ঘরে ঘরে? ড. মোহাম্মদ আমীন

ঘরে ঘরে? 
এটি একটি কাহিনিমূলক প্রবাদ। অন্তর্নিহিত অর্থ শিশুমনের কৌতুহল, অবাক, রহস্যময়, বিস্ময়কর, কৌতুহলোদ্দীপক। একদিন কয়েক বাড়ির মেয়েরা বসে পাড়া এলাকায় কার বিয়ে কার সঙ্গে হয়েছে সে নিয়ে আলাপ করছিল। এ সময় শিশু তাপস কৌতুলহ নিয়ে তার মাকে বলল, মা তোমার বিয়ে কার সঙ্গে হয়েছে? মা লজ্জায় চুপ করে গেল। অন্য এক মহিলা তাপসকে কোলে নিয়ে বলল, তোর বাবার সঙ্গে তোর মায়ের বিয়ে হয়েছে। 
শিশু তাপস বিস্মিত হইয়া বলল, ঘরে ঘরে?
সূত্র : ড. মোহাম্মদ আমীন, বাংলা ভাষার প্রবাদ-প্রবচন।
ড. মোহাম্মদ আমীন
“এখানে মুরগি ও গোরুর দুধ পাওয়া যায়।” অনেকে বলেন, বাক্যটি অশুদ্ধ, কারণ মুরগি দুধ দেয় না। মুরগির দুধের সঙ্গে বাক্যটির সম্পর্ক কী, তা আমার জানা নেই। বাক্যটিতে তো বলা হয়নি, “এখানে মুরগির দুধ ও গোরুর দুধ পাওয়া যায়।”
“এখানে মুরগি ও গোরুর দুধ পাওয়া যায়।”- বাক্যটির সাধারণ অংশগুলো বাক্যের পৃথক বিশেষ্য থেকে আলাদা করে নিলে বাক্যটি হয় :
এখানে [(মুরগি) ও (গোরুর দুধ)] পাওয়া যায়। বাক্যটির অর্থ :
(১) এখানে মুরগি পাওয়া যায়। (ও)
(২) এখানে গোরুর দুধ পাওয়া যায়। অর্থাৎ,
(৩) এখানে মুরগিগোরুর দুধ পাওয়া যায়।
মুরগি গোরুর দুধ- দুটি ভিন্ন বিশেষ্য। বাক্যের বাকি সাধারণ পদ বিবেচনায় এ দুটি বিশেষ্যকে ‘ও’ দ্বারা যুক্ত করে ৩ নম্বর বাক্য গঠন করা হয়েছে। অতএব, বাক্যটি অশুদ্ধ নয়। যেমন অশুদ্ধ নয়, ‘এখানে ছাগল ও ঘাস পাওয়া যায়’। অশুদ্ধ হতো যদি, বাক্যের গঠন বিবেচনায় বিশেষ্যের অনুগত অন্য কোনো সংশ্লিষ্ট সাধারণ পদ না-থাকত। তবে, চতুষ্পদ কিংবা গো-দেবতা বিবেচনায় গোরুকে আগে লেখার কোনো গো-বিধান যদি থেকে থাকে, তাহলে অন্য কথা। নতুবা, মুরুগিগোরুর দুধ কিংবা ‘গোরুর দুধমুরগি’ আগে-পিছে লেখায় কোনো পার্থক্য নেই।
আর একটি বাক্য দেখুন : (৪) শ্রীকৃষ্ণ গোরু ও ছাগল চরাতেন। এ বাক্যটির সাধারণ অংশ কেবল ‘শ্রীকৃষ্ণ’। নামটিকে অনুগত পদ থেকে আলাদা করে নিলে পাওয়া যায় :
শ্রীকৃষ্ণ [( গোরু) ও (ছাগল চরাতেন)]। এক্ষেত্রে সাধারণ অংশের পরিপ্রেক্ষিতে বাক্যটির অর্থ হয়:
(৫) শ্রীকৃষ্ণ গোরু।
(৬) শ্রীকৃষ্ণ ছাগল চড়াতেন।
আসলে কি শ্রীকৃষ্ণ গোরু? না। তিনি আসলে, গোরু চরাতেন এবং ছাগল চরাতেন। মানে গোরু ও -ছাগল চড়াতেন।
অবশ্য, বাংলা বাক্য গঠনে এসব বিষয় বিবেচনা করা হয় না। নইলে শ্রীকৃষ্ণ গোরু ও ছাগল চরাতেন বাক্যের অর্থ অন্য রকম ধরা হতো। এ বাক্যের সঙ্গে ‘এখানে মুরগি ও গোরুর দুধ পাওয়া যায়’ বাক্য গুলিয়ে ফেলা সমীচীন হবে না। কিন্তু এখন যে যুগ পড়েছে, ‘এখানে মুরগির দুধ ও গোরুর ডিম পাওয়া যায়’ লিখলেও অবিশ্বাস্য মনে হয় না। বিজ্ঞান কী না-পারে?
গুরুত্বপূর্ণ লিংক
প্রেসক্রিপশনে RX  লেখার কারণ 

Comments

Popular posts from this blog

উপলক্ষ ও উপলক্ষ্য

পার ও পাড় / ড. মোহাম্মদ আমীন

তৎসম চেনার কৌশল / ড. মোহাম্মদ আমীন