গরিবের তিন বল / ড. মোহাম্মদ আমীন


বল বল তিন বল, ভোজনে অম্বল, শয়নে কম্বল এবং মরণে রাম-বল : এটি একটি প্রবাদ। অন্তর্নিহিত অর্থ
- গরিবের অসহায়ত্ব, সম্পদহীনতা, মৌলিক চাহিদার প্রচণ্ড অভাব, নিরাপত্তহীনতা, বিপর্যয়ে গরিবদের একমাত্র ঈশ্বরে আনত হওয়ার বাধ্যবাধকতা প্রভৃতি।
মহারাজ পাণ্ড্য দেবরাজ রামকে বলল : প্রভু, আমার জন্য কী রেখেছেন?
: দুই বল; বাহু বল আর অর্থ বল। চির ক্ষুধার্থ মহেশ কুণ্ড বলল : প্রভু, আমি খুব গরিব। আমাকে কিন্তু এক বল বেশি দিতে হবে।দেবরাজ মুচকি হেসে বললেন : তোমার জন্য তিন বল।এক বল বেশি। : কী?: ভোজনে অম্বল, শয়নে কম্বল, মরণে রাম-বল।এখনও মহেশ কুণ্ডের মতো ক্ষুধার্ত গরিবেরা “ভোজনে অম্বল, শয়নে কম্বল এবং মরণে রাম-বল” নিয়েই দিনাতিপাত করছে।
-------------------------------------------------------------
সূত্র : বাংলা ভাষার মজা, ড. মোহাম্মদ আমীন,  পাঞ্জেরী পাবলিকেশন্স লি., 
ড. মোহাম্মদ আমীন
“এখানে মুরগি ও গোরুর দুধ পাওয়া যায়।” অনেকে বলেন, বাক্যটি অশুদ্ধ, কারণ মুরগি দুধ দেয় না। মুরগির দুধের সঙ্গে বাক্যটির সম্পর্ক কী, তা আমার জানা নেই। বাক্যটিতে তো বলা হয়নি, “এখানে মুরগির দুধ ও গোরুর দুধ পাওয়া যায়।”
“এখানে মুরগি ও গোরুর দুধ পাওয়া যায়।”- বাক্যটির সাধারণ অংশগুলো বাক্যের পৃথক বিশেষ্য থেকে আলাদা করে নিলে বাক্যটি হয় :
এখানে [(মুরগি) ও (গোরুর দুধ)] পাওয়া যায়। বাক্যটির অর্থ :
(১) এখানে মুরগি পাওয়া যায়। (ও)
(২) এখানে গোরুর দুধ পাওয়া যায়। অর্থাৎ,
(৩) এখানে মুরগিগোরুর দুধ পাওয়া যায়।
মুরগি গোরুর দুধ- দুটি ভিন্ন বিশেষ্য। বাক্যের বাকি সাধারণ পদ বিবেচনায় এ দুটি বিশেষ্যকে ‘ও’ দ্বারা যুক্ত করে ৩ নম্বর বাক্য গঠন করা হয়েছে। অতএব, বাক্যটি অশুদ্ধ নয়। যেমন অশুদ্ধ নয়, ‘এখানে ছাগল ও ঘাস পাওয়া যায়’। অশুদ্ধ হতো যদি, বাক্যের গঠন বিবেচনায় বিশেষ্যের অনুগত অন্য কোনো সংশ্লিষ্ট সাধারণ পদ না-থাকত। তবে, চতুষ্পদ কিংবা গো-দেবতা বিবেচনায় গোরুকে আগে লেখার কোনো গো-বিধান যদি থেকে থাকে, তাহলে অন্য কথা। নতুবা, মুরুগিগোরুর দুধ কিংবা ‘গোরুর দুধমুরগি’ আগে-পিছে লেখায় কোনো পার্থক্য নেই।
আর একটি বাক্য দেখুন : (৪) শ্রীকৃষ্ণ গোরু ও ছাগল চরাতেন। এ বাক্যটির সাধারণ অংশ কেবল ‘শ্রীকৃষ্ণ’। নামটিকে অনুগত পদ থেকে আলাদা করে নিলে পাওয়া যায় :
শ্রীকৃষ্ণ [( গোরু) ও (ছাগল চরাতেন)]। এক্ষেত্রে সাধারণ অংশের পরিপ্রেক্ষিতে বাক্যটির অর্থ হয়:
(৫) শ্রীকৃষ্ণ গোরু।
(৬) শ্রীকৃষ্ণ ছাগল চড়াতেন।
আসলে কি শ্রীকৃষ্ণ গোরু? না। তিনি আসলে, গোরু চরাতেন এবং ছাগল চরাতেন। মানে গোরু ও -ছাগল চড়াতেন।
অবশ্য, বাংলা বাক্য গঠনে এসব বিষয় বিবেচনা করা হয় না। নইলে শ্রীকৃষ্ণ গোরু ও ছাগল চরাতেন বাক্যের অর্থ অন্য রকম ধরা হতো। এ বাক্যের সঙ্গে ‘এখানে মুরগি ও গোরুর দুধ পাওয়া যায়’ বাক্য গুলিয়ে ফেলা সমীচীন হবে না। কিন্তু এখন যে যুগ পড়েছে, ‘এখানে মুরগির দুধ ও গোরুর ডিম পাওয়া যায়’ লিখলেও অবিশ্বাস্য মনে হয় না। বিজ্ঞান কী না-পারে?
গুরুত্বপূর্ণ লিংক
প্রেসক্রিপশনে RX  লেখার কারণ 

Comments

Popular posts from this blog

উপলক্ষ ও উপলক্ষ্য

পার ও পাড় / ড. মোহাম্মদ আমীন

তৎসম চেনার কৌশল / ড. মোহাম্মদ আমীন