বিষ্ঠা, উচ্ছিস্ট ও বমন / সানোয়ার রাসেল - শুবাচ

 বিষ্ঠা, উচ্ছিস্ট ও বমন

কোন এক পণ্ডিত কবি বলেছিলেন :
 কাক বিষ্ঠাঃ মৃতাবস্ত্রং শিবনির্মাল্যমেবচ
উচ্ছিষ্টং বমনষ্ণৈব পবিত্রাণি যুগে যুগে।।
সাদা চোখে এর মানে দাঁড়ায় কাকের বিষ্ঠা, মৃতের বস্ত্র, শিবনির্মাল্য, উচ্ছিষ্ট ও বমি যুগে যুগে পবিত্র! হয়তো ভাবছেন এ আবার কেমন উদ্ভট কথা!
আসলে ধাঁধাঁ বা শ্লোকের ঠিক অর্থটি বের করতে হলে অনেক বিকল্প অর্থ মাথায় রেখে এগুতে হয়। কাকবিষ্ঠা দিয়ে বটগাছও বুঝায়। কাক বটফল খেয়ে নানা বৃক্ষে, অট্টালিকায়, মাঠে ময়দানে মলত্যাগ করে। তাতে যে সব অজীর্ণ বটফলের বীজ থাকে তা থেকে আবার গাছ হয়। এজন্যই বটগাছকে কাকবিষ্ঠা বলে।
রেশমের গুটির মধ্যে কীট মরে থাকে, আর সেই গুটি থেকে সুতো বের করে বস্ত্র বোনা হয়, সুতরাং রেশমী কাপড় হল মৃতের বস্ত্র। আর শিবনির্মাল্য তো পবিত্র বটেই।
বাছুর আগে বাঁট টেনে দুধ খায় তারপর সেই দুধ দোহন করা হয়, তাই দুধ হল উচ্ছিষ্ট। মৌমাছি নানা ফুল থেকে রস নিয়ে চাকে রাখে, তাই মধুকে বমন বলা হয়েছে। অর্থাত্‍ শ্লোকটির প্রকৃত অর্থ হবে বটগাছ, রেশমী কাপড়, শিবনির্মাল্য, দুধ ও মধু চিরদিনই পবিত্র।
এখন একটা ধাঁধাঁ বলি, দেখি কে ভাঙাতে পারেন।
কাক বিষ্ঠায় শুয়ে পতি
রোষে তারে লাথায় সতী
দুশো গজ তারে ছাড়ি
যমের দোরে দিয়ে পাড়ি
হাতে বাণ যাবে রসাতল
লক্ষীলাভে ভাগ্য উজল।
ধাঁধাঁর অর্থঃ কাক বিষ্ঠায় শুয়ে পতি রোষে তারে লাথায় সতী। এর দ্বারা কোন এক বটগাছের নিচে কালী মূর্তির কথা বলা হচ্ছে। কালী মূর্তি যারা দেখেছেন তারা জানেন যে কালী তার পতি শিবের গায়ের উপর পা দিয়ে জিভে কামড় দিয়ে আছেন এমন মূর্তিই সর্বত্র দেখা যায়। দুশোটা গজ তারে ছাড়ি যমের দোরে লাগায় পাড়ি। দশটা দিকের দশটি অধিপতি আছে। পুবের ইন্দ্র, পশ্চিমের বরুণ, উত্তরের কুবের, দক্ষিণের যম, ঈশানের মহাদেব, নৈঋতের নিঋতি, বায়ুর পবন, অগ্নির হুতাশন, ঊর্ধ্বের ব্রহ্মা ও অধঃর অধিপতি বিষ্ণু। কাজেই যমের দোর মানে দক্ষিণ দিক, অর্থাত্‍ বটগাছ তলার কালীমন্দির থেকে দক্ষিণ দিকে দুশো গজ যেতে হবে। হাতে বাণ যাবে রসাতল, লক্ষীলাভে ভাগ্য উজল। একে চন্দ্র, দুইয়ে পক্ষ, তিনে নেত্র, চারে বেদ, পাঁচে বাণ। অর্থাত্‍ পঞ্চম সংখ্যার দ্যোতক হল বাণ। আর রসাতল মানে মাটির নিচে। তাহলে এর মানে দাঁড়ায় বটগাছ তলার কালী মন্দির থেকে দক্ষিণে দুশো গজ গিয়ে সেখানে পাঁচ হাত মাটি খুঁড়লেই লক্ষী তথা ধন লাভ হবে। এই রকম মজার মজার বুদ্ধিদীপ্ত শ্লোক বা ধাঁধাঁর উদাহরণ আমাদের বাংলা সাহিত্যে প্রচুর পাওয়া যায়। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরও এরকম ভাষার সংকেত নিয়ে সাহিত্যে খেলা করেছেন। আর আমাদের সত্যজিত্‍ রায়ের ফেলুদা তো ছিলেন এসব ধাঁধাঁ সমাধানে ওস্তাদ! এ লেখায় ব্যবহৃত ধাঁধাঁ দুটি এক সময়ের জনপ্রিয় লেখক দৃষ্টিহীন এর বটকালীর জঙ্গলে নামক উপন্যাস থেকে নেওয়া হয়েছে।

Comments

Post a Comment

Popular posts from this blog

উপলক্ষ ও উপলক্ষ্য

পার ও পাড় / ড. মোহাম্মদ আমীন

তৎসম চেনার কৌশল / ড. মোহাম্মদ আমীন