উপলক্ষ্য = উপ + লক্ষ্য; লক্ষ্য এর উপ বা সহকারী যে; আশ্রয়, অবলম্বন, প্রয়োজন, উদ্দেশ্য, অভিপ্রায়, ব্যাপদেশ, ছল, ছুতা, occasion বা আয়োজন অর্থে প্রচলিত। বাংলা একাডেমির সাম্প্রতিকতম অভিধানে 'উপলক্ষ' শব্দের কোনো অস্তিত্ব নেই; বরং স্বাধীন ভুক্তি হিসেবে 'উপলক্ষ্য' শব্দটিকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। উদ্দেশ্য ও উদ্দেশ শব্দের মতো লক্ষ, লক্ষ্য, উপলক্ষ ও উপলক্ষ্য শব্দের বানান ও প্রয়োগ নিয়েও বিভ্রাট দেখা যায়। প্রকৃতপক্ষে ‘চক্ষু বা মনশ্চক্ষুর’ দ্বারা কোনও কোনও বস্তু বা বিষয়কে নিজের মধ্যে নেওয়া বা লওয়ার কাজটি দিশাগ্রস্ত থাকে যাতে, তাকে লক্ষ বলা হয়। এ লক্ষ যাতে থাকে সেটিই হচ্ছে লক্ষ্য। কলিম খান ও রবি চক্রবর্তীর মতে, বাংলায় দর্শন করাকে কিছুটা পরিবর্তন করে যে যুক্তিতে ‘ দেখা’ করা করে নেওয়া হয়েছে, একই যুক্তিতে লক্ষ করাকে ‘লখ’ বা ‘লখি’ করে নেওয়া হয়েছে। এই ‘খ’ প্রকৃতপক্ষে ‘ক্ষ’-এর একটি রূপ। দর্শন দিশগ্রস্ত হয়ে গেলে তাকে ‘ দেক্ষা’ বলাই যুক্তিসঙ্গত। সে সুবাদে চক্ষু বা মনশ্চক্ষু মারফত নিয়ে আসা হল ‘লক্ষ’; এবং সে লক্ষ করা বস্...
পার ও পাড় ‘পার’ ও ‘পাড়’ অনেক সময় একই অর্থ বোঝালেও প্রায়োগিক ধরন ভিন্ন। নদী, সমুদ্র ইত্যাদির তীর বোঝাতে পার কিন্তু পুকুর, দিঘি, সরোবর ইত্যাদির ‘তীর’ অর্থে পাড় ব্যবহার করা হয়। আবার ‘পার’ অর্থ নদীর বিপরীত তীর (নদীর এ-পার ও-পার)। নিষ্কৃতি (পার পাওয়া) অর্থেও ‘পার’ ব্যবহৃত হয়। যেমন: অনেক কষ্টে বিপদ থেকে পার পাওয়া গেল। আবার প্রান্তদেশ(শাড়ির পাড়) বোঝাতেও ‘পাড়’ ব্যবহৃত হয়। তবে বৃহৎ সাধারণত বৃহৎ জলাশয়ের তীর ‘পার’ কিন্তু ছোট জলাশয়ের তীর হচ্ছে ‘পাড়’। যেমন: নদীর পার, সাগরের পার কিন্তু পুকুরের পাড়। আসলে কী এ ব্যাখ্য যথার্থ? পার সংস্কৃত শব্দ। পার বলতে বোঝায় নদীর বিপরীত তীর বা কূল। এছাড়াও শব্দটি আরও বিভিন্ন অর্থ প্রকাশে ব্যবহৃত হয়। যখন বলা হয়, ‘গগন পারে সূর্য হাসে’; তখন এর অর্থ প্রান্তভাগ। যখন বলা হয়, ‘মাঠের পারে মাঠ, তার পারে হাট’; তখন পার অর্থ বোঝায় সীমানা। যদি বলা হয়, ‘কৌশলটা কাজে লাগলে পার পাওয়া যাবে’; এখানে পার অর্থ প্রতিকার পাওয়া। আবার নিষ্কৃতি, উদ্ধার ,রেহাই প্রভৃতি অর্থেও পার লেখা হয়। যেমন: ‘দয়াল পার কর আমারে।’ এখানে পার অর্থ পরিত্রাণ। ‘সপ্ততল ভেদ করি বাণ হল পার, শত্রুরা ...
ঘোড়ায় চড়িয়া মর্দ হাঁটিয়া চলিল ড. মোহাম্মদ আমীন "ঘোড়ায় চড়িয়া মর্দ হাঁটিয়া চলিল, কিছু দূর গিয়া মর্দ রওনা হইল। ছয় মাসের পথ মর্দ ছয় দিনে গেল! লাখে লাখে সৈন্য মরে কাতারে কাতার, শুমার করিয়া দেখি পঞ্চাশ হাজার।" এটি একটি বহুল প্রচলিত কবিতা। মধ্যযুগে লিখিত কবিতাটির বিষয়বস্তুকে অনেক সাংঘর্ষিক মনে করেন। তাদের যুক্তি, নইলে ঘোড়ায় চড়ে মর্দ কীভাবে হেঁটে চলল। কিন্তু নিয়মানুসারে মর্দকে ঘোড়ায় চড়ার পর হেঁটে চলতেই হবে। তারপর কিছুদূর গিয়ে রওয়ানা হতে হবে। নইলে পরীক্ষা না করে বিমান ছাড়ার মতো বোকামি হবে। কোনো পাইলট এমন করবে বলে মনে হয় না। কবিতায় বর্ণিত মর্দ বা মরদ ফারসি শব্দ। এর আভিধানিক অর্থ পুরুষ, পতি, যুবক, বীর, পুরষোচিত গুণসম্পন্ন, পুরুষজাতীয় প্রভৃতি। তবে প্রাচীন বাংলা কাব্যে শব্দটি মূলত বীর ও পুরুষোচিত গুণসম্পন্ন মানুষ প্রকাশে ব্যবহৃত হতো। এই বীর যে কেবল পুরুষ হবে তা ঠিক না।সুলতানা রাজিয়া বীর ছিলেন, পুরষোচিত গুণসম্পন্ন ছিলেন।তবে অধিকাংশ বীর ও ঘোড়সওয়ার পুরুষ ছিল। তাই মর্দ ও পুরুষ শব্দ অনেকটা সমার্থক হয়ে উঠেছিল। যুদ্ধক্ষেত্রের কাব্যিক বর্ণনায় মর্দ শব্দটি বীর প্রকাশের জন্য ব্যবহার ক...
Comments
Post a Comment