আর্য / ড. মোহাম্মদ আমীন
আর্য
অার্য শব্দের ইংরেজি aryan। ককেশীয় মহাজাতি গোষ্ঠীর একটি বৃহৎ নৃগোষ্ঠী। এদের আদি পুরুষ ১ লক্ষ ২৫ হাজার বছর আগে আফ্রিকা থেকে বের হয়ে ইউরোপ, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া ও এশিয়ায় ছড়িয়ে পড়া শুরু করে। ৭৫ হাজার বছর আগে এদের একটি দল আরব উপদ্বীপে পৌঁছায়। ৬০ হাজার বছরের মধ্যে এরা এশিয়া সংলগ্ন ইউরোপে বসতি স্থাপন করে। ৪০ হাজার বছরের মধ্যে রাইন নদী থেকে তুরস্ক পর্যন্ত অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়ে। খ্রিস্টপূর্ব ৩৫ হাজার অব্দের দিকে এদের একটি দল দানিয়ুব নদীর তীরবর্তী তৃণাঞ্চলে বসবাস করা শুরু করে। জনসংখ্যা বৃদ্ধি এবং আন্তঃগোষ্ঠীর দ্বন্দ্বের কারণে এদের একটি দল এ অঞ্চল ত্যাগ করে দার্দেনেলিশ প্রণালী হয়ে এশিয়া মাইনরে প্রবেশ করে। খ্রিস্টপূর্ব ২৫ হাজার অব্দের দিকে এরা ইউফ্রেটিস-টাইগ্রিস নদী পার হয়ে মধ্য এশিয়ার বিস্তৃর্ণ অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়ে। পরে একটি দল চলে যায় ইউরোপের দিকে, অপর দলটি চলে আসে ইরানের দিকে। খ্রিস্টপূর্ব ১৮০০ অব্দের দিকে ইরানের পশ্চিমাঞ্চলের অধিবাসীরা ভারতে প্রবেশ করে। ইরানে যারা থেকে গিয়েছিল তাদের বলা হয় ইন্দো-ইরানীয় এবং যারা ভারতে প্রবেশ করেছিল, তাদের বলা হয় আর্য।
ইউরোপীয় পণ্ডিতগণের মতে, আর্যগণ প্রথমে পশুপালন করে জীবিকা নির্বাহ করতেন। কোনো স্থানের পশু খাদ্য হিসাবে ঘাস শেষে হয়ে গেলে পুনরায় অন্য অঞ্চলে গমন করতেন। এভাবে তারা এক স্থান থেকে অন্য স্থানে গমন করতেন বলে ‘আর্য’ (অর্থাৎ গমনশীল) নামে পরিচিত হন। এরূপ স্থান পরিবর্তন কষ্টদায়ক বিবেচনায় তারা নির্দিষ্ট স্থানে অবস্থানের উপায় হিসাবে কৃষিকাজকে বেছে নিয়ে ফসল উৎপাদনে নিযুক্ত হয়। এজন্যই তারা আর্য (অর্থাৎ কৃষিজীবি) নামে প্রসিদ্ধ হন। শেষোক্ত পক্ষের মতবাদে আর্য শব্দের অর্থ দাঁড়ায় কৃষিকর্মকারী, কারণ ও ধাতুর কর্ষণার্থও আছে।
ভারতীয় উপমহাদেশের শাস্ত্রগ্রন্থে কিছু উৎকৃষ্ট গুণসম্পন্ন ব্যক্তিকে আর্য বলা হয়েছে। কোনো কোনো গ্রন্থমতে হিন্দুধর্মাবলম্বী মাত্রই অর্থাৎ ব্রাহ্মণ, ক্ষত্রিয়, বৈশ্য ও শূদ্র - এ চার বর্ণের লোকই আর্য। আবার, কোনো কোনো গ্রন্থে ব্রাহ্মণ, ক্ষত্রিয় ও বৈশ্য - এ তিন জাতের লোককে আর্য এবং শূদ্র জাতের লোকদের শূদ্র বলা হয়েছে।
স্বল্প পরিসরের সুন্দর একটি লেখা। :)
ReplyDelete