কর্মধারায় সমাস / ড. মোহাম্মদ আমীন
যেখানে বিশেষণ (বা বিশেষণভাবাপন্ন ) পদের সাথে বিশেষ্য (ও বিশেষ্যভাবাপন্ন) পদের যে সমাস হয় এবং পরপদের অর্থই প্রদানরূপে প্রতীয়মান হয় তাকে কর্মধারয় সমাস বলে। পুনশ্চ: কর্মধারয় সমাসে সমান বিভক্তিযুক্ত বিশেষণ ও বিশেষ্য কিংবা বিশেষ্য কিংবা বিশেষণ পদের মিলন হয় এবং পরপদে বিশেষ্যের অর্থ প্রধান হয়। যেমন- নীল যে পদ্ম= নীলপদ্ম।সহজ উদাহরণ হল- এই সমাস পিতৃতান্ত্রিক সমাস। পিতা ও মাতা কিংবা মাতা ও পিতার মিলনে সৃষ্ট সন্তান আমাদের সমাজে পিতার নামেই যেমন পরিচয় লাভ করে এই সমাসেও তদ্রুব বিশেষণ ও বিশেষ্য মিলিত হয়ে বিশেষ্যেরই প্রাধান্যতা সৃষ্টি করে।
নিয়মাবলী:
১. কর্মধারয় সমাসে সাধারণত বিশেষণ পদ আগে বসে। যেমন- পরম যে ধার্মিক= পরমধার্মিক, খাস যে মহল= খাসমহল , ফুল যে হাতা= ফুলহাতা ইত্যাদি।
২.কর্মধারয় সমাসে সাধারণত যে-সে, যেই-সেই, যা-তা , যিনি-তিনি, ন্যায়, সদৃশ্য, রূপ , মতো, মতন ইত্যাদি ব্যাসবাক্য ব্যবহৃত হয়। যেমন- যে শান্ত সেই শিষ্ট= শান্তশিষ্ট।
৩. দুটি বিশেষ্য পদে একই ব্যক্তি বা বস্তু বোঝালেও কর্মধারয় সমাস হয়। যেমন- যিনি জজ তিনিই সাহেব= জজসাহেব।
৪. কাজের ধারাবাহিকতা বোঝালে বা পরপর ঘটলে কৃদন্ত বিশেষণ পদেও কর্মধারয় সমাস হয়। যেমন- আগে ধোয়া পরে মোছা= ধোয়ামোছা।
৫. কর্মধারয় সমাসে বিশেষণ পুরুষ লিঙ্গের রূপ ধারণ করে। যেমন- সুন্দরী যে লতা= সুন্দরলতা। মহতী যে কীর্তি= মহৎকীর্তি। এটাও পুরুষতান্ত্রিকতার প্রভাব কি না জানি না।
৬. বিশেষণবাচক ‘মহান’ ও ‘মহ’ৎ পূর্বপদ হলে এর পরিবর্তে ‘মহা’ হয়।যেমন- মহান যে নবী=মহানবী, মহৎ যে জ্ঞান= মহাজ্ঞান ইত্যাদি।
৭. পরপদে ‘রাজা‘ শব্দ থাকলে তা ‘রাজ‘ হয়। যেমন- মহান যে রাজা= মহারাজ।
৮. ‘রাত্রি‘ স্থলে ‘রাত‘ হয়। যেমন- দীর্ঘ যে রাত্রি= দীর্ঘরাত।
৯. পূর্বপদে ‘কু‘ বিশেষণ থাকলে এবং স্বরবর্ণ পরে থাকলে ‘কু‘ স্থলে ‘কৎ হয়। যেমন- কু(কৎ) যে আকার= কদাকার, কু(কৎ) যে আচার= কদাচার ইত্যাদি।
১০. ‘অহ‘ শব্দের স্থলে ‘আন‘ হয়। যেমন- পূর্ব যে অহ=পূর্বাহ্ন ইত্যাদি।
১১, ছড়ায় ব্যবহৃত কুসুমকোমল= কুসুমের মতো কোমল, তুষারশীতল= তুষারের মতো শীতল উপমান কর্মধারয় সমাস। সিংহাসন= সিংহ চিহ্নিত যে আসন, রাষ্ট্রনীতি= রাষ্ট্রপরিচালনার নীতি প্রীতিভোজ= প্রীতি উপলক্ষ্যে ভোজ মধ্যপদলোপী কর্মধারয় সমাস। ঝরাপাতা= ঝরা যে পাতা , ফুলহাতা= ফুল যে হাতা, খাসমহল= খাস যে মহল সাধারণ কর্মধারয় সমাস।
Comments
Post a Comment