পার্থক্য ও তফাত / ড. মোহাম্মদ আমীন

পার্থক্য ও তফাত 

পার্থক্য ও তফাৎ এর কতটুকু পার্থক্য?
‘পার্থক্য’ ও ‘তফাত’ এর মধ্যে কতটুকু পার্থক্য তা উপরের প্রশ্নে নিহিত আছে।  ‘পার্থক্য আর তফাত এর কতটুকু পার্থক্য?’ বাক্য দিয়ে উভয় শব্দের ভিন্নতা বা পৃথকত্ব জানতে চাওয়া হয়েছে। পার্থক্য শব্দের আভিধানিক অর্থ প্রভেদ , বিভিন্নতা , পৃথকত্ব , বৈসাদৃশ্য। যেমন : কর্ম, জন্ম ও অবস্থান মানুষে মানুষে পার্থক্য সৃষ্টির অন্যতম নিয়ামক।

অন্যদিকে ‘তফাত’ শব্দের আভিধানিক অর্থ দূরত্ব / দূরবর্তী স্থান, ব্যবধান প্রভৃতি।  যেমন : তিন ইঞ্চি তফাত থেকে প্রবল বেগে একটা গাড়ি সাঁ করে চলে গেল। ‘ব্যবধান’ বোঝাতেও তফাত শব্দ ব্যবহার করা হয়। অবশ্য এ ‘ব্যবধান’ এর অন্তর্নিহিত অর্থ হয় দূরত্ব। এত ব্যবধান গভীর সম্পর্ককেও নষ্ট করে দেয়। বংশে বংশে নাহিক তফাৎ। তবে ‘পৃথক’ অর্থ বোঝাতেও ‘তফাত’ শব্দ ব্যবহার করা হয়।  যেমন : যতনের খাটুনি অযত্নের খাটুনি দুয়ের ফল তফাৎ।  লোহা ও পারদের ধর্মে অনেক তফত।
 
আসলে ‘পার্থক্য’ ও ‘তফাত’ শব্দের প্রভেদ নির্ভর করে সংশ্লিষ্ট বাক্যের গঠন, উদ্দেশ্য ও কার্যকরণের ওপর। সাধারণত দূরত্ব, দূরবর্তী স্থান, ব্যবধান, পার্থক্য প্রভৃতি বুঝাতে ‘তফাত’ শব্দ ব্যবহার করা হয়। অন্যদিকে বৈসাদৃশ্য, প্রভেদ বা পৃথকত্ব প্রকাশে ‘পার্থক্য’ শব্দ ব্যবহার করা হয়। দূরত্ব, দূরবর্তী স্থান বোঝাতে ‘তফাত’ শব্দ ব্যবহার করা গেলেও পার্থক্য দ্বারা ‘দূরত্ব, দূরবর্তী স্থান’ প্রভৃতি প্রকাশ করা যায় না। ‘পার্থক্য’ শব্দের সকল অর্থ ‘তফাত’ শব্দে বিদ্যমান কিন্তু ‘তফাত’ শব্দের সব অর্থ ‘পার্থক্য’ শব্দ ধারণ করে না। অর্থাৎ সকল ‘তফাত’ই পার্থক্য কিন্তু সকল পার্থক্য ‘তফাত’ নয়। এটাই ‘পার্থক্য’ ও ‘তফাত’ শব্দের তফাত। উদাহরণস্বরূপ নিচের তিনটি বাক্য লক্ষ করুন। প্রথম দুটি বাক্যে পার্থক্য শব্দের স্থলে ‘তফাত’ শব্দ বসালেও বাক্যের অর্থের কোন পরিবর্তন হয়নি। কিন্তু তৃতীয় বাক্যে ‘তফাত’ এর স্থলে পার্থক্য বসানোর কারণে অর্থের পরিবর্তন হয়ে গিয়েছে।

লবণ ও জলের অবস্থানগত কোন তফাত নেই কিন্তু গুণগত পার্থক্য রয়েছে। 
লবণ ও জলের অবস্থানগত কোন তফাত নেই কিন্তু গুণগত তফাত রয়েছে’ 
লবণ ও জলের অবস্থানগত কোন পার্থক্য নেই কিন্তু গুণগত তফাত রয়েছে।

Comments

Popular posts from this blog

উপলক্ষ ও উপলক্ষ্য

পার ও পাড় / ড. মোহাম্মদ আমীন

তৎসম চেনার কৌশল / ড. মোহাম্মদ আমীন