পুরস্কার, পরিষ্কার, তিরস্কার, আবিষ্কার / মোরশেদ হাসান


বানান লিখতে গিয়ে সমস্যায় পড়ে না বা ভুল হয় না এমন মানুষ বোধ করি বিরল। বাংলা ব্যাকরণ ভালো জানা থাকলে অনেক ভুলের হাত থেকে রক্ষা পাওয়া যায়। তবে সবাই ব্যাকরণে সিদ্ধহস্ত হবেন এমনটা আশা করাও বোধ করি ঠিক নয়। ব্যাকরণ অনেকের কাছে ভীতিকর বস্তুও বটে। সুতরাং এক্ষেত্রে কিছু সহজ কৌশল প্রয়োগ করে যদি ভুলের হাত থেকে উদ্ধার পাওয়া যায় তবে তা মনে হয় মন্দ নয়।

আসুন নিচের শব্দগুলো দেখি----
পুরস্কার, পুরষ্কার, পরিস্কার, মনষ্কামনা, আবিস্কার, বহিষ্কার, পরিষ্কার, মনস্কামনা, আবিষ্কার, নমষ্কার, নমস্কার।
এই শব্দগুলোর মধ্যে কোনটি সঠিক আর কোনটি ভুল কীভাবে বের করা যাবে?

এখানে সমস্যাটি হচ্ছে যুক্তবর্ণে (যুক্তাক্ষর উচ্চারণ নয়) ‘স্ক’ হবে নাকি ‘ষ্ক’ হবে। এ নিশ্চয় দারুণ এক যন্ত্রণা। এর মধ্যে যদি বলি এসব বিসর্গ সন্ধির নিয়মে হচ্ছে, আসুন নিয়মটি দেখি----তবে তো স্ট্যাটাস পড়াই অনেকে ছেড়ে দেবেন।
তার চেয়ে সহজ কৌশলে চলে আসি।

প্রথমেই আপনি শব্দগুলোর চেহারা ভালো করে দেখুন। যুক্তবর্ণের ('স্ক' বা 'ষ্ক') ঠিক আগের বর্ণটির দিকে তাকান। এই আগের বর্ণটির সঙ্গে ই-কার বা উ-কার যুক্ত থাকলে ‘ষ্ক’ হবে আর যদি যুক্তবর্ণের সঙ্গে ই-কার বা উ-কার যুক্ত না থাকে তবে ‘স্ক’ হবে।
উদাহরণ না দিলে সহজ লাগছে না; তা-ই না?
আসুন তবে উদাহরণ দেখি।
উপরের প্রথম (পুরস্কার) শব্দটিতে যুক্তবর্ণের আগের বর্ণটি হচ্ছে ‘র’। এই ‘র’ সম্পূর্ণ ফ্রি আছে। অর্থাৎ এই ‘র’-এর সঙ্গে ই-কার বা উ-কার যুক্ত নেই। সুতরাং যুক্তবর্ণটি হবে ‘স্ক’ এবং শুদ্ধ বানান হচ্ছে পুরস্কার।
“পরিস্কার” বানান কি ঠিক আছে? দেখা যাক, যুক্তবর্ণের ঠিক আগের বর্ণটি হচ্ছে ‘র’। এই ‘র’-এর সঙ্গে যুক্ত আছে ই-কার; সুতরাং যুক্তবর্ণটি হবে ‘ষ্ক’। এতে শুদ্ধ বানানটি হচ্ছে পরিষ্কার  অশুদ্ধ বানান হচ্ছে পরিস্কার।

এভাবে শুদ্ধ বানান হচ্ছে পুরস্কার, পরিষ্কার, মনস্কামনা, আবিষ্কার, বহিষ্কার, নমস্কার।
এবার নিচের অংশটুকু যাঁরা ব্যাকরণের নিয়ম জানতে চান তাঁদের জন্য।
বিসর্গ সন্ধির নিয়ম অনুসারে,
‘অ/আ’ স্বরধ্বনির পরে বিসর্গ (ঃ) থাকলে এবং তারপরে অঘোষ কণ্ঠ্য বা ওষ্ঠ্য ধ্বনি (ক, খ, প, ফ) থাকলে ঃ এর স্থানে অঘোষ দন্ত্য শিশ ধ্বনি ( স ) হয়।
অর্থাৎ ‘অ/আ’-র পরে ‘ঃ’ থাকলে এবং তারপরে ক/খ/প/ফ থাকলে ‘ঃ’- এর জায়গায় 'স' হয়।

‘অ/আ’ ছাড়া অন্য কোনো স্বরধ্বনির পরে বিসর্গ (ঃ) থাকলে এবং তারপরে অঘোষ কণ্ঠ্য বা ওষ্ঠ্য ধ্বনি (ক, খ, প, ফ) থাকলে ‘ঃ’- এর স্থানে অঘোষ মূর্ধন্য শিশ ধ্বনি ( ষ ) হয়।
অর্থাৎ ‘অ/আ’-র পরে 'ঃ' থাকলে এবং তারপরে ক/খ/প/ফ থাকলে ঃ এর জায়গায় 'ষ' হয়।
যেমন :
পুরঃ + কার = পুরস্কার
তিরঃ + কার = তিরস্কার
নমঃ + কার = নমস্কার
মনঃ + কামনা = মনস্কামনা।
আবার,

আবিঃ + কার =আবিষ্কার
বহিঃ + কার = বহিষ্কার
নিঃ + পাপ = নিষ্পাপ
চতুঃ + কোণ = চতুষ্কোণ
চতুঃ + পদ = চতুষ্পদ।

ঘোষ আর অঘোষ ধ্বনি কাকে বলে?
যে সকল ধ্বনি উচ্চারণের সময় স্বরতন্ত্র অণুরণিত হয় অর্থাৎ গলার মাঝখানের উঁচু অংশে হাত দিলে কম্পন অনুভূত হয় তাদেরকে ঘোষ ধ্বনি বলে। যেমন : গ, ঘ, জ, ঝ এগুলো ঘোষ ধ্বনি।

আর যে সব ধ্বনি উচ্চারণের সময় স্বরতন্ত্র অণুরণিত হয় না তাদেরকে অঘোষ ধ্বনি বলে।

যেমন : ক, খ, চ, ছ এগুলো অঘোষ ধ্বনি।

Comments

Popular posts from this blog

উপলক্ষ ও উপলক্ষ্য

পার ও পাড় / ড. মোহাম্মদ আমীন

তৎসম চেনার কৌশল / ড. মোহাম্মদ আমীন