বাগর্থ কৌতুক : অভিজিৎ অভি- শুবাচ
একটা কৌতুক দেখি-
স্যার: “গাইবান্ধা কোথায়?”
ছাত্র: “গাই গোয়ালঘরের খুঁটিতে বান্ধা।”
এই কৌতুকের মজাটা হল স্যার প্রশ্নে যা বোঝাতে চেয়েছেন, ছাত্র তা না বুঝে অন্য অর্থ বুঝেছে। শিক্ষক গাইবান্ধা জেলার ভৌগোলিক অবস্থান জানতে চেয়েছেন আর ছাত্র বুঝেছে ‘গরু বাঁধা কোথায়?’।
এরকম প্রায়ই হয়। একটা বুঝতে গিয়ে আরেকটা বুঝি। ধরা যাক ব্যাকরণ শিক্ষক জানতে চাইলেন “ধাতু কী?”ছাত্র উত্তর দিল “তাপ ও বিদ্যুৎ সুপরিবাহী মৌলকে ধাতু বলে।”
এখানেও একই সমস্যা। ব্যাকরণে ক্রিয়াপদের ক্ষুদ্রতম অংশকে ধাতু বলে। ব্যাকরণ শিক্ষক তাই জানতে চান। ছাত্র আবার রসায়ন পড়ে একই ‘ধাতু’ শব্দের এক ভিন্ন সংজ্ঞা শিখেছে, সে সেই সংজ্ঞা মনে করে এই উত্তর দিয়েছে। কিন্তু এই ধাতু তো আর সেই ধাতু নয়! ছাত্রদের যে ব্যাকরণের পাশাপাশি ইংরেজি, গণিত, পদার্থবিজ্ঞান, রসায়ন এতকিছু পড়তে হয় তা কি আর ব্যাকরণ শিক্ষক বোঝেন?
এমন কিছু উদাহরণ:
১। বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের ‘কমলাকান্ত’ একটি মজার চরিত্র। একবার সাক্ষ্য দিতে গিয়ে সে আদালতে যায়। সেখানে উকিল তাকে নানা প্রশ্ন করে, আর অপদস্থ হয়। যেমন:
উকিল: তোমার পেশা কী?
কমলাকান্ত: আমার আবার পেশা কী?
উকিল: খাও কি করিয়া?
কমলাকান্ত: ভাতের সঙ্গে ডাল মাখিয়া, দক্ষিণ হস্তে গ্রাস তুলিয়া, মুখে পুরিয়া গলাধঃকরণ করি।
‘ খাও কি করিয়া ’ প্রশ্ন দ্বারা কমলাকান্তের পেশা তথা জীবিকা অর্জনের উপায় কী, উকিল তা জানতে চেয়েছেন। আর কমলাকান্ত নিজের খাদ্যগ্রহণ প্রক্রিয়া মনে করে এই উত্তর দিয়েছে।
২। পথিক : মশাই, একটু জল পাই কোথায় বলতে পারেন ?
ঝুড়িওয়ালা : জলপাই ? জলপাই এখন কোথায় পাবেন ? এ ত জলপাইয়ের সময় নয় ।
এই সংলাপটি সুকুমার রায়ের ‘অবাক জলপান ’ নাটক হতে নেয়া। পথিক বলেছেন পানি পাওয়ার কথা, আর ঝুড়িওয়ালা বুঝল জলপাই!
৩। সভাকবি: ওদের শব্দ আছে বিস্তর কিন্তু মহারাজ অর্থের বড় টানাটানি।
নটরাজ: নইলে রাজদ্বারে আসবে কোন দুঃখে? -রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর।
এখানে সভাকবি ‘অর্থ’ দিয়ে তাৎপর্য বা অন্তর্নিহিত ভাব বুঝিয়েছেন কিন্তু নটরাজ ‘অর্থ’ মানে টাকাপয়সা বুঝেছে।
৪। কখনও মজা করার জন্য ইচ্ছা করেও এমন অন্য অর্থ ধরে নিয়ে উত্তর দেওয়া হয়। কাজী নজরুল ইসলাম তখন গ্রামোফোন কোম্পানীর সঙ্গে যুক্ত। একদিন সেখানে তিনি দোতলায় বসে আছেন, এমন সময় তাঁকে একজন ডাকতে এল,- “কাজীদা, ইন্দুদি(বিখ্যাত গায়িকা ইন্দুবালা) আপনাকে নিচে ডাকছেন।” কাজীদা উত্তর দিলেন “আর কত নিচে নামব ভাই?” এখানে বক্তা নিচে যাওয়া মানে নিচতলায় যাওয়া বুঝিয়েছেন। আর নজরুল নিচে যাওয়া মানে অধঃপাতে যাওয়া অর্থ করে এই মজার উত্তর দিয়েছেন!
৫। আরেকটি কৌতুক দিয়ে শেষ করা যাক-
১ম বন্ধুঃ বন্ধু, তোমার পথের সাথিকে চিনে নিও।
২য় বন্ধুঃ চিনে কেন, আমি তো তোমাকে নিয়ে আমেরিকা যেতেও রাজি।
অলঙ্কারশাস্ত্র অনুযায়ী এই ঘটনাকে বক্রোক্তি বলা হয়।
Comments
Post a Comment