বাংলা আমার মাতৃভাষা বাংলা আমার প্রাণ / ড. মোহাম্মদ আমীন।
বাংলা আমার মাতৃভাষা বাংলা আমার প্রাণ
বাংলা আমার মাতৃভাষা, বাংলা আমার জীবন, বাংলা আমার ধ্যান-জ্ঞান এবং সাধনা। বাংলাকে ঘিরে আমার অস্তিত্ব, আমার বিকাশ, আমার দেশ, বিশ্ব এবং সবকিছু। আমি প্রথমে বাঙালি এবং বাংলাভাষী তারপর অন্যকিছু। তার মানে আমি বিশ্বায়নের বিপক্ষে নয়, বরং বিশ্বায়নের নিবিড়তায় পরমভাবে আগ্রহী। তাই আমি বাংলাকে ভালোবাসি, আমি তাই আমার স্বকীয়তায় গর্বিত হবার সকল উপাদান খুঁজে পায় আমার ভাষায়, আমার সাহিত্য আর সংস্কৃতিতে।
মাতৃভাষা ছাড়াও অন্য ভাষা শেখায় কোনও দোষ নেই, বরং যত বেশি ভাষা আয়ত্ত করা যায় ততই মঙ্গল, ততই লাভ। এটি আমার মাতৃভাষা ও সংস্কৃতির জন্যও কল্যাণকর। তবে শুধু আর্থিক কারণে কিংবা মাইকেল মধুসূদনের ভাষায় “পরধনলোভে মত্ত হয়ে” নিজের মাতৃভাষাকে পদদলিত করে অন্যের ভাষার জন্য প্রাণপাত করা একধরণের কদাচার। এটাকে ব্যক্তিত্বহীন কোনও নষ্টের চরম নষ্টামি বলা যায়। যা ভিক্ষাবৃত্তির মতো ঘৃণার্হ। মাতৃভাষার প্রতি এমন অবহেলাকারীদের জারজ উল্লেখ করে করে সপ্তদশ শতকের কবি আবদুল হাকিম (জন্ম: ১৬২০ - মৃত্যু: ১৬৯০) লিখেছিলেন:
আন্তর্জাতিক ভাষা হিসাবে ইরেজি শেখার আবশ্যকতা অস্বীকার করার কিছু নেই। শুধু ইংরেজি কেন - শিখুন আরবি, হিন্দি, চায়না, ফ্রেন্স এবং ইচ্ছেমতো। তবে তা কিন্তু কখনও নিজের মাতৃভাষাকে পিষ্ট করে নয়। প্রয়োজনে পৃথিবীর সব ভাষা শিখে ফেলুন, এটি কৃতিত্বের। তাতে আপত্তি নেই কিন্তু তা মাতৃভাষাকে অমর্যাদা করে নয়। যে অন্যের সংস্কৃতিকে বুখে ধারণ করার জন্য নিজের সংস্কৃতিকে নিচে ফেলে দেয়, যে অন্যের ভাষা শেখার জন্য নিজের মাতৃভাষাকে ভুলে যায় সে দেশদ্রোহীর চেয়েও ভয়ঙ্কর। তস্করের চেয়েও হেয়।
অনেকে মাতৃভাষাকে অস্পৃশ্য গণ্য করে ইংরেজি বা অন্য কোনও বিদেশি ভাষা শেখার জন্য উঠেপড়ে লাগে। কারণে অ-কারণে ইংরেজি বুলি আওড়ায়, অথচ মাতৃভাষায় কথা বলতে দ্বিধা করে। নিজের ভাষার প্রতি এমন বেহায়াময় আচরণ কোনও বিবেকবান ও শিক্ষিত মানুষের পক্ষে কীভাবে করা সম্ভব তা ভাবতেই লজ্জা হয়।
যারা নিজের মাতৃভাষা ভালো জানেন না, তারা বিদেশি ভাষা কীভাবে ভালো জানবেন? যিনি নিজের প্রতিবেশীকে চেনেন না তিনি কীভাবে অন্য পাড়ার লোকদের চেনবেন? ইংরেজি ভাষায় যে সব বাঙালি অযথা বুলি আওড়ান তারা ভালো ইংরেজি দূরে থাকা, ভালো বাংলাও জানেন না, যেমন জানেন না নিজ-মাতৃভাষা।
মাইকেল মধুসূদন বাংলাকে অবহেলা করে ইংরেজি-প্রেমে উদ্বেল হয়ে ওঠেছিলেন। তবে তিনি ভালো বাংলাও জানতেন, তাই শেষ পর্যন্ত নিজের মাতৃভাষার কদর বুঝতে সক্ষম হয়েছিলেন। তাই এখনও বেঁচে আছেন বাংলাভাষীর অন্তরে, ইতিহাসের পাতায়। ভুল বুঝে যদি ফিরে না-আসতেন কে মনে রখাতেন তাঁকে? এখন যারা এমন করেন তারা কী মাইকেল মধুসূদনের চেয়েও অধিক ইংরেজি জানেন?
অবশ্যই না। তবু কাকাতুয়ার মতো বলে যান গড, ডগ, নাইট - - -।
তারপরও তারা ইংরেজিকে মনে করে ধ্যান-জ্ঞান, বাংলাকে করে অপমান। এর কারণ একটাই, ভিক্ষুকের মতো অর্থলিপ্সা। অর্থের প্রয়োজন আছে কিন্তু তা কখনও ভিক্ষাবৃত্তি করে নয়, শ্রম দিয়ে, মর্যাদা সহকারে মাথা উঁচু রেখে। চায়নারা সারাবিশ্বে ছড়িয়ে কিন্তু নিজদেশে মাতৃভাষার প্রতি অবিচল আস্থায় যেন হিমালয়। তেমন উদাহরণে আনা যায় জাপান, কোরিয়া, ফ্রান্স, সুইজারল্যান্ড, তুরস্কসহ আরও অনেক অনেক জাতি। নিজের মাতৃভাষার প্রতি অবহেলা কেবল বাঙালিদের আচরণেই দেখা যায়। অথচ তারা এ ভাষার জন্য জীবন দিয়েছিলেন। তা হলে তারা মাতৃভাষা প্রতি এমন আচরণ করে জীবন দেওয়ার বদলা নিচ্ছে?
যে আচরণ স্বকীয়তাকে ক্ষুণ্ন করে সে আচরণ কোনও সুস্থ ও বিবেকবান মানুষ কখনও করতে পারে না। যদি উন্নতি নামক আর্থিক সমৃদ্ধির জন্য নিজের মাতৃভাষা, সাহিত্য ও সংস্কৃতিকে তুচ্ছ করার মতো কাজ করতে হয়, তবে সে কাজ আমি কখনও করব না, যদি সারাবিশ্বও এনে দেয়া হয় আমার হাতে, তবুও।
আগে আমার দেশ, আমার ভাষা, আমার সংস্কৃতি। মোদ্দাকথায় আমার অস্তিত্ব, তারপর অন্য কিছু। এগুলোই আমার হৃৎস্পন্দন, অনুক্ষণ জীবন। জীবন না-থাকলে ওগুলো দিয়ে আমি কী করব? আমি তো মানুষ, পশু নয়।
নিজের মাকে অবহেলা করে অন্যের মাকে নিয়ে গভীর মমতায় মগ্ন হয়ে পড়া যেমন ঘৃণার, তেমনি ঘৃণার মাতৃভাষাকে অবহেলা করে অন্যের ভাষা-প্রেমে বিগলিত হয়ে পড়া। এটাকে কেবল ধনী শ্বশুর-শাশুড়ির অর্থের লোভে হতদরিদ্র জন্মদাত্রীকে ভুলে যাওয়া কোনও নর-পিশাচের সঙ্গে তুলনা করা যায়।
এরা বাংলাদেশের স্বাধীনতাযুদ্ধে নীরিহ বাঙালি ও মা-বোনের উপর অত্যাচারী হানাদারের চেয়েও কম নৃশংস নয়। বিশ্বের অমূল্য সম্পদ বাংলা ভাষার নিরূপম বিকাশের জন্য এদের যে কোনও মূল্যে প্রতিহত করা দরকার- আমার আপনার সবার।
বাংলা আমার মাতৃভাষা, বাংলা আমার জীবন, বাংলা আমার ধ্যান-জ্ঞান এবং সাধনা। বাংলাকে ঘিরে আমার অস্তিত্ব, আমার বিকাশ, আমার দেশ, বিশ্ব এবং সবকিছু। আমি প্রথমে বাঙালি এবং বাংলাভাষী তারপর অন্যকিছু। তার মানে আমি বিশ্বায়নের বিপক্ষে নয়, বরং বিশ্বায়নের নিবিড়তায় পরমভাবে আগ্রহী। তাই আমি বাংলাকে ভালোবাসি, আমি তাই আমার স্বকীয়তায় গর্বিত হবার সকল উপাদান খুঁজে পায় আমার ভাষায়, আমার সাহিত্য আর সংস্কৃতিতে।
মাতৃভাষা ছাড়াও অন্য ভাষা শেখায় কোনও দোষ নেই, বরং যত বেশি ভাষা আয়ত্ত করা যায় ততই মঙ্গল, ততই লাভ। এটি আমার মাতৃভাষা ও সংস্কৃতির জন্যও কল্যাণকর। তবে শুধু আর্থিক কারণে কিংবা মাইকেল মধুসূদনের ভাষায় “পরধনলোভে মত্ত হয়ে” নিজের মাতৃভাষাকে পদদলিত করে অন্যের ভাষার জন্য প্রাণপাত করা একধরণের কদাচার। এটাকে ব্যক্তিত্বহীন কোনও নষ্টের চরম নষ্টামি বলা যায়। যা ভিক্ষাবৃত্তির মতো ঘৃণার্হ। মাতৃভাষার প্রতি এমন অবহেলাকারীদের জারজ উল্লেখ করে করে সপ্তদশ শতকের কবি আবদুল হাকিম (জন্ম: ১৬২০ - মৃত্যু: ১৬৯০) লিখেছিলেন:
যে সব (জন) বঙ্গেত জন্মি হিংসে বঙ্গবাণী।
সে সব কাহার জন্ম নির্ণয় ন জানি।।
আন্তর্জাতিক ভাষা হিসাবে ইরেজি শেখার আবশ্যকতা অস্বীকার করার কিছু নেই। শুধু ইংরেজি কেন - শিখুন আরবি, হিন্দি, চায়না, ফ্রেন্স এবং ইচ্ছেমতো। তবে তা কিন্তু কখনও নিজের মাতৃভাষাকে পিষ্ট করে নয়। প্রয়োজনে পৃথিবীর সব ভাষা শিখে ফেলুন, এটি কৃতিত্বের। তাতে আপত্তি নেই কিন্তু তা মাতৃভাষাকে অমর্যাদা করে নয়। যে অন্যের সংস্কৃতিকে বুখে ধারণ করার জন্য নিজের সংস্কৃতিকে নিচে ফেলে দেয়, যে অন্যের ভাষা শেখার জন্য নিজের মাতৃভাষাকে ভুলে যায় সে দেশদ্রোহীর চেয়েও ভয়ঙ্কর। তস্করের চেয়েও হেয়।
অনেকে মাতৃভাষাকে অস্পৃশ্য গণ্য করে ইংরেজি বা অন্য কোনও বিদেশি ভাষা শেখার জন্য উঠেপড়ে লাগে। কারণে অ-কারণে ইংরেজি বুলি আওড়ায়, অথচ মাতৃভাষায় কথা বলতে দ্বিধা করে। নিজের ভাষার প্রতি এমন বেহায়াময় আচরণ কোনও বিবেকবান ও শিক্ষিত মানুষের পক্ষে কীভাবে করা সম্ভব তা ভাবতেই লজ্জা হয়।
যারা নিজের মাতৃভাষা ভালো জানেন না, তারা বিদেশি ভাষা কীভাবে ভালো জানবেন? যিনি নিজের প্রতিবেশীকে চেনেন না তিনি কীভাবে অন্য পাড়ার লোকদের চেনবেন? ইংরেজি ভাষায় যে সব বাঙালি অযথা বুলি আওড়ান তারা ভালো ইংরেজি দূরে থাকা, ভালো বাংলাও জানেন না, যেমন জানেন না নিজ-মাতৃভাষা।
মাইকেল মধুসূদন বাংলাকে অবহেলা করে ইংরেজি-প্রেমে উদ্বেল হয়ে ওঠেছিলেন। তবে তিনি ভালো বাংলাও জানতেন, তাই শেষ পর্যন্ত নিজের মাতৃভাষার কদর বুঝতে সক্ষম হয়েছিলেন। তাই এখনও বেঁচে আছেন বাংলাভাষীর অন্তরে, ইতিহাসের পাতায়। ভুল বুঝে যদি ফিরে না-আসতেন কে মনে রখাতেন তাঁকে? এখন যারা এমন করেন তারা কী মাইকেল মধুসূদনের চেয়েও অধিক ইংরেজি জানেন?
অবশ্যই না। তবু কাকাতুয়ার মতো বলে যান গড, ডগ, নাইট - - -।
তারপরও তারা ইংরেজিকে মনে করে ধ্যান-জ্ঞান, বাংলাকে করে অপমান। এর কারণ একটাই, ভিক্ষুকের মতো অর্থলিপ্সা। অর্থের প্রয়োজন আছে কিন্তু তা কখনও ভিক্ষাবৃত্তি করে নয়, শ্রম দিয়ে, মর্যাদা সহকারে মাথা উঁচু রেখে। চায়নারা সারাবিশ্বে ছড়িয়ে কিন্তু নিজদেশে মাতৃভাষার প্রতি অবিচল আস্থায় যেন হিমালয়। তেমন উদাহরণে আনা যায় জাপান, কোরিয়া, ফ্রান্স, সুইজারল্যান্ড, তুরস্কসহ আরও অনেক অনেক জাতি। নিজের মাতৃভাষার প্রতি অবহেলা কেবল বাঙালিদের আচরণেই দেখা যায়। অথচ তারা এ ভাষার জন্য জীবন দিয়েছিলেন। তা হলে তারা মাতৃভাষা প্রতি এমন আচরণ করে জীবন দেওয়ার বদলা নিচ্ছে?
যে আচরণ স্বকীয়তাকে ক্ষুণ্ন করে সে আচরণ কোনও সুস্থ ও বিবেকবান মানুষ কখনও করতে পারে না। যদি উন্নতি নামক আর্থিক সমৃদ্ধির জন্য নিজের মাতৃভাষা, সাহিত্য ও সংস্কৃতিকে তুচ্ছ করার মতো কাজ করতে হয়, তবে সে কাজ আমি কখনও করব না, যদি সারাবিশ্বও এনে দেয়া হয় আমার হাতে, তবুও।
আগে আমার দেশ, আমার ভাষা, আমার সংস্কৃতি। মোদ্দাকথায় আমার অস্তিত্ব, তারপর অন্য কিছু। এগুলোই আমার হৃৎস্পন্দন, অনুক্ষণ জীবন। জীবন না-থাকলে ওগুলো দিয়ে আমি কী করব? আমি তো মানুষ, পশু নয়।
নিজের মাকে অবহেলা করে অন্যের মাকে নিয়ে গভীর মমতায় মগ্ন হয়ে পড়া যেমন ঘৃণার, তেমনি ঘৃণার মাতৃভাষাকে অবহেলা করে অন্যের ভাষা-প্রেমে বিগলিত হয়ে পড়া। এটাকে কেবল ধনী শ্বশুর-শাশুড়ির অর্থের লোভে হতদরিদ্র জন্মদাত্রীকে ভুলে যাওয়া কোনও নর-পিশাচের সঙ্গে তুলনা করা যায়।
এরা বাংলাদেশের স্বাধীনতাযুদ্ধে নীরিহ বাঙালি ও মা-বোনের উপর অত্যাচারী হানাদারের চেয়েও কম নৃশংস নয়। বিশ্বের অমূল্য সম্পদ বাংলা ভাষার নিরূপম বিকাশের জন্য এদের যে কোনও মূল্যে প্রতিহত করা দরকার- আমার আপনার সবার।
Comments
Post a Comment