হযরত ও হুজুর -অর্থহীন শব্দ / তাহের আলমাহদী


ভারতীয় উপমহাদেশে ইংরেজি মাস্টার ডিগ্রির পরিবর্তে মাওলানা শব্দটির ব্যবহার শুরু, যার অর্থ আমাদের প্রভু বা আমাদের ক্রীতদাস৷ তেমনি ব্যাচেলর ডিগ্রির পরিবর্তে মওলঈ/মৌলবী শব্দের ব্যবহার৷ মৌলবী অর্থ হচ্ছে, আমার প্রভু বা আমার ক্রীতদাস৷
দুটি শব্দের মূল হচ্ছে মাওলা, যার সাথে না ও ঈ সর্বনাম দুটি প্রত্যয় হিসেবে যুক্ত হয়ে মাওলানা, মৌলবী শব্দদ্বয়ের জন্ম দিয়েছে৷
বিপরীতার্থক এই শব্দগুলোর পক্ষে সাফাই গেয়ে অনেককেই বলতে শুনি, মাওলা শব্দের আশিটির বেশি অর্থ আছে৷
এখন আর উচ্চশিক্ষিত হয়ে পথপ্রদর্শক প্রভু হয় না, সংসদে অস্টম শ্রেণী পাশ প্রধানমন্ত্রীকেও আমরা দেখেছি, মন্ত্রী-এমপির কথা বাদই দিলাম৷ আর ক্রীতদাসের যুগ পেরিয়ে এসেছি সেই কবে!
এরকম দুটি শব্দ হুজুর ও হযরত৷
ফার্সি হাজির আর আরবী হাদির, উচ্চারণে বৈপরিত্য থাকলেও বানান এবং উৎপত্তি একই৷ এই হাজির হতেই হুজুর শব্দের উৎপত্তি, হুজুরের স্ত্রী লিঙ্গ হযরত৷ মোঘল হেরেমে শব্দ দুটির উৎপত্তি৷ সম্রাট হাজির, সম্রাজ্ঞী হাযির নকিবের এই ঘোষণা বিকৃতিই হুজুর সম্রাট, হযরত সম্রাজ্ঞী শব্দের জন্ম৷ এর সাথে রাজকীয় সম্মান প্রদর্শনের যোগ থাকলেও ধর্মীয় কিছু নাই৷
আমার মনে হয়, মোঘল হেরেম হতে শব্দগুলো ক্রমে রাজা, জমিদার হয়ে ধর্মীয় শিক্ষিতদের কাঁদে ভর করেছে৷ এখনও পীর সাহেবদের শাহ শব্দ খেতাব নিতে দেখি, যদিও এর সাথে ধর্মযোগ নাই, বাদশাহীযোগ আছে৷ পীর বা ধর্মগুরুরা একসময় সাধারণ অশিক্ষিত লোকেদের উপর প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে রাজত্ব করতেন বটে৷ এখন সে প্রভাব কমলেও ভাব কমেনি৷
সবচেয়ে মজার বিষয় হচ্ছে, মূল আরবী বা ফারসী ভাষায় শব্দগুলোর ব্যবহার নেই৷ আরব বিশ্ব তথা আরবী ভাষী বাইশটি দেশের কোথাও এই শব্দগুলো লেখা, পড়া বা বলনে ব্যবহার হয় না৷ তারা এই শব্দগুলোর বিষয়ে অজ্ঞ৷
আরবী ভাষার বৈশিষ্ঠ্য হচ্ছে, অন্য ভাষার শব্দ গ্রহন করলেও নিজের ব্যাকরণানুযায়ী সাধিত করে নেয়, সে হিসেবে হুজুর আর হযরত ভুল শব্দ, অর্থহীন শব্দ৷

Comments

Popular posts from this blog

উপলক্ষ ও উপলক্ষ্য

পার ও পাড় / ড. মোহাম্মদ আমীন

তৎসম চেনার কৌশল / ড. মোহাম্মদ আমীন