নটে গাছটি মুড়ালে, গল্প আমার ফুরালো / ড. মোহাম্মদ আমীন - শুবাচ


 নটে গাছটি মুড়ালে, গল্প আমার ফুরালে

এককালে দাদি-নানি, মহিলা মুরুব্বি বা কাজের মহিলা (তৎকালে গৃহস্থ বাড়িতে যারা কাজ করতেন তাদের একটা মর্যাদা ছিল, বর্তমান কালের মতো এত অবহেলা করা হত না।) মাছ-মাংস, তরি-তরকারি বা শাক-সব্জি কুটতে কুটতে শিশুদের গল্প শোনাতেন; বা গল্প শুনিয়ে তাদের শান্ত রাখতে হত। তরকারির মধ্যে সাধারণত শাকটি সবার শেষে কুটার জন্য নেওয়া হত। সেকালে নটে শাক ছিল যেমন সহজলভ্য, তেমনি উপাদেয়। প্রায় বেলা প্রত্যেক সাধারণ গৃহস্থের বাড়িতে এ শাকটি রান্না করা হত। এমন অনেক সময় ঘটত যে, তরকারি কুটা শেষ হয়েছে কিন্তু গল্পটি শেষ হয় নি বা একটি গল্প শেষ হলেও শিশুরা আরও একটি নতুন গল্প বলার জন্য বায়না ধরেছে অথবা কাজ তরকারি কুটা শেষ হওয়ার আগে গাল্পিকের গল্প বলার ইচ্ছা বা স্মৃতি আর সাড়া দিচ্ছে না। তখন বলা হত, আমার শাক কুটা শেষ অর্থাৎ কাজ শেষ, তাই গল্পও শেষ। ‘নটে গাছটি মুড়ালো’ মানে নটে গাছ থেকে পাতা (শাক) নিয়ে গাছটিকে পাতাশূন্য (মুড়া) করে ফেলা; অর্থাৎ শাক কুটা শেষ হয়েছে। বস্তুত ‘নটে গাছটি মুড়ালো’ বাগ্‌ভঙ্গিটি এখানে কার্যক্ষেত্র থেকে প্রতীকি অর্থে নিয়ে আসা হয়েছে। এর অর্থ বসে বসে কাজের সঙ্গে সঙ্গে বাচ্চাদের গল্প শুনানোর সুযোগ আর নেই। কারণ নটে শাক কুটাও শেষ হয়ে গেছে। অর্থাৎ আর গল্প শোনানোর কোন সুযোগ নেই। তাকে অন্য কাজে যেতে হবে। এ প্রাচীন রেওয়াজ থেকে ‘প্রবাদটি সৃষ্টি হয়েছে। এর আর একটি উৎসার্থ আছে। সেটি হল : তরকারি কুটা শেষ হয়েছে, মানে আমার ঝুড়িতে আর গল্প নেই বা আমার গল্প বলার ইচ্ছেও নেই এবং বাচ্চাদেরকেও আর গল্প শোনানো ঠিক হবে না। এখন পড়ার বা ঘুমানোর সময়। অতএব গল্প শেষ।

Comments

Popular posts from this blog

উপলক্ষ ও উপলক্ষ্য

পার ও পাড় / ড. মোহাম্মদ আমীন

তৎসম চেনার কৌশল / ড. মোহাম্মদ আমীন