাতীয় সংসদে প্রণীত হয়। 'বাংলা একাডেমী' কর্তৃপক্ষ আইন পরিবর্তন করে তার নাম 'বাংলা একাডেমি' করেছেন' এই বাক্যটি ভুল হলেও কথার এসেন্স ভুল নয়। আপনি একই কমেন্ট দু'বার দিয়েছেন। এটা অপ্রত্যাশিত।
মির্জা বায়েজিদ আহমেদ : আশা করি উপভোগ্য হয়েছে। এখন স্বঘোষিত সঞ্চালক জনাব হাজী রফিকের মতামত হল, কথায় কথায় অভিধানকে গালিগালাজ করা / অবজ্ঞা করা / তাচ্ছিল্য করা কাম্য নয়।" -----অন্তত 'একাডেমী' প্রশ্নে আপনিও জনাব এনামুল-'র 'ব্যাবহারিক' শব্দসংক্রান্ত কঠোর ও আগ্রাসী মনোভাব পোষণ করছেন,যা শুবাচ গ্রুপের কোন সদস্যের নিকট থেকে কাম্য নয়।সম্ভবত প্রত্যক প্রতিষ্ঠানেরই একটি নির্দিষ্ট গঠনতন্ত্র থাকে, যেখানে 'তন্ত্র' শব্দটা 'আইন'-এর স্থলাভিষিক্ত হয়। 'আইন' শব্দটা সামগ্রিকার্থে 'কানুন' বা 'নিয়ম'-সহ আরো অনেক সমার্থক শব্দের একটিমাত্র। এ অর্থে রাষ্ট্রীয় আইন, ধর্মীয় আইন, সামাজিক আইন সব কি পার্লামেন্টকর্তৃক প্রণীত? যদি তাই হয়,তবে খু-উ-ব জানতে ইচ্ছে করে প্রাকৃতিক আইনের বিল উত্থাপনকারী কারা? কোথায় তাদের পার্লামেন্ট/আইনসভা?
হাজী রফিক : আপনি যদি ভেবে থাকেন আমি 'ষষ্ঠ' বানান জানিনা, তাহলে এই ভাবনাকে স্বাগত জানাই। আপনি নিজেও 'ঠাণ্ডা' বানান জানেন বলে আমি মনে করি। লিখতে গেলে ভুল হবেই। 'ইক' প্রত্যয়যুক্ত শব্দ 'ব্যবহারিক' এবং ' শুদ্ধ বানান চর্চা' টাইটেল নিয়ে কাল যে আলোচনা হয়েছে তা হার্দিক শুভকামনাসহ প্রাণবন্ত হয়েছে। আমার হাতে যে কটা অভিধান আছে, ঢাকা-কলিকাতা-আসামের, সেখানে 'একাডেমী' 'একাডেমি' সবই আছে। 'দধীচি' কে এই নামেই ডাকতে হবে। রফিক সুলায়মান, ডক্টর আমিন ভাই অথবা খুরশেদ আহমেদ স্যার বললেই তো 'দধিচী' লিখতে পারবো না।
মির্জা বায়েজিদ আহমেদ : আপনার সদয় লক্ষ্যার্থে...... দ্রষ্টব্য: 'শুরুকরিনি' Hajee Rafique 'একাডেমী' আমি এভাবেই লিখি, 'মি' দিয়ে লিখতে শুরু করিনি এখনো। English জাতি ও ভাষা দুই অর্থে ব্যবহৃত হয়। বাংলায় ভাষাটাকে 'ইংরেজি' এবং জাতিটাকে 'ইংরেজ' করা হয়েছে। 'হিন্দি' আমরা এভাবে লিখলেও কলিকাতা এবং আসামে 'হিন্দী' লিখে। 'বাংলাদেশি' 'বাংলাদেশী' চালু আছে। তেমনি 'ইংরেজী' বানানও চালু আছে। তবে বাংলা একাডেমী তাদের অভিধানে 'ইংরেজি' বানানকে প্রমিত করেছে।
মুস্তফা কামরুল আখতার আমি নিশ্চিত, 'ঠাণ্ডা' এবং 'ষষ্ঠ' শব্দ দুটোসহ ক'টি শব্দ আপনাদের উভয়ের লেখায় মুদ্রণপ্রমাদ৷ বানানবিষয়ক আলোচনায় পরস্পর ভুল-ধরাধরি প্রত্যাশিত হলেও মুদ্রণত্রুটি অনায়াসে আলাদা করা যায় এবং সে-সব শব্দ সাধারণত ভুলের আওতায় আনা হয় না ৷
আমি নিজেই ক্ষীণদৃষ্টি দিয়ে উ-কার ও দীঘ উ-কার ঠাহর করতে পারি না, ঠাণ্ডা-ঠান্ডা আউলে ফেলি ৷ বলে দিতে হয় না, এটি টাইপ করতে সমস্যা বাধিয়েছি ৷
সমৃদ্ধ ব্যাখা-বিশ্লেষণ ইত্যাদির পাশাপাশি সপ্রতিভ, সরস, সকৌতুক পরিমিত শব্দচয়নসহ উপভোগ্য বাকশৈলীর সূচনা ( দীর্ঘ উকার দিয়েছি তো ! ) করলেন , জিকরুর আপা, বিধু'দা, হুদা স্যার, অনিন্দ্য'দা, রাবেয়া আপা, সেহেলী আপা ৷ সেই মিছিলে যোগ দিলেন খোরশেদ ভাই, মির্জা বায়েজিদ ভাই, রফিক ভাই ৷ এঁদের ধারণা,জ্ঞান, পর্যবেক্ষণ অবিশ্বাস্য ! এঁরা প্রায়ই সঞ্চালকের ভূমিকায় আসবেন, পরিশীলিত-মার্জিত বিতর্কের অবসান ঘটাবেন উপসংহার দিয়ে, এটা প্রত্যাশিত ৷ আরও অনুচ্চারিত প্রত্যাশা, সে-সবই নিহিত থাকুক আমার বক্তব্যে, সবকিছু উচ্চারিত হওয়া জরুরি নয় অসাধারণ মেধাসম্পন্ন মানুষদের সামনে ৷ একমাত্র বিধি-অধ্যাদেশই সকল ব্যাখা-দাবিকে সুস্পষ্টভাবে লিখিতরূপে অন্তর্ভুক্ত করে ৷
এনামুল হক : অনেকেই বানানে ভুল করেছেন, এটা দৃষ্টিকটু লাগে। মানলাম কয়েকটা মুদ্রণপ্রমাদ, তাই বলে সব ভুলকে এ ভিত্তিতে ফেলা যায় না। কোনো মন্তব্যের জবাব দিতে গিয়ে দেখা যায় সে-মন্তব্যে আরো অনেক ভুল, তখন বিষয়ভিত্তিক প্রতিমন্তব্য করব না ভুল শোধরাবো? আমার মনে-হয় অসতর্কতাই এখানে দায়ী।আমি 'একাডেমি' লিখি।
খুরশেদ আহমেদ : "সবকিছু উচ্চারিত হওয়া জরুরি নয় অসাধারণ মেধাসম্পন্ন মানুষদের সামনে ৷" শুবাচ-গ্যালাক্সিতে মহাকর্ষীয় টানে এবং অগুনতি জ্যোতিষ্কের আলোক-সম্মোহনে আটকা পড়ার আগে আমি বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন দৈনিকে চিঠিপত্র ও তৃতীয় মত ইত্যাদি কলামে বাংলাদেশের ও বাইরের নানা যায়গা থেকে আমার সম্পূর্ণ অজানা মানুষের অসাধারণ মন্তব্য পড়ে আমার সবসময় মনে হয়েছে, মেধা কোন নির্দিষ্ট অঞ্চলের বা গোষ্ঠির একচেটিয়া ব্যাপার নয়, মেধা ছড়িয়া আছে সর্বত্র। একটি জাতির জীবনে রেনেসাঁর উন্মেষ তখনই ঘটে যখন সেই জাতি তার মেধার সম্পূর্ণ ও সর্বোত্তম ব্যবহার করতে পারে। আমি বাঙালি জাতির রেনেসাঁর, নবজন্মের, পুনর্জাগরণের প্রতীক্ষায় আছি! আমাদের রাজনৈতিক নেতৃত্ব যদি এই মেধাকে বাধাহীনভাবে কাজ করার সুযোগ সৃষ্টি করে দিতে পারে, তাহলে বাংলাদেশ হয়ে উঠতে পারে, শুধু আকাঙ্ক্ষায় নয়, বাস্তবেও 'বিশ্বের বিস্ময়'! মুস্তফা কামরুল আখতার!
মির্জা বায়েজিদ আহমেদ : "আপনি যদি ভেবে থাকেন আমি 'ষষ্ঠ' বানান জানিনা,"------আশ্চর্য! 'জানিনা'-এর মধ্যেও অজানা। যাই কই! ‘দধীচি’ কে এই নামে ডাকতে হবে। -----যদি প্রশ্ন করি, কোন নামে? উত্তর : এই!
হাজী রফিক : I am not at all interested to extend this discussion anymore. If possible join us at another topic on Nazrul Sangeet here. Plz let us be enlightened with your resources of music genre.
মির্জা বায়েজীদ আহমেদ : আগে শরিয়ত তারপর......... marefa't!
ফয়েজ হাবিব : সহমত।
মোহাম্মদ আমীন : সবাইকে অসংখ্য ধন্যবাদ। দীর্ঘক্ষণ আলোচনা হল। এর আগেও কয়েক বার ‘শুদ্ধ বানান চর্চা’ নামের ‘বানান’ শব্দটির স্থলে ‘বাংলা’ প্রতিস্থাপনের প্রস্তাব এসেছিল। কিন্তু সংখ্যগরিষ্ঠ সদস্য ছিলেন ‘শুদ্ধ বানান চর্চা’ নামের পক্ষে। যাই হোক, এটি অপরিবর্তনীয় কিছু নয়। অধিকাংশ সদস্য যা চাইবেন সে নামটিই নির্ধারণ করা হবে। প্রয়োজনে এ নিয়ে আরও আলোচনা চলতে পারে। এখন অনেক রাত। পেটে ক্ষিধে, মনে গার্হ্যস্থ অনুভব। আলোচনা আজ আর দীর্ঘায়িত করা সমীচীন হবে না। আজকের আলোচনায় কয়েকজন ‍বিজ্ঞ সদস্য অংশগ্রহণ করতে সক্ষম হন নি। তাঁরা থাকলে আলোচনা আরও চমৎকার হত। যাই হোক, আলোচনা আজকের মতো এখানেই মুলতবি করছি। আগামী সন্ধ্যায় যথাসময়ে আবার আলোচনা শুরু হবে। সবাই ভালো থাকুন।

Comments

Popular posts from this blog

উপলক্ষ ও উপলক্ষ্য

পার ও পাড় / ড. মোহাম্মদ আমীন

তৎসম চেনার কৌশল / ড. মোহাম্মদ আমীন