মঞ্জুভাষণ / ড. মোহাম্মদ আমীন - শুবাচ

মঞ্জুভাষণ

কথার শক্তি তরবারির চেয়ে প্রবল। বলা হয়, কথার চেয়ে বেশি কষ্ট দিতে পারে এমন কোনও অস্ত্র নেই। আবার বলা হয়, কথার চেয়ে বেশি শান্তি দিতে পারে এমন পরম বিষয়ও পৃথিবীতে নেই। এ জন্য বলা হয়, শব্দব্রহ্ম। অর্থাৎ শব্দের শক্তি ব্রহ্মের মতোই অসীম। কোনও কিছু সোজাসুজি বোঝানোর জন্য যেমন শব্দ আছে তেমনি শব্দ আছে ঘুরিয়ে বলার। কোন ভদ্রলোক অপ্রিয় কথা সহজে সোজাসুজি বলতে চান না। অপ্রিয় কথাটি যখন না বললেই নয়, তখন মোলায়েম করে ঘুরিয়ে বলে। ইংরেজিতে শব্দ চয়নের এ কৌশলকে Euphemism বলা হয়। বাংলায় এ কৌশলকে মঞ্জুভাষণ বলে। অধ্যাপক শ্যামাপ্রসাদ চক্রবর্তী তাঁর লেখা অলংকার চন্দ্রিকায় প্রথম মঞ্জুভাষণ শব্দটি ব্যবহার করেন।
জামানের বন্ধু রবিন চুরি করে। বড় লজ্জা হয় জামানের কিন্তু কাউকে বলতে পারছে না, রবিন চুরি করে। বলল : রবিনের হাতটানের অভ্যাস আছে। বাজারে যাবার সময় স্ত্রীর কণ্ঠ: চাল বাড়ন্ত, মানে বাড়িতে চাল নেই। চাল নেই বলা লজ্জা ও দারিদ্র্য প্রকাশক। তাই বাড়ন্ত। ভিক্ষুক ভিক্ষা চাইল, না দিয়ে বলা হল : মাফ কর। অফিসে সাহেবকে ঘুষ দিয়ে বলল: কিছু মনে করবেন না স্যার, ভাবীর জন্য একটা শাড়ি আর বাচ্চাদের জন্য কিছু মিষ্টি কিনে নেবেন।
মঞ্জুভাষণের এ প্রক্রিয়ায় চোরকে বলে নিশিকুটুম্ব। ইংরেজিতে চোরকে ভদ্রতা করে বলা হয় ফেয়ার ট্রেডার, চাকরি থেকে ডিসমিসকে বলা হয় গোল্ডেন হ্যান্ডস্যাক, আর্লি রিটায়ারম্যান্ট বা আর্লি রিলিজ। বেশ্যা শব্দটি আগে খুব ব্যবহার হত। এখন বলা হয় যৌনকর্মী। বাসার কাজের মেয়েকে ভদ্রতা করে আগে বলা হত বুয়া, তারপর আরও ভদ্র হয়ে গৃহপরিচারিকা, এখন তো গৃহকর্মী। সব ভদ্রতার জন্য করা। এগুলোই মঞ্জুভাষণ।

Comments

Popular posts from this blog

উপলক্ষ ও উপলক্ষ্য

পার ও পাড় / ড. মোহাম্মদ আমীন

তৎসম চেনার কৌশল / ড. মোহাম্মদ আমীন