ভুলে ভর্তি প্রাথমিকের বই / ড. মোহাম্মদ আমীন
‘সংকল্প’ জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের লেখা একটি বিখ্যাত কবিতা। পঞ্চম শ্রেণির পাঠ্যপুস্তকের বাংলা বইয়ে অন্তর্ভুক্ত এ কবিতাটিতে পাঁচটি ভুল করা হয়েছে। যেমন : প্রথম লাইনে আছে, ‘থাকব না কো বদ্ধ ঘরে’। এটি হবে ‘থাকব নাকো বদ্ধ ঘরে’। ‘পাতাল ফেড়ে নামব নিচে’ -এর স্থলে হবে, ‘পাতাল ফেড়ে নামব আমি’। ‘উঠব আবার আকাশ ফুঁড়ে’ বাক্যাংশের স্থলে হবে, ‘উঠব আমি আকাশ ফুঁড়ে।’ বিশ্বজগৎ-এর মাঝখানে হাইফেন (-) দেওয়া হয়েছে। অথচ একই বইয়ে এর দুই পৃষ্ঠা পরে হাইফেন ছাড়া বিশ্বজগৎ লেখা হয়েছে।
তৃতীয় শ্রেণির বাংলা পাঠ্যপুস্তকে কবির নাম ‘কুসুমকুমারী দাশ’-এর ‘আদর্শ ছেলে’ কবিতায় কয়েকটি লাইন বিকৃত করে তোলা হয়েছে। যেমন : কবিতার প্রথম লাইনে বলা আছে, ‘আমাদের দেশে সেই ছেলে কবে হবে’। মূল কবিতা অনুযায়ী এটা হবে, ‘আমাদের দেশে হবে সেই ছেলে কবে’। কবিতাটির ‘মানুষ হইতে হবে’ বাক্যাংশ পাল্টে লেখা হয়েছে ‘মানুষ হতেই হবে’। এক জায়গায় ‘চায়’ কে ‘চাই’ লেখা হয়েছে। কবিতায় কবির লেখা আরও কয়েকটি শব্দ বদলে দেওয়া হয়েছে। একই বইয়ে ‘আমাদের গ্রাম’ গল্পের অনুশীলনীতে ‘গাঁয়ের’ শব্দটি ‘গায়ের’ লেখা হয়েছে। দ্বিতীয় শ্রেণির বাংলা বইয়ে লেখা হয়েছে ‘ধরনী’। শব্দটিতে দন্ত্য-ন স্থলে মূর্ধন্য-ণ হবে।
পঞ্চম শ্রেণির বাংলা পাঠ্যপুস্তকে কাজী নজরুল ইসলামের জন্মতারিখ লেখা হয়েছে ২৫ মে, প্রকৃতপক্ষে এটি হবে ২৪ মে। সেখানে আগস্ট বানানে ‘ষ্ট’ দেওয়া হয়েছে। অথচ শুদ্ধ ও প্রমিত হচ্ছে ‘স্ট’। একই বইয়ে জসীমউদ্দীনের নামের মাঝখানে স্পেস দেওয়া হয়েছে, যা অশুদ্ধ। সুকুমার রায়ের পরিচিতি অংশে জন্মসাল দেওয়া হয়েছে কিন্তু তিনি কোথায় জন্মগ্রহণ করেছেন, তা উল্লেখ করা হয়নি। একই বইয়ের ৪০ পৃষ্ঠায় কান্তজির মন্দির নির্মাণের সাল ১৯৫২ লেখা হয়েছে। প্রকৃতপক্ষে এটা হবে ১৭৫২।তৃতীয় শ্রেণির পাঠ্য ‘বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয়’ বইয়ের ৫৮ পৃষ্ঠায় ‘আমাদের জাতির পিতা’ শীর্ষক লেখায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের মায়ের নাম লেখা হয়েছে ‘সায়েরা বেগম’। এটি ভুল, শুদ্ধ হবে ‘সায়েরা খাতুন’।
প্রথম শ্রেণির পাঠ্যবইয়ে বেশ কয়েকটি সামঞ্জস্যহীন ছবি রয়েছে। তৃতীয় পৃষ্ঠায় একটি শ্রেণিকক্ষের ছবি দেওয়া আছে। প্রতিটি শিশুর সামনে ব্যাগভর্তি বইয়ের স্তূপ। প্রথম শ্রেণির একজন শিক্ষার্থীর সামনে এত বই থাকার কথা নয়। ২০ পৃষ্ঠায় পৃষ্ঠায় বলা আছে, ‘মগ ডালে ময়না দোলে’। কিন্তু ময়না পাখিটিকে মগডালে নয়, গাছটির মাঝামাঝি দেখানো হয়েছে। ৩৬ পৃষ্ঠায় শিশুর হাতে বন্দুক দেওয়া আছে, সে শিকারে যাচ্ছে। একদিকে বন্দুক, আরেকদিকে শিকার। দুটি বিষয় প্রথম শ্রেণির শিশুর উপযোগী কি না, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
Comments
Post a Comment