আঁকড়ি পাগড়ি ইলেক্ টিকি / শাহিদুল হক - শুবাচ

আঁকড়ি পাগড়ি ইলেক্ টিকি

শাহিদুল হক

আঁকড়ি
ব-য়ের মুখে আঁকড়ি দিলে
‘ব’ হয়ে যায় ‘ক’
উল্টো করে মাথায় দিলে
সেটাই আবার ‘ধ’।
হাতকাটা ‘য’ ‘ফ’ হয়ে যায়
আঁকড়ি পেলে গায়ে
ক্ষ’র ডানেও আঁকড়ি আছে
কেউ থাকে না বাঁয়ে।

ইলেক্
ইলেক থাকে বাঁ পাশেতে
এ-কারে তার ছবি
ঐ-কারটাও সেই হিসেবে
রাখতে পারে কবি।
চৈতন বা টিকি
ছয়টি স্বরের চাঁদির উপর
উড়তে দেখি টিকি
ট-য়ের মাথা নয়কো টেকো
করছে ঝিকিমিকি।
হ্রস্ব ই আর দীর্ঘ ঈ-তে
টিকি যেমন আছে
হ্রস্ব উ আর দীর্ঘ ঊ-টাও
লম্বা চুলে নাচে।
ঐ কে এবং ঔ কে দেখি
উড়ছে তাদের চুল
চৈতন কিংবা টিকি বললে
আর হবে না ভুল।
পাগড়ি ও পুঁটলি
ঙ’র (উঁও) মাথায় পাগড়ি থাকে
পুঁটলি ঞ’র পিঠে
সোজা দাগে মাত্রা হলেও
নয়তো -ফলা মিঠে।
ব্যঞ্জনেরা --ফলা বানায়
স্বরে বানায় -কার
অনুস্বারে কেউ থাকে না
সন্ধিতে ‘ম’ তার।
মন্তব্য: আমাদেরকে শৈশবে বর্ণপরিচ পাকাপোক্তভাবে শেখার জন্য কিছু শব্দ বা টার্ম শেখানো হত। ইদানীং অনেকেই সে সম্পর্কে কোন ধারণাই রাখে না। তাই এ প্রসঙ্গে আলোচনা করার জন্য আঁকড়ি, ইলেক, চৈতন, পাগড়ি, পুঁটলি, মাত্রা, ফলা, কার ইত্যাদি নিয়ে ছড়া লিখেছি। সংক্ষেপে নিচে তাদের পরিচিতি তুলে ধরা হলো। যেমন:
আঁকড়ি: ক, ধ আর ফ- এই তিনটে বর্ণে আঁকড়ি আছে।
ইলেক: ইলেক্ ছিল অঙ্কশাস্ত্রের সাথে। টাকা আনা পাই, সের ছটাক রতি ভরি লিখতে ইলেক্ চিহ্ন ব্যবহার করা হত। বাংলা লেখার ক্ষেত্রেও প্রচলন ছিল। অক্ষরের বাঁ পাশে এ-কার( ে) কার, ঐ-কার(ৈ)-কে ইলেক্ বলা হত।
চৈতন: চৈতন মানে টিকি। ই, ঈ, উ, ঊ,ঐ, ঔ এবং ট মাথায় চৈতন বা টিকি নিয়ে বসে আছে।
পাগড়ি: সেকালে বর্ণমালা শেখার সময় ‍ঙ-কে বলা হত ‘মাথায় পাগড়ি ঊঁও’।
পুঁটলি: আমাদের শেখানো হতো পিঠে পুঁটলি বা বোঁচকা ‘ঞ’।
মাত্রা: স্বরবর্ণ বা ব্যঞ্জনবর্ণের মাথায় সোজা দাগ থাকলেই তাকে মাত্রা বলে।
-কার: -কার হচ্ছে স্বরবর্ণের ধ্বনিচিহ্ন। এগুলো ব্যঞ্জনবর্ণের সাথে যুক্ত হয়।
-ফলা: ব্যঞ্জনবর্ণের বা যুক্তব্যঞ্জনবর্ণের নিচে আরেকর্টি ব্যঞ্জনবর্ণ যুক্ত হলে যে বর্ণটি যুক্ত হয় তাকে –ফলা বলে।
তবে অনুস্বারের সাথে কার কিংবা –ফলা কিছুই যুক্ত হয় না। কিন্তু সন্ধি হলে ‘ম’ ং (অনুস্বার) হয়ে যায়।

Comments

Popular posts from this blog

উপলক্ষ ও উপলক্ষ্য

পার ও পাড় / ড. মোহাম্মদ আমীন

হিসাব আর হিসেবে / ড. মোহাম্মদ আমীন - শুবাচ