শুবাচের জন্য লেখা / আবীর মাহমুদ


শুবাচে কিছু লিখবো বলে সাহসে কুলায় না৷ এখানে জ্ঞানী-গুণীদের ভীড়৷ তবু কয়েকটি কথা বলতে চাই, যদি এডমিনের সুনজরে পড়ে আলোর মুখ দেখে এতটুকু আশা…
একটা বিষয় লক্ষ্য করেছি, শুবাচে শুদ্ধবানান নিয়ে আমরা সবাই আগ্রহ নিয়ে কথা বলি, জানতে চাই, জানাতে চাই৷
ক্ষেত্র বিশেষে বাঙলা একাডেমিকে আমরা প্রতিপক্ষ মনে করি৷ এরজন্য দায় আমাদের একার নয়, একাডেমিরও রয়েছে৷
ভারতীয় ভাষা সমূহের মধ্যে বাংলা এবং সংস্কৃতের ঘনিষ্ঠতা সবচেয়ে বেশি৷ এতকাল বাংলাকে সংস্কৃতের দূহিতা মনে করলেও আজকাল কেউ কেউ এতে প্রশ্ন তুলেছেন৷ বাংলা সংস্কৃতের দূহিতা নয়, বাংলার সংস্কারিতরূপই সংস্কৃত৷
বাংলা গদ্যের প্রাথমিক যুগে আরেকটি সংস্কারিত বাংলার জন্ম হয়েছিল, সাধু ভাষা৷ বেচারা বাঁচেনি বেশি দিন৷ নতুন সংস্কারিতরূপ চলিত ভাষাই এখন সজীব৷
আবার শুরু হয়েছে প্রমিত বাংলা নামে নতুন সংস্কার৷ এই সংস্কারের পক্ষে বিপক্ষে মতের অভাব নেই৷ মত ছাড়া আবেগও আছে৷ দীর্ঘদিনের গরুকে হঠাৎ গোরুরূপে দেখে অনেকেই চমকে উঠেছেন, অনেকে ত্যক্ত-বিরক্ত হয়েছেন, আমরা ভুলে গেছি, গোরু বেচারার রূপ খর্ব করেই আমরা গরু করেছি৷
বাঙলা একাডেমির গবেষণাকে স্বাগত জানাই৷ তবু কয়েকটি বিষয়ে একাডেমির সিদ্ধান্ত মানতে বিভ্রান্তিতে পড়ছি৷
প্রথমতঃ, তৎসম অতৎসম শব্দ৷
দ্বিতীয়তঃ, দেশি ও বিদেশি শব্দ৷
তৃতীয়তঃ হ্রসস্বর, দীর্ঘস্বর বিভ্রান্ত্রি৷

তৎসম, অতৎসম, দেশি, বিদেশি শব্দ চিনার উপায় কি? বাংলাকে কি আবারও ব্রাহ্মণ্য সংস্কৃতের মতো প্রমিত বানানো হচ্ছে? শব্দের ব্যবহারকারি সকল মানুষ, কিন্তু সকলে শব্দের বিভাগ জ্ঞাত নয়৷ তাহলে কি বাংলা ভাষা আবারও পণ্ডিতনির্ভর ভাষা হয়ে যাচ্ছে? যদি এমন হয়, ধর্মীয় কারণে সংস্কৃত কয়েক হাজার বছর টিকে থাকলেও বাংলার অপমৃত্যু হবে৷ বাংলা কোন ধর্মের জন্ম দিতে পারেনি৷
ণত্ব ও ষত্ব বিধানমতে ট-বর্গের আগে ণ ও ষ হবে৷ তাহলে কণ্ঠ, ষষ্ঠের মতো খ্রিষ্ট লিখলে চলে৷ সহজ একটা কথাকে কঠিন করা হয়েছে, বিদেশি শব্দে ণ ও ষ হবে না৷ বলুন তো বিদেশি শব্দ চিনার উপায় কী?
আবার বলা হলো, ণ ও ষ শুধুমাত্র সংস্কৃত শব্দে ব্যবহৃত হবে৷ বলুন তো সংস্কৃত বা তৎসম শব্দ চিনার উপায় কী?
আবার বলা হলো ঈ, ঊ আমরা উচ্চারণ করি না, এগুলো বাদ৷ ঋ-র বদলে রি লিখবো, তাও বাদ, অ আর ও প্রায় একই, দুটোর একটি বাদ৷ ঐ, ঔ অই অউ লিখলে হয়ে যাবে এদুটোও বাদ৷
ঙ, ঞ, ঁ তিনটার কোন কাজই নেই, নাহলেও চলে, বাদ৷ ণ, ন দুটোর দরকার নেই, একটা বাদ৷ ষ, শ, স তিনটি সবসময় শ-র মতো উচ্চারণ তাই ষ, স বাদ৷ র, ড়, ঢ় আমড়া এখন আমড়া চাষ করি না, তিন থাকার দরকার নেই, একটা থাকবে৷
জ, ঝ, য তিনটার দরকার নেই৷ একটা থাকবে৷
ক্ষ চাই না, খ আছে৷
ঘ, ছ, ঢ ধ, ফ, ভ চাই না গ, চ, ড দ, প, ব আছে৷ বাদ, সব বাদ৷
থাকলো কী? ঘও নেই, ঘোড়াও নেই, ঘোড়ার ডিমও নেই৷
অথচ, বানান উচ্চারণানুগ হতে পারে না৷ আমি হানি বলি, হিমড়া বলি, আমার উচ্চারণ অনুযায়ী এটাই শুদ্ধ আপনি মানবেন না কেন?
ইংরেজিসহ অনেক ভাষায় বানানে অপ্রয়োজনীয় বর্ণ ব্যবহৃত হয়৷ কই তারাতো নাপিতগিরি করেনি সেখানে, আপনি কেন খুর-কাঁচি নিয়ে উঠে পড়ে লেগেছেন?

Comments

Popular posts from this blog

উপলক্ষ ও উপলক্ষ্য

পার ও পাড় / ড. মোহাম্মদ আমীন

তৎসম চেনার কৌশল / ড. মোহাম্মদ আমীন