হালনাগাদ-করা বাংলা শব্দভাণ্ডার চাই / খুরশেদ আহমেদ

হালনাগাদ-করা বাংলা শব্দভাণ্ডার চাই!
বাংলা ভাষায় প্রতিনিয়ত নতুন শব্দ একদিকে এই ভাষার ভিতর থেকে তৈরি হচ্ছে অন্যদিকে বাইরে থেকে এসে ঢুকছে। এগুলো সামাল দেওয়া, একটা শৃঙ্খলার মধ্যে আনা বাংলার অভিভাবকদের, অভিধান প্রণেতাদের, বাংলা একাডেমির কাজ।
আমি দেখি, বিভিন্ন ভাষার অভিভাবকেরা প্রতি বছর সদ্য-স্বীকৃত  -আত্তীকৃত নতুন শব্দের তালিকা প্রকাশ করেন। Oxford English Dictionary প্রতি বছর তাদের শব্দভাণ্ডার চার বার হালনাগাদ করে। ২০১৫-র সেপ্টেম্বরে তাদের অভিধানে শত শত শব্দ, পদবন্ধ (phrases) অর্থ (sense) অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। তাদের পরবর্তী আপডেট আসছে এই ডিসেম্বর ২০১৫-তে।সে তুলনায় আমাদের বাংলা প্রায়-অভিভাবকহীন, যেন খোলা রাস্তায় রোদ-বৃষ্টি-শীত-বসন্তে আপন শক্তিতে টিকে-থাকা টোকাই!
বাংলা একাডেমি ব্যবহারিক বাংলা অভিধানটির প্রথম প্রকাশ : স্বরবর্ণ অংশ – ১৯৭৪, ব্যঞ্জনবর্ণ অংশ – ১৯৮৪। [লক্ষ করুন, মাঝখানে ১০ বছর।]
দ্বিতীয় সংস্করণ : ১৯৯২। [মাঝখানে ৮ বছর।]
পরবর্তী সংস্করণ - যাকে বাংলা একাডেমি তৃতীয় সংস্করণ বলা থেকে সংগত কারণেই বিরত থেকেছে, বলেছে পরিমার্জিত সংস্করণ – এর প্রকাশ : ২০০০। [মাঝখানে আবার ৮ বছর।]
এই পরিমার্জিত সংস্করণেরই অষ্টাদশ পুনর্মুদ্রণ : ২০১৫।
অর্থাৎ ১৯৭৪ থেকে ২০১৫ – এই ৪১ বছরে – আমরা পেয়েছি এই অভিধানটির দুটি সংস্করণএবং একটি পরিমার্জিত সংস্করণ। তৃতীয় সংস্করণ কবে বের হবে আমরা কেউ জানি না।
ভাষা নিয়ে আমাদের – আপামর মানুষের – দরদ  ভূমিকা ১৯৫২ থেকে ১৯৭১ হয়ে আজও প্রশ্নাতীত; বাংলার অভিভাবকদের ভূমিকা বোধ করি এই একটি অভিধানের প্রকাশনার ইতিহাসের মধ্য দিয়েই বিবৃত।
বাংলার অভিভাবকদের আমি গতিশীল দেখতে চাই! মুদ্রিত না-হোক, অনলাইন আপডেট চাই বাংলা শব্দভাণ্ডারের – বছরে চার বার না-হোক, অন্তত এক বার!
শব্দসংক্রান্ত অনলাইন অন্তর্বতীকালীন বিজ্ঞপ্তি থাকতে পারে অনেক বার এবং যখনই দরকার।
এ কাজের জন্য সরকার প্রয়োজনীয় বাজেট বরাদ্দ করে  লোকবল নিয়োগ করে আপামর মানুষের আকাঙ্ক্ষার প্রতিধ্বনি করবেন বলে আশা করি।
সরকারের সক্রিয় (proactive) উদ্যোগ না থাকলে বাংলা অভিধানের আগামি ৪১ বছরের ইতিহাস গত ৪১ বছরের ইতিহাস থেকে খুব বেশি উন্নততর হবে বলে মনে করার কোনো কারণ দেখি না।

Comments

Popular posts from this blog

উপলক্ষ ও উপলক্ষ্য

পার ও পাড় / ড. মোহাম্মদ আমীন

তৎসম চেনার কৌশল / ড. মোহাম্মদ আমীন