ঘটি-বাঙাল রেষারেষি / ড. মোহাম্মদ আমীন

ঘটি-বাঙাল রেষারেষি

জ্যোতিভূষণ চাকী তাঁর ‘বাগর্থকৌতুকী’ গ্রন্থে লিখেছেন, “ঘটি-বাঙালের পারস্পরিক রেষারেষি সুপ্রাচীন। এ-বাংলা ও-বাংলাকে তেমন প্রীতির চোখে দেখত না। বিয়ে শাদির ব্যাপারও এড়াতে চেষ্টা করত।” প্রমাণস্বরূপ তিনি বলেন, সরহপাদের একটি দোহায় আছে-
বঙ্গে জায়া নিলেসি পরে
ভাগেল তোহর বিণাণা।
অর্থাৎ বঙ্গে (= পূর্ববঙ্গে) যখন বিয়ে করেছিস তোর বুদ্ধিসুদ্ধি সব লোপ পেল বলে (বিণাণা চিত্তবান অর্থাৎ সু-চেতনা)। ভুসুকপাদেও দেখছি -
আদি ভুসুক বঙ্গালী ভইলী
ণিঅ ঘরণি চণ্ডালী লেলী।
অর্থাৎ ভুসুক বঙ্গালীকে যেদিন নিজের গৃহিণী করলেন সেদিন তিনি বাঙালি বনে গেলেন অর্থাৎ বঙ্গালসুলভ ভ্রষ্টাচারের ফাঁদে পড়লেন।
ভারতীয় জি-বাংলা চ্যানেলে প্রচারিত ‘বয়েই গেল’ নাটকে ঘটি-বাঙালি রেষারেষির কিছু চিত্র পাওয়া যায়।
ঘটি এসছে ‘বন্দ্যঘটী’ থেকে। আদি রাঢ়ীয় ব্রাহ্মণদের উপাধি ছিল ‘বন্দ্যঘটী’। বন্দ্যঘট’ গ্রামের নাম থেকে ‘বন্দ্যঘটী’ উপাধি এসেছে। বন্দ্যঘটে বাস যার সে ‘বন্দ্যঘটীয়>বন্দ্যঘটী’। ‘বন্দ্যঘট’ এর অপভ্রংশ বাঁড়র (বন্দ্যঘট> বন্দহড়>বন্দঅড়>বাঁড়ড়> বাঁড়র)। বাঁড়ুর্জে বা বাঁড়ুজ্জে- এর উৎপত্তিও বাঁড়র থেকে। ঘটী প্রথমে কেবল রাঢ়দেশীয় ব্রাহ্মণকেই বোঝাত, ক্রমে তা শুধু রাঢ়দেশে বা পশ্চিমবঙ্গ অর্থে সংশ্লিষ্ট হয়ে পড়ে। অর্থেও অবনমন ঘটে। প্রাদেশিক প্রতিযোগিতাজনিত ঈর্ষায় শব্দটি ক্রমশ তাচ্ছিল্যমিশ্রিত বিদ্রূপার্থে ব্যবহৃত হতে শুরু করে।

Comments

  1. বন্দ্যঘটী গ্রামটা কোথায়?

    ReplyDelete

Post a Comment

Popular posts from this blog

উপলক্ষ ও উপলক্ষ্য

পার ও পাড় / ড. মোহাম্মদ আমীন

তৎসম চেনার কৌশল / ড. মোহাম্মদ আমীন