উপরোক্ত উপর্যুক্ত ও উপরিউক্ত / ড. মোহাম্মদ আমীন

অতৎসম ‘উপর’ শব্দের সঙ্গে তৎসম ‘উক্ত’ শব্দের সন্ধির ফলে ‘উপরোক্ত’ শব্দের উদ্ভব। তৎসম ‘ উক্ত’ শব্দের বিশ্লেষণ হচ্ছে, বচ্ + ক্ত। অতৎসম শব্দের সঙ্গে তৎসম শব্দের সন্ধি বৈয়াকরণগণ বিধেয় মনে করেন না। তাই তাঁদের মতে, ‘উপরোক্ত’ শব্দটি অসিদ্ধ। সুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায় বলেছেন, “সংস্কৃত সন্ধির নিয়ম বাঙ্গালার পক্ষে খাটে না, বাঙ্গালা সন্ধির অন্য নিয়ম আছে।” এজন্য বৈয়াকরণগণ ‘উপর’ শব্দের সঙ্গে ‘উক্ত’ শব্দের সন্ধি না করে তৎসম ‘উপরি’ শব্দের সঙ্গে তৎসম ‘উক্ত’ শব্দের সন্ধি করাই সমীচীন মনে করেন। এভাবে সন্ধি করলে হয়, উপরি + উক্ত = উপর্যুক্ত। এই বিশ্লেষণ অনুযায়ী ‘উপরোক্ত’ শব্দটি অসিদ্ধ, ‘উপর্যুক্ত’ শব্দই সিদ্ধ। ‘উপর্যুক্ত’ অর্থ প্রকাশে ‘উপরিউক্ত’ শব্দের ব্যবহারও লক্ষণীয়। বাংলা একাডেমি আধুনিক বাংলা অভিধানেও ‘উপর্যুক্ত’ অর্থে ‘উপরিউক্ত’ শব্দটি ভুক্তি হিসেবে পাওয়া যায় কিন্তু ‘উপরোক্ত’ শব্দটি পাওয়া যায় না।সুভাষ ভট্টাচার্য বলেছেন, “একথা ঠিক যে সন্ধির খাঁটি বাংলা নিয়ম এখনও রচিত হয়নি এবং এও ঠিক যে আমরা তদুপরি লিখি ; এখনও বাঙালি লেখকেরা তদুপরে লিখতে শুরু করেননি। তবু ‘উপরোক্ত’ শব্দটি দীর্ঘকাল ধরে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। উনিশ শতকের মধ্যভাগেও এই অসিদ্ধ শব্দটি সসম্মানে বিরাজ করত। যে শব্দ শতাধিক বছর ধরে ব্যবহৃত হয়ে আসছে এবং প্রধান বাঙালি সাহিত্যিক ও পণ্ডিতেরা যে শব্দের ব্যবহারে অনীহ নন তাকে অশুদ্ধ বলে দূরে সরিয়ে রাখা উচিতও নয়, সম্ভবও নয়। জনেক, শতেক, বারেক, ক্ষণেক প্রভৃতি শব্দ কিন্তু বাংলা সন্ধিরই দৃষ্টান্ত। এগুলোকে যদি মেনে নেওয়া যায় তবে ‘উপরোক্ত’শব্দকে মেনে নিতে অসুবিধা কোথায়।”
যাই হোক, যেহেত ‘উপরোক্ত’ শব্দটি পণ্ডিতগণ অসিদ্ধ বলেছেন এবং ‘বাংলা একাডেমি আধুনিক বাংলা অভিধান’ কেবল ‘উপর্যুক্ত’ ও ‘উপরিউক্ত’ শব্দকে প্রমিত ঘোষণা করেছে, অধিকন্তু শব্দদুটো বহুল প্রচলিত, তাই ওই অর্থ প্রকাশে ‘উপরোক্ত’ না- লেখাই সমীচীন।
সূত্র : ড. মোহাম্মদ আমীন, বাংলা বানান কোথায় কী লিখবেন এবং কেন লিখবেন








Comments

  1. চেয়ারম্যান এর জায়গায় মহিলাদের ক্ষেত্রে কি লিখব

    ReplyDelete
  2. চেয়ারম্যান এর জায়গায় মহিলাদের ক্ষেত্রে কি লিখব

    ReplyDelete

Post a Comment

Popular posts from this blog

উপলক্ষ ও উপলক্ষ্য

পার ও পাড় / ড. মোহাম্মদ আমীন

তৎসম চেনার কৌশল / ড. মোহাম্মদ আমীন