ও আর এবং / ড. মোহাম্মদ আমীন


প্রথমজন বলল : ‘ও’ এসেছে ফারসি ‘ওয়’ থেকে। 
দ্বিতীয়জন : না, এটি এসেছে চর্যাপদের ‘হো’ থেকে। 
তৃতীয়জন , এটি এসেছে সংস্কৃত ‘অপি’ থেকে। 
যেখান থেকে আসুক না কেন, ‘ও’-কে সাধারণত শব্দযোজনের জন্য ব্যবহার করা হয়। যেমন : আম ও লিচু; রাম ও শ্যাম। বাংলায় কিন্তু ‘ও’ এর স্থলে ‘আর’ শব্দের ব্যবহার অধিক। ‘আর’ শব্দটি এসেছে ‘অপর’ থেকে। রাম ও শ্যাম দুই সহোদর’ লিখলে কোন অসুবিধে নেই, কেউ আপত্তি করবে না, নাম্বারও কাটা যাবে না। কিন্তু বাগ্বিধি অনুযায়ী ‘রাম আর শ্যাম দুই সহোদর’ লেখা সমীচীন। এটি শক্তিশালীও মনে হয়।

‘এবং’ বাংলায় বহুল ব্যবহৃত একটি শব্দ। সংস্কত ‘এবম্‌’ থেকে এটি বাংলায় এসেছে। সংস্কৃত ‘এবম্‌’ শব্দের অর্থ ‘এইরূপ’। তবে বাংলায় এর প্রায়োগিক অর্থ সংস্কৃতের ন্যায় ‘এইরূপ’ নয়। বাংলায় ‘এবং’ সংযোজক অব্যয় হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। বাক্য বা বাক্যাংশ সংযোজনের ক্ষেত্রেও ‘এবং’ ব্যবহার করা হয়। নিচের দুটো উদাহরণ দেখুন।
১ (বাক্য সংযোজন) : আমি সাত মিনিট হেঁটে বাসে উঠলাম এবং ত্রিশ মিনিট পর বাস থেকে নেমে ট্রেনে উঠলাম। 
২. (বাক্যাংশ সংযোজন) : আমি নিজে গিয়ে এবং ভালোভাবে দেখে জিনিসটা কিনেছি।

তবে সংযোজক অব্যয় ব্যবহারে সতর্ক থাকা উচিত। এগুলোর অধিক ব্যবহার বাক্যকে মেদবহুল করে তুলতে পারে। তাই অনেকে এগুলো যথাসম্ভব উহ্য রাখেন। বিশেষ করে কবিতা ও কাব্যধর্মী গদ্যে সংযোজক অব্যয় উহ্য রাখার বহুল প্রবণতা লক্ষণীয়। যেমন:
অন্ন চাই প্রাণ চাই চাই মুক্ত বায়ু,
চাই বল চাই স্বাস্থ্য আনন্দ উজ্জ্বল পরমায়ু,
সাহস বিস্তৃত বক্ষপট।

Comments

Popular posts from this blog

উপলক্ষ ও উপলক্ষ্য

পার ও পাড় / ড. মোহাম্মদ আমীন

তৎসম চেনার কৌশল / ড. মোহাম্মদ আমীন