ইকড়ি মিকড়ি / ড. মোহাম্মদ আমীন
ইকড়ি মিকড়ি
চাম-চিকড়ি,
চামের কাঁটা মজুমদার।
ধেয়ে এল দামোদরদামোদরের হাঁড়ি-কুঁড়ি।দাওয়ায় বসে চাল কাঁড়ি।চাল কাঁড়তে হল বেলা,ভাত খাওগে দুপুরবেলা।ভাতে পড়ল মাছি,কোদাল দিয়ে চাঁছি।কোদাল হল ভোঁতাখা কামারের মাথা।অনেক আগে ছড়াটি মুখস্থ করেছিলাম কিন্তু অর্থ জানতাম না। শিক্ষক বলতেন, ‘অর্থহীন, শিশুদের মজার জন্য
রচিত।’ কলিম খান ও রবি চক্রবর্তীর বঙ্গীয় শব্দার্থকোষ পড়ে জানলাম, ছড়াটি অর্থহীন নয়। ছড়াকার অসাধারণ দক্ষতায় চিরন্তন বাংলার সাধারণ মানুষের আর্থ-সামাজিক অবস্থা তুলে ধরেছেন। প্রাচীন বাংলার মতো এখনও সাধারণ মানুষের আর্থ-সামাজিক অবস্থা অভিন্ন রয়ে গেছে। একটুও পরিবর্তন হয় নি। একটি ছোট্ট ছড়ায় ছড়াকার কিভাবে চিরন্তন বাংলাকে কালজয়ী ভাষায় তুলে ধরেছেন দেখুন :
ইকড়ি : গতিশীলভাবে কর্মফল সংগ্রহ করি [অর্থাৎ সংসার পরিপালনের জন্য সারাদিন কঠোর পরিশ্রম করি]।মিকড়ি : সীমায়িত কর্মফল সংগ্রহ করি [অর্থাৎ তারপরও হয় না, তাই আরও কিছু উপার্জনের চেষ্টা করি]।চাম : (আমাদের) চড়ে বেড়ানোর বা রুজি-রোজগারের এলাকায়।চিকড়ি : (ঘুরে ঘুরে) কর্মফল চয়ন করে আনি [রোজগার বা ফসল নিয়ে আসি]।চামের কাঁটা মজুমদার : রাজকর্মচারী মজুমদার (আমাদের) সে (কর্ম) এলাকার পথের কাঁটা। ধেয়ে এল দামোদর : তার ওপর ধেয়ে আসে ফড়ে-পাইকার দামোদর।দামোদরের হাঁড়ি-কুঁড়ি : ধেয়ে আসে তাদের (হাঁ করে গিলে খাওয়া) ভাণ্ড (হাঁড়ি) ও কুণ্ড (কুঁড়ি)।দাওয়ায় বসে : (তার থেকে বেঁচে-বাঁচিয়ে) ঘরের দাওয়ায় বা দরজার সামনে বসে।চাল কাঁড়ি : (ধান থেকে) চাল কুণ্ডন করে বের করি।চাল কাঁড়তে হল বেলা : (এত সব করে) চাল কুণ্ডন করতে বেলা হয়ে যায়।ভাত খাওগে দুপুরবেলা : (অতএব প্রথম প্রহরে আর খাওয়া নয়, একেবারে) দ্বিপ্রহরে খেয়ো।ভাতে পড়ল মাছি : (কিন্তু খাবে কী করে! সে) অন্নে পড়েছে ছিঁচকে চোর (মাছি)।কোদাল দিয়ে চাঁছি : থানা-পুলিশ (কোদাল) করে তাকে তাড়ানোর চেষ্টা করি (চাঁছি)।কোদাল হল ভোঁতা : (কিন্তু) থানা-পুলিশ (কোদাল) কাজ করে না (ভোঁতা)।খা কামারের মাথা : (অতএব) থানা-পুলিশ সৃষ্টিকারী(কামারের) পাণ্ডাদের (মাথা) খাও।
সূত্র : বাংলা ভাষার মজা
লেখক : ড. মোহাম্মদ আমীন
প্রকাশক : পাঞ্জেরী পাবলিকেশন্স লি.
প্রচ্ছদ : ধ্রুব এষ
ভূমিকা : আবুল কাসেম ফজলুল হক
মূল্য : ৫৫০টা।
Comments
Post a Comment