কদম গাছে কানাই / ড. মোহাম্মদ আমীন


‘কদম গাছে কানাই’ একটি প্রবচন। এই প্রবচনের অর্থ লম্পট, দুশ্চরিত্র।শ্রীকৃষ্ণ কদম গাছের তলায় বাঁশী বাজাইয়া গোপীদের মন হরণ করিতেন।
সূত্র : শ্রীসুধীরচন্দ্র সরকার, বিবিধার্থ অভিধান, প্রথম প্রকাশ বৈশাখ, ১৮৮৪ শকাব্দ, পৃষ্ঠা ১৬৩।
 ইন্ডিয়ান অ্যাসোসিয়েটেড পাবলিশিং কো. প্রাইভেট লি., ৯৩ মহাত্মা গান্ধী রোড, কলকাতা -৭। 
পুরাণের শ্রীকৃষ্ণ বংশীবাদক, কিন্তু তিনি কদমগাছের তলায় বাঁশি বজাতেন এটা নিতান্তই বাংলা রূপকল্প। বাংলার কবি চণ্ডীদাস লিখেছেন
হাথে ভাণ্ড মাথে করী চান্দচন্দন চর্চ্চিত গাএ।যমুনার তীরে কদমের তলেকে না বাঁশী বোলাএ ॥
একবার বিবেচনা করুন, ভারতের উত্তরপ্রদেশে স্থিত বৃন্দাবনে কি বাংলাদেশের মত কদমগাছ ছিল?
চণ্ডীদাসের পুরো কাব্যই অশ্লীল ও অশালীন ভঙ্গিতে ভরপুর, যা আদিরসাত্মক সাহিত্যরূপে শিল্পগুণের দাবিদার কিন্তু কৃষ্ণের চরিত্রবিচারের উপযুক্ত গ্রন্থ নয়।
রাধা ও কৃষ্ণের পরকীয়া প্রেম নিয়ে সমাজে যা প্রচলিত, তা সম্পূর্ণই সাহিত্যনির্ভর, এর পৌরাণিক ভিত্তি নেই। একমাত্র ব্রহ্মবৈবর্তপুরাণ ছাড়া আর কোন পুরাণে রাধার নামই পাওয়া যায় না। পুরাণবিশেষজ্ঞগণ বলেন আদি ব্রহ্মবৈবর্তপুরাণ হারিয়ে গেছে, বর্তমানে প্রাপ্ত সংস্করণটি আধুনিক রচনা এবং এতে রাধার নাম অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। সুতরাং রাধাকৃষ্ণের প্রেমলীলাবিষয়ক কল্পনা ভারতীয় সাহিত্যের ছায়ায় বিকশিত হয়েছে, পুরাণের শ্রীকৃষ্ণচরিত্র এর সঙ্গে মেলে না।

Comments

Popular posts from this blog

উপলক্ষ ও উপলক্ষ্য

পার ও পাড় / ড. মোহাম্মদ আমীন

তৎসম চেনার কৌশল / ড. মোহাম্মদ আমীন