জনাব বনাম জনাবা / ড. মোহাম্মদ আমীন

জনাব বনাম জনাবা :
‘জনাব’ সম্মানজ্ঞাপক শব্দ। ব্যক্তির নামের পূর্বে শব্দটি সম্মান ও ভদ্রতা প্রকাশের জন্য ব্যবহার করা হয়। অনেকে মহিলাদের নামের পূর্বে ‘জনাব’ এর স্ত্রীবাচক পদ হিসাবে সংস্কৃত ব্যাকরণের নিয়মানুসারে ‘আ’ যুক্ত করে ‘জনাবা’ লিখে থাকেন। এটি রীতিমতো অপমানজনক। ‘জনাবা’ শব্দের অর্থ ঋতুমতী নারী। এ অবস্থায় কোনো নারীর নামের আগে ‘জনাবা’ লেখা ওই নারীর পক্ষে কত লজ্জাকর ও অপমানজনক তা সহজে অনুমেয়। ‘বাংলা একাডেমি ব্যবহারিক বাংলা অভিধান’ অনুযায়ী ‘জনাব’ শব্দটি নারীপুরুষ নির্বিশেষে ব্যক্তির নামের পূর্বে ব্যবহার করা যায়। তবে কারও নামের পূর্বে সৈয়দ, খান, খন্দকার বা অন্য কোনো পদবি থাকলে ‘জনাব’ লেখা সমীচীন নয়। আমরা বাংলাতে কোনো পুরুষকে ‘জনাব’ বলে সম্বোধন করব, একইভাবে কোনো মহিলার নামের পূর্বেও সম্মানসূচক শব্দ হিসাবে ‘জনাব’ ব্যবহার করব। তবে কোনো অবস্থাতে ‘জনাবা’ নয়। স্মর্তব্য, আরবি বা ফারসি ভাষার লিঙ্গান্তরের নিয়ম বাংলা ভাষার মতো নয়।

বাংলা একাডেমি আধুনিক বাংলা অভিধান (২০১৬ খ্রিষ্টাব্দ) অনুযায়ী ‘জনাব’ অর্থ : ব্যক্তিনামের পূর্বে ব্যবহৃত সম্মানসূচক শব্দ, মহাশয়, শ্রী। ‘বাংলা একাডেমি ব্যবহারিক বাংলা অভিধান’-এ জনাব সম্পর্কে লেখা আছে : “জনাব [জনাব্] বি সম্মানসূচক ‘মি.’ ও ‘শ্রী’-র পরিবর্তে সাধারণভাবে নারীপুরুষ নির্বিশেষে ব্যক্তিনামের পূর্বে ব্যবহৃত; সম্মানসূচক সম্বোধনবিশেষ; মহাত্মা; মহাশয়; মাননীয়; ভদ্রলোক; sir। জনাবে আলি, ~ আলী বি (সম্বোধনসূচক) মান্যবর; মহামান্য; Your Excellency। {শব্দটি মূলত আরবি হলেও ফারসি ভাষাতেই এটি বহুল ব্যবহৃত, আ. জনাব جــنــب}”। বর্ণিত অভিধান দুটোর কোনোটাতে ‘জনাবা’ শব্দ নেই।

http://www.alokitobangladesh.com/tasauf/2015/01/24/119592 ] - সাইটে উল্লেখ আছে, “জনাবের স্ত্রীরূপ জনাবা হয় না; তাই জনাবা অন্য শব্দ হবে, যার অর্থ হবে নাপাক বা অপবিত্র।” http://www.ittefaq.com.bd/…/pathok-ov…/2014/11/29/17425.html ] সাইটে বলা হয়েছে : আরবি ভাষায় ‘জনাবা’ একটি সুনির্দিষ্ট শব্দ।যার অর্থ গর্ভবতী শূকর। অতএব এবার ভেবে দেখুন, কোনো মহিলার নামের আগে ‘জনাবা’ লিখবেন কি না।

মুহাম্মদ হাবিবুর রহমান তাঁর 'যথাশব্দ' নামের ভাব-অভিধান (২০১৫ খ্রিষ্টাব্দ) পুস্তকে ‘জনাবা’ শব্দকে মিজ, মোসাম্মাৎ, শ্রী, -মতী, -যুক্তা প্রভৃতি শব্দের সঙ্গে অভিন্ন দেখিয়েছেন। তিনি ভুলবশত এটি করেছেন। যা আদৌ যথার্থ্য নয়।
-----------------------------------------------------------------------------
সূত্র : ড. মোহাম্মদ আমীন, বাংলা বানান কোথায় কী লিখবেন, পুথিনিলয়, বাংলাবাজার, ঢাকা, প্রকাশ : ২০১৬ খ্রিষ্টাব্দ।

Comments

  1. স্যার খ্রিষ্টীয় বানান যদি খ্রিস্টিয় লিখি তাহলে কি এটা ভুল হবে?

    ReplyDelete
    Replies
    1. খ্রিষ্টীয় শব্দটি কিন্ত কোন ব্যক্তির নাম নয়, এটা একটা জাতিকে বোঝানো হয়েছে সুতরাং প্রচলিত অর্থে, নির্দ্দিষ্ট কোন কিছুকে বোঝানো হয়েছে এমন শব্দের বানানকে পরিবর্তন করা যাবে না। আমরা জানি কোন কিছুর নামকে “নাউন” বলে আর নাউনে কিন্তু বানান বিবেচ্য নয় কিন্তু চাঁদ, পবিত্র কোরআন বা এমন কিছু নির্দ্দিষ্ট শব্দ আছে যার কোন পরিবর্তন করা যায় না। এটাকে ক্রিয়ার ব্যতীক্রম বলা যেতে পারে।

      Delete
  2. দয়া করে জানাবেন স্যার।

    ReplyDelete
  3. স্যার! এরকম প্রচলিত ভূল বানান এবং পাশাপাশি ব্যাখ্যাসহ সঠিক বানান জানার জন্য কোন বই পড়তে পারি????

    ReplyDelete
  4. স্যার আমার কাছে একটা প্রশ্ন আসছে যে, কৃষ্ণ যদি কালো হয় কৃষ্ণচূড়া কালো নয় কেন? এটার উত্তর যদি জানা থাকে তাহলে কষ্ট করে আমাকে জানাবেন।

    ReplyDelete
    Replies
    1. মিল্লাতের 'গ' শাখার ছাত্র

      Delete
  5. সভাপতি এর স্ত্রী লিঙ্গ কি হবে?

    ReplyDelete

Post a Comment

Popular posts from this blog

উপলক্ষ ও উপলক্ষ্য

পার ও পাড় / ড. মোহাম্মদ আমীন

তৎসম চেনার কৌশল / ড. মোহাম্মদ আমীন