স্বত্ব; সত্ত্ব; সত্তা / মাহমুদ তালুত - শুবাচ

স্বত্ব; সত্ত্ব; সত্তা

স্বত্বঃ
(স্ব+ত্ব) ‘স্ব’ মানে নিজের। শব্দটি বিশেষণ, এর সঙ্গে ত্ব যোগ করে এক বিশেষ্য পদে রূপান্তরিত করা হয়েছে। এখন মানে দাঁড়াল – নিজত্ব, অর্থাৎ নিজের অধিকার যেখানে আছে; এক কথায় এর অর্থ হলো ‘মালিকানা’। যেমন মুন্নুজান নিজের সমস্ত বিষয়সম্পত্তি স্বত্ব ত্যাগ করে তাঁর ভাই মহসীনকে দিয়ে দিয়েছেন।
সত্ত্ব
(সৎ+ত্ব) ৎ আর ত সন্ধির ফলে ত্ত হয়েছে। সেইসঙ্গে ব-ফলা তার নিজের জায়গাতেই আছে।
ক. ‘সৎ’ শব্দের অর্থ হচ্ছে ‘বিদ্যমান’। ‘সত্ত্ব’ শব্দের অর্থ এর ফলে – অস্তিত্ব বা বিদ্যমনতা। যে-মেয়ে মা হতে যাচ্ছে তাকে আমরা বলি, ‘মেয়েটি অন্তঃসত্ত্বা’, অর্থাৎ মেয়েটির ‘অন্তঃ’তে (=অব্যান্তরে, ভিতরে) আরেকটি প্রাণের অস্তিত্ব রয়েছে। ‘সত্ত্বেও’ কথাটা এখান থেকেই এসেছে; যেমন – নিষেধ সত্ত্বেও (অর্থাৎ নিষেধ বিদ্যমান থাকতেও) এ কাজ করলে কেন?
খ. ‘সত্ত্ব’ শব্দের দ্বিতীয় অর্থ – প্রকৃতির তিনিটি গুণের (সত্ত্ব, রজঃ তমঃ) মধ্যে শ্রেষ্ট গুণ। মানুষের মধ্যে যে-সব শ্রেষ্ট অনুভূতি আছে, যেমন দয়া, প্রে্‌ ন্যায়নিষ্টা, মনূষ্যত্ববোদ, বিবেক ইত্যাদি সব সম্মিলিত করলে যা দাঁড়ায় তা-ই সত্ত্বগুণ। যাঁর এগুণ আছে তাঁকে আমরা বলি ‘সাত্ত্বিক’ লোক (শব্দটা আসতেই একজনে কথা মনে পড়ল; আমাদের প্রথম আলো ব্লগে সবার প্রিয় একজন কবি আছেন যার নাম “শামান সাত্ত্বিক”)। ‘সাত্ত্বিক’ বিশেষণ পদে ‘তা’ যোগ করে (সাত্ত্বিক+তা=) ‘সাত্ত্বিকতা’ বিশেষ্য পদ তৈরি করা যায়।
গ.‘সত্ত্ব’ শব্দের তৃতীয় অর্থ –রস, ফলের রস। ‘আমসত্ত্ব’ তো আসলেই আমের রস, তাবে জ্বাল দিয়ে-দিয়ে ঘন করে তারপরে শুকিয়ে নেওয়া।
সত্তা
(সৎ+ত্তা) ‘সৎ’ শব্দের অর্থ যে ‘বিদ্যমান’ তা তো আগেই বলেছি; ‘তা’ হলো বিশেষ্যে রূপান্তরিত হওয়ার চিহ্ন। মানে দাঁড়াল -বিদ্যমানতা, অস্তিত্ব,। যেমন – সত্তা হারিয়ে ফেলা।
এই ‘সত্তা’ আর আগের ‘সত্ত্ব’ অর্থের দিক দিয়ে একই, তবে প্রয়োগের ক্ষেত্রে তফাত আছে।

Comments

Popular posts from this blog

উপলক্ষ ও উপলক্ষ্য

পার ও পাড় / ড. মোহাম্মদ আমীন

হিসাব আর হিসেবে / ড. মোহাম্মদ আমীন - শুবাচ