HEART লিখে সত্যি “HURT” করা হলো / শাহজাহান চাকলাদার
“HEART” লিখে সত্যিই তো “HURT” করা হলো
ভাষার ইতিহাস বর্ণাঢ্য। অর্থবোধক বোধগম্য ‘শব্দ’ সমাজ-সংযোগের ক্ষেত্রে একদিনে/একবছরে তৈরি হয় নি। অসংখ্য শব্দ আমরা নিত্যকথনে ব্যবহার করি যার উত্পত্তি/শুরু নিয়ে ভাবি না। ‘প্রচলিত’ বিধায় মেনে নিই। ভূমধ্যসাগরের এপার-ওপারে সভ্যতার
বিকাশের যে প্রাচীন ইতিহাসের কিছু পাঠ আমরা পাই সেখানে গ্রিক-রোমান শব্দের প্রাধান্য দেখতে পাই, যে প্রাধান্য/প্রভাব আজও প্রায় অর্ধবিশ্ব-সমাজে সপ্রতাপ সচল।
সম্প্রতি টেলিভিশনে/পত্রিকায়/বদনবহিতে পাঠ্যপুস্তকবিষয়ক আলোচনায় তোতা পাখির বুলি শুনছি “এনসিটিবি”। এটি কোন্ ধরনের “টিবি”? আমার ঘোরতর আপত্তি এই “আদ্যাক্ষর” সংকট নিয়ে। আমরা নিম্নোক্ত ‘অ্যাক্রোনিম’(লাতিন/রোমান)-এর সাথে কমবেশি পরিচিত।
বাউবি (বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়)।
রাজউক (রাজধানী উন্নয়ন কতৃপক্ষ)।
উনিক (উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা)
ঢাবি (ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়) ইত্যাদি ইত্যাদি।
গোটা পৃথিবী জুড়েই অ্যাক্রোনিমের প্রচলন আছে। তবে লেখ্য ভাষার পরিচর্যার কারণে সেসব স্ব স্ব দেশের রাষ্ট্রভাষাতেই প্রচলিত। ‘এনসিটিবি’ রোমান/গ্রিকদের মতো অতি প্রাচীন স্থাপনা/আবিষ্কার নয় যে, তার জন্য ‘রোমান আদ্যাক্ষর’ অপরিত্যাজ্য হয়ে গেল! এর সাথে আন্তর্জাতিক যোগটাই বা কতটুকু? এই নাম পরিবর্তন করা উচিত।
২০১৭-এর নিম্ন ও মাধ্যমিক উভয়স্তরের পাঠ্যপুস্তকের ভুল নিয়ে উষ্ণালোচনা চলছে। জেনে হতবাক হয়ে গেছি। কী করে এসব হয়? কিন্তু দুঃখবোধটা কয়েকগুণ বাড়লো যখন পণ্ডিত/বুদ্ধিমান/উচ্চকণ্ঠ-শিক্ষকের আলোচনায় ভুল শব্দ ব্যবহার ও উচ্চারণ শুনি। তাদের হাতেই পরিশুদ্ধ হবে ভুল? এক একজন আঞ্চলিক কথন/বিকৃতি থেকে মুক্ত হতে পারলেন না এখনও। ‘করতেছি’, ‘বলতেছে’- সামাজিক আলোচনায় এসব কী? এসবের “অজ্”(ছাগ/মেষ) তো গাছে উঠবেই! একজন জানালেন অ-তে ‘অজো’ ছাড়া অন্য শব্দ দুর্লক্ষ্য! দুর্বল যুক্তি। সব আলোচকই উচ্চারণ করলেন ‘অজো’। এটি যথার্থ নয়। প্রাথমিকের শিক্ষার্থীরা তাহলে কী শিখবে? একজন বয়সলব্ধ শ্রোতা টেলিফোনে জানালেন ‘অলি’ তো ‘অজো’র চাইতে শোভন শব্দ। তিনি শব্দটি জানেন, উচ্চারণটি জানেন না। ‘অলি’র আর ‘অজ্’-এর “অ” অভিন্ন নয়। আর ‘ও’ দিয়ে যা বলা হয়েছে তাতে ভাবতে অবাকই লাগে। ‘বাংলা’ কি এতই কাঙাল?
বানান? ওরেব্বাপ্! বাংলাতেই যত কষ্ট। এখনও ‘kn’/’tion’/’sch’/’ch’ ইত্যাদির মূল থেকে ইংরেজরা সরতে পারলো না। শব্দের/বানানের ক্ষেত্রে অদেখা/অচেনা/অলেখা প্রচলন-এর বিরোধিতা ঠিক নয়। বিশ্বব্যাপী ভাষার উত্কর্ষের জন্য চেষ্টা ও মুদ্রণযন্ত্রের সহজ ব্যবহারের কারণে ভাষা/শব্দ সংস্কার হতেই পারে এবং তা হতে হবে যুক্তিসিদ্ধ। বাংলা একাডেমি করেছেও অনেকখানিই। বাকিটা নতুন প্রজন্ম দেশস্বার্থে/শিক্ষাস্বার্থে করবে বলেই বিশ্বাস করি। তবে তা হতে হবে সুস্থ, সুঠাম।
Comments
Post a Comment