বক ধার্মিক / ড. মোহাম্মদ আমীন

বক ধার্মিক

ভারতীয় পুরাণের একটি কথোপকথন থেকে ‘বক ধার্মিক’ বাগ্‌ভঙ্গিটির উৎপত্তি। এর আভিধানিক অর্থ কপট- সাধু, ভদ্রবেশী অভদ্র, বগলে ইট মুখে শেখ ফরিদ, বর্ণচোরা প্রভৃতি। এবার বাগ্‌ভঙ্গিটির উৎস নিয়ে আলোচনা করা যাক। শ্রী রামচন্দ্র ও লক্ষণ বনবাসকালে একদিন পম্পা সরোবরের তীরে ভ্রমণ করছিলেন। তখন ওই পম্পা সরোবরের তীর-নিকটবর্তী অগভীর জলে এক শুভ্রকান্তি বককে খুব সন্তর্পণে ধীর পায়ে হাঁটতে দেখে রামচন্দ্র লক্ষ্মণকে বললেন :
শনৈঃ শনৈঃ ক্ষিপেৎ পাদৌ প্রাণীনাং বধ শঙ্কয়া।
পশ্য লক্ষ্মণ পম্পায়াং বকঃ পরমধার্মিকঃ।।
অর্থাৎ “হে লক্ষ্মণ, দেখ, এই পম্পা সরোবরের জলে বসবাসরত কোনও জীব মরে যেতে পারে শঙ্কায় বক কেমন অতি সন্তর্পণে ধীরে ধীরে পদক্ষেপ করছে, অতএব বোধ হচ্ছে বক পরম ধার্মিক।”
রামচন্দ্রের সমস্ত দায়ভার ছিল লক্ষণের হাতে। অগ্রজ রামচন্দ্রের আজ্ঞায় তার জীবন-ধারণের উপযোগী সকল কাজ লক্ষ্মণই সম্পন্ন করেন, তাই তার বাস্তবিক ও ব্যবহারিক অভিজ্ঞতা ছিল অধিক। তিনি রামচন্দ্রকে বললেন :
ন জানাসি রাঘব ত্বং বকঃ পরম দারুণঃ।
নির্জীব ভক্ষকো গৃধ্রঃ সজীব ভক্ষকো বকঃ ।।
অর্থাৎ, ”হে রাঘব,আপনি জানেন না যে এই শুভ্রকান্তি বক ধার্মিক তো নয়ই, বরং অতি নিষ্ঠুর। ভয়ঙ্কর চেহারার গৃধ্র বা শকুন দেখতে ভয়ঙ্কর হলেও, তারা একমাত্র মৃত প্রাণীই ভক্ষণ করে, কিন্তু সুন্দর চেহারার বক সজীব বা জীবন্ত মাছকেই নিষ্ঠুরভাবে ভক্ষণ করে।”
বক মাছ শিকারের উদ্দেশ্যে এক পা তুলে বিলে-ঝিলে ঘণ্টার পর ঘণ্টা নীরব দাঁড়িয়ে থাকে। তখন তাকে দেখে মনে হয় কোনও সাধু একাগ্রচিত্তে কঠোর তপস্যায় মগ্ন । সাধুর মতো তপস্যায় মগ্ন দেখালেও বকের আসল উদ্দেশ্য মাছ-শিকার। মাছ নাগালে আসামাত্র তপঃবেশ ত্যাগ করে ঠোঁট চালিয়ে দেয় কঠোর নৃশংসতায়। অনুরূপ যারা ধার্মিক বেশে ভণ্ডমি বা কপটতায় নিজেদের নিয়োজিত রাখে তাদেরকে বকের মাছ শিকারের তাগিদে সাধুর মতো দাঁড়িয়ে থাকার সঙ্গে তুলনা করা হয় ।
উৎস: ব্যুৎপত্তি ও প্রয়োগ অভিধান, ড. মোহাম্মদ আমীন

Comments

Popular posts from this blog

উপলক্ষ ও উপলক্ষ্য

পার ও পাড় / ড. মোহাম্মদ আমীন

তৎসম চেনার কৌশল / ড. মোহাম্মদ আমীন