মূর্ধন্য / খুরশেদ আহমেদ- শুবাচ
১। 'মূর্ধন্য’ মানে ‘মূর্ধা স্পর্শ করে উচ্চার্য'। এখন, প্রশ্ন, মূর্ধা বলতে বাগ্যন্ত্রের ঠিক কোন স্থানটিকে বুঝব?
২। বাংলা বর্ণমালা থেকে আমরা জানি ও চিনি─‘মূর্ধন্য’ বিশেষণে বিশেষিত বর্ণ─'মূর্ধন্য ণ' ও 'মূর্ধন্য ষ'।
৩। বাংলা একাডেমি প্রমিত বাংলা ব্যবহারিক ব্যাকরণ (প্রথম প্রকাশ: মাঘ ১৪২০/জানুয়ারি ২০১৪) থেকে আমরা জানতে পারি:
ট ঠ ড ড় ঢ ঢ় ধ্বনিগুলো উচ্চারণ-স্থান অনুযায়ী মূর্ধন্য।
ওখানে আবিষ্কার করে অবাক হই, এই মূর্ধন্য ধ্বনিগুলোর মধ্যে 'মূর্ধন্য ণ' ও 'মূর্ধন্য ষ' নেই,
যদিও ‘মূর্ধন্য ণ’ ও ‘মূর্ধন্য ষ’ তাদের পরিচয়-জ্ঞাপক নামের মধ্যেই ‘মূর্ধন্য’ তকমাটি বয়ে চলেছে।
৪। বাংলা একাডেমি আধুনিক বাংলা অভিধান [প্রথম প্রকাশ ফেব্রুয়ারি ২০১৬] অনুযায়ী 'মূর্ধন্য’ ও ‘মূর্ধা’-র অভিধার্থ:
'মূর্ধন্য /মুর্ধোন্নো/ [স. মূর্ধন্+য] বিণ. জিহ্বার অগ্রভাগদ্বারা মূর্ধা স্পর্শ করে উচ্চার্য।'
এবং
‘মূর্ধা /মুর্ধা/ [স. মুহ্+অন্] বি. মস্তক, মাথা।’
৫। বাংলা একাডেমি আধুনিক বাংলা অভিধানে 'মূর্ধন্য’ ও ‘মূর্ধা’ দুটি অব্যবহিত সন্নিহিত ভুক্তি; কিন্তু, আমার সমস্যা, এই অভিধানে-দেওয়া ‘মূর্ধা’-র অভিধার্থের সাহায্য নিয়ে এই অভিধানেই-দেওয়া ‘মূর্ধন্য’-এর অভিধার্থ আমি বুঝতে পারছি না।
৬। যে-মূর্ধা স্পর্শ করে মূর্ধন্য ধ্বনি উচ্চারণ করার কথা ‘মূর্ধন্য’ ভুক্তির অভিধার্থে বলা হয়েছে, তা নিশ্চয়ই ‘মস্তক’ বা ‘মাথা’ নয়, যদিও আধুনিক বাংলা অভিধানে ‘মূর্ধা’-র অভিধার্থ বলা হয়েছে কেবলই ‘মস্তক, মাথা’, অন্য কিছু নয়।
৭। বাংলা একাডেমি ব্যবহারিক বাংলা অভিধানও [পরিমার্জিত সংস্করণ ডিসেম্বর ২০০০-এর অষ্টাদশ পুনর্মুদ্রণ: মাঘ ১৪২১/জানুয়ারি ২০১৫], একইভাবে, অব্যবহিত সন্নিহিত দুটি ভুক্তিতে লিখেছে:
'মূর্ধন্য [মুর্ধোন্নো] বিণ. ১ মস্তকজাত। ২ মূর্ধায় উচ্চার্য বর্ণসমূহ ঋ ট ঠ ড ঢ ণ র ষ। ৩ শ্রেষ্ঠ; মোড়ল। {স. মূর্ধন্+য(যৎ)}’
এবং
‘মূর্ধা [মুর্ধা] বি. মস্তক, মাথা। {স. মুহ্+অন্(কনিন্)}’।
৮। স্পষ্টতই, মূর্ধন্য বর্ণের উচ্চারণ-স্থান ‘মূর্ধা’ বুঝতে বাংলা একাডেমি ব্যবহারিক বাংলা অভিধানও আমাকে সাহায্য করছে না।
৯। ‘মূর্ধা’ বুঝতে আমি কিছুটা সাহায্য পাচ্ছি বাংলা একাডেমি প্রমিত বাংলা ব্যবহারিক ব্যাকরণের ‘মূর্ধন্যব্যঞ্জন’ শীর্ষক অনুচ্ছেদ থেকে, মূর্ধন্যব্যঞ্জনের সংজ্ঞায়, যেখানে বলা হয়েছে:
“দন্তমূলের পিছনে শক্ত তালুর উচ্চতম স্থানটি, যেটি মূর্ধা নামে পরিচিত, জিহ্বাশীর্ষ স্পর্শ করলে ধ্বনিউৎপাদক বাতাসের নির্গমন বাধা পেয়ে যে ব্যঞ্জনধ্বনি উচ্চারিত হয় তা-ই মূর্ধন্যব্যঞ্জন নামে পরিচিত।”
ওই অনুচ্ছেদে আরও বলা হয়েছে:
“বাংলায় মূর্ধন্যব্যঞ্জনের সংখ্যা ছয়─
ট্ ... টাকা ...
ঠ্ ... ঠেকা ...
ড্ ... ডাক ...
ঢ্ ... ঢাক ...
ড়্ ... বড়ো ...
ঢ়্ ... মূঢ় ...”
তবে ওই অনুচ্ছেদের লোচন-বিস্ফারক যে-বক্তব্যটি আমাকে মনে করিয়ে দিয়েছে বাংলা বাগ্বিধি ‘কানা ছেলের নাম পদ্মলোচন’, তা এই:
“বাংলা বর্ণমালায় 'মূর্ধন্য ণ' হিসাবে যে বর্ণটি উপস্থিত তার কোনোরকম মূর্ধন্য উচ্চারণ হয় না, উচ্চারণে সেটি দন্তমূলীয় ‘ন’ এর মতো। অন্যভাবে বলা যায়, বাংলা উচ্চারণে একটি মাত্র ‘ন’ আছে, সেটি দন্তমূলীয়।
“বাংলা বর্ণমালায় ‘মূর্ধন্য ষ’-রও কোনো মূর্ধন্য উচ্চারণ হয় না─একক উচ্চারণে এটি ‘তালব্য শ’ এর মতো।”
১০। ‘দন্তমূলের পিছনে শক্ত তালুর উচ্চতম স্থানটি’-কে মূর্ধা বলে চিহ্নিত করেছে বাংলা একাডেমি প্রমিত বাংলা ব্যবহারিক ব্যাকরণ; কিন্তু বইটির একই অনুচ্ছেদে দেওয়া আছে ‘চিত্র ৫.৪ : মূর্ধন্য ধ্বনির উচ্চারণে বাগ্যন্ত্রের অবস্থান’, যে-ছবিতে-দেখানো জিহ্বাশীর্ষটি ‘দন্তমূলের পিছনে শক্ত তালুর উচ্চতম স্থানটি’ স্পর্শ করছে বলে আমার মনে হয় না।
১১। https://flipboard.com/…/a-mJzolTIYR4iUGF9ml0zlSQ%3Aa%3A1593…─আন্তর্জালে এই লিংকে বাগ্যন্ত্রের ছবিতে দেখানো হয়েছে ও বলা হয়েছে ‘মূর্ধা─কঠিন তালুর পশ্চাৎ ভাগ (Cerebrum)’; আবার, ট ঠ ড ঢ ড় ঢ়-এর উচ্চারণস্থান দেখানো হয়েছে ‘কঠিন/শক্ত তালু (Hard palate)’, যা মূর্ধা নয়, মূর্ধারও সামনের অংশ।
শুবাচি কেউ কি অনুগ্রহ করে বলবেন, মূর্ধা বাগ্যন্ত্রের সুনির্দিষ্টভাবে ঠিক কোন স্থানটি?
যতটুকু জানি আল-জিহবা বা epiglottis ই মূর্ধন্য।
ReplyDeleteমূর্ধা
ReplyDelete