লাবণ্য / ড. মোহাম্মদ আমীন - শুবাচ

লাবণ্য :

‘লাবণ্য’ একটি আবেগময় শব্দ। এর আভিধানিক অর্থ : সৌন্দর্য, মাধুর্য, কান্তি, শোভা,
চাকচিক্য প্রভৃতি। প্রাচীন এক কথাসাহিত্যিক লাবণ্যের বৈশিষ্ট্য বর্ণনা দিতে গিয়ে লিখেছেন, ‘মুক্তোর ভেতর মোহময় সুন্দরে আবিষ্ট যে তরল-নির্বাণ প্রতিফলন পরিস্ফুট, সে প্রতিফলন অঙ্গে বিদ্যমান থাকলে তাকে লাবণ্য বলা যায়।’ তিনি যা-ই বলুন না কেন, ‘লাবণ্য’ শব্দের ব্যুৎপত্তি কিন্তু আবেগময় নয়; নিতান্তই সাধারণ ও রসকসহীন।

‘লাবণ্য’ শব্দের ব্যুৎপত্তিগত অর্থ লবণত্ব বা নোনতা ভাব। এ বিবেচনায় ‘লবণাক্ত’ শব্দের অর্থ হওয়া উচিত ‘শরীরের নোনতা ভাব’। কিন্তু ‘নোনতা ভাব’জিহ্বা দিয়ে স্বাদ গ্রহণের জিনিস, চোখ দিয়ে দেখার নয়। শরীরের ঘাম শুকিয়ে গেলে চামড়ার উপর লবণের অস্তিত্ব টের পাওয়া যায় - এমন শরীরই কি তা হলে লাবণ্যময়? না, কেউ যদি অমন ভাবেন তা হবে নির্ঘাৎ পাগলামি।

লবণ স্বাদ বৃদ্ধির অন্যতম উপাদান, এর মধ্যে একপ্রকার আদ্রতা রয়েছে, যা দেহ লাবণ্যের অন্যতম অনুষঙ্গ। আধুনিককালেও প্রসাধন-সামগ্রীর মাধ্যমে লাবণ্য বৃদ্ধির অন্যতম কৌশল আদ্রতারক্ষা। অধিকন্তু, লবণের মধ্যেও মুক্তোময় প্রতিচ্ছায়ার বিচ্যুরণ ঘটে। হয়ত এ জন্য ‘লাবণ্য’ শব্দকে বাঙলাভাষীরা ‘দেহের নোনতা ভাব’ এর পরিবর্তে ‘দেহের সৌন্দর্য’ রচনার ঈঙ্গিত হিসেবে ব্যবহার শুরু করেছিলেন।
লবণ শুকনো হলেও ভেজা ভাব। চট্টগ্রামের ভাষায় ‘লাবণ্য’ শব্দটি আরেকটু উন্নত ও সম্প্রাসিত হয়ে ‘ননাই’ রূপ ধারণ করেছে। অর্থাৎ ননীর মতো মাখোমাখো। উদাহরণ- “কইলাজার ভিতর বাঁধি রাইক্খুম তোঁয়ারে ও নানাই রে......”

Comments

Popular posts from this blog

উপলক্ষ ও উপলক্ষ্য

পার ও পাড় / ড. মোহাম্মদ আমীন

হিসাব আর হিসেবে / ড. মোহাম্মদ আমীন - শুবাচ