একটা পোস্ট ও একজন পাবলিক সার্ভেন্ট এর মন্তব্য ড. মোহাম্মদ আমীন

একটা পোস্ট, পাবিলক সার্ভেন্ট জনাব Mizanur Rahman এর মন্তব্য ও কিছু কথা
======================================
‌‌"একটি বড় প্রশ্ন’ শিরোনামের পোস্টে জনাব মিজানুর রহমান (Mizanur Rahman ) মন্তব্য করেছেন : এতে দীনতা বা হীনম্নন্যতার কিছু তো দেখছিনে ভায়া!এটা বাংগাল ভাইদের বহির্মুখিনতা।এই দেখুনতো, আমার বাপ দাদা,তার ও অনেককাল আগে ঠাকুদ্দারা ও নুংগি গামচা পত্ত।আর আমি আপনি স্যুট প্যান্ট!!!! ভাব টা এমন যে, বিজ্ঞাপনী গিন্নির মত বলে বেড়াই,তীর ছাড়া আমার চলেই না!!!ইংরাজ আমলের কথাই ধরুন,ডিওরোজি শিষ্যরা কী গলাধঃকরণ টা ই না করেচে!!!তার ও আগে, কী অনায়াসে,পূর্ব বাংলার সব চাষাভুষা নমঃশূদ্র এর দল গোষ্ঠীশুদ্ধ মুসলমান হয়ে গেল!!! এরা জল কে বলে পানি!!!ফারসি শব্দ!!!মোট কথা বাংগাল ভায়ারা,কি বলেন পোষাক,ধর্ম,ভাষা,খাবার(কাচ্চি বিরিয়ানি, মোগলাই, রেজালা ফেজালা,কত কি)সব কিছুতেই বহির্মুখিন,মানে বিশ্ব নাগরিক!!! "
ভেবেছিলাম তার মন্তব্যের একটা জবাব দেব। মন্তব্যটি পড়ে আমার ছেলে (দশম শ্রেণির ছাত্র) বলল : জনাব Mizanur Rahman ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে লেখাপড়া করেছেন এবং পাবিলক সার্ভেন্ট। এককজন শিক্ষিত (?) বাংলাভাষী হয়েও কয়েক পঙ্‌ক্তির বাংলায় যিনি এত ভুল করেন, তার মন্তব্যের জবাব দেওয়া সমীচীন হবে না। বরং তার ভুলগুলো শুধরে দেওয়া যায়। আমার ছেলে তার লেখার কয়েকটা ভুল সংশোধন করে দিল। যেমন : দেখছিনে> দেখছি না, হীনম্নন্যতার> হীনম্মন্যতার, ভায়া> ভাইয়া, বাংগাল> বাঙাল, দেখুনতো> দেখুন তো, অনেককাল> অনেক কাল, ঠাকুদ্দারা> ঠাকুর্দারা, লুংগি> লুঙ্গি, গামচা> গামছা, আমি আপনি> আমি-আপনি, ভাব টা> ভাবটা, মত> মতো, ইংরাজ>ইংরেজ, ডিওরোজি> ডিরোজিও, গলাধঃকরণ টা ই> গলাধঃকরণটাই, করেচে> করেছে, তার ও> তারও, নমঃশূদ্র এর> নমঃশূদ্রের, জল কে> জলকে, মোট কথা> মোটকথা, ভায়ারা> ভাইয়েরা, কি> কী, পোষাক> পোশাক; অধিকন্তু একসঙ্গে তিনটা আশ্চর্যবোধক চিহ্ন (!!!) হাস্যকর। আরও কিছু ভুল আছে।
অন্যের মাকে ভালবাসা অপরাধ নয়, অপমানজনক বা দীনতাও নয়, বরং খুব ভালো কিন্তু যারা নিজের মাকে অবহেলা করে অন্যের মাকে নিয়ে মেতে থাকেন, নিজের মায়ের কষ্ট ও জীর্ণবস্ত্র দেখে যাদের মন কষ্টে ভরে উঠে না, দরদ ও মায়াময় অনুভূতি আসে না বরং পরের মায়ের গলায় হার-পরানোর চিন্তায় সারাক্ষণ উদগ্রীব থাকে, তারা শুধু দীন নয়, জঘন্য। তেমনি বিদেশি ভাষা শেখা খারাপ নয়, অবশ্যই ভালো কিন্তু যারা মাতৃভাষাকে অবহেলা করে অন্যের ভাষা নিয়ে রাতদিন পড়ে থাকে, তারা শুধু দীন নয়; হীন এবং নৃশংস। মাইকেল মধুসূদন এমনটি স্বীকার করেছেন। বৈশ্বিক অভিযোজন ও পরিবর্তন অপিরহার্য। তবে পরিবর্তনের নামে যারা নিজের স্বকীয়তাকে বিসর্জন দিয়ে দেন, তাদের না আছে দেশ, না-আছে জাতি, না-আছে দেশপ্রেম, না-আছে মর্যাদা। অন্যর ছেলের প্রতি ভালবাসা দেখাতে গিয়ে নিজের ছেলেটাকে ধাক্কা মেরে ফেলে দেওয়া শোভনীয় নয়। অর্থ প্রয়োজন, অর্থের জন্য বিদেশি ভাষা শেখাও প্রয়োজন কিন্তু অর্থের বিনিময়ে নিজের মর্যাদা ও স্বকীয়তাকে বিসর্জন দেওয়া উচিত নয়। যারা এমন করেন তাদেরকে কবি আব্দুল হাকিম : যে জন বঙ্গেতে জন্মি- - - কাহার জন্ম নির্ণয় ন জানি – কবিতায় ‌জারজ গালি দিয়েছিলেন। আমাদের মনে রাখা উচিত : নৃত্য শিল্পকর্ম কিন্তু তা একটি পর্যায় পর্যন্ত।
ভুল প্রত্যেকের হয়, আমার আরও বেশি হয়, তাই বলে এত বেশি! ছয়-সাত লাইনের ছোট একটি বাংলা লেখায় এত অধিক ভুল অবিশ্বাস্য। মেনে নেওয়া যায় না। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন ছাত্র ও সরকারি কর্মচারী মিজানুর রহমান হয়তো পোস্টটি লেখায় সতর্ক ছিলেন না। আমরা মাতৃভাষা লেখায় সতর্ক থাকব - এ প্রত্যাশা করি সবার কাছে।

Comments

Popular posts from this blog

উপলক্ষ ও উপলক্ষ্য

পার ও পাড় / ড. মোহাম্মদ আমীন

তৎসম চেনার কৌশল / ড. মোহাম্মদ আমীন