নিপাতনে সিদ্ধ / ড. মোহাম্মদ আমীন
নিয়মানুযায়ী শুদ্ধ বা সিদ্ধ নয় কিন্তু বিশেষ কারণে নিয়ম ভেঙে যা শুদ্ধ বা সিদ্ধ ঘোষণা করা হয়, সেটিই নিপাতনে সিদ্ধ। ‘পাতন’ শব্দ থেকে নিপাতন শব্দের উদ্ভব।পাতন হচ্ছে তরল পদার্থ বিশুদ্ধ করার একটি প্রক্রিয়া। তরল পদার্থকে কোনো পাত্রে অনেক্ষণ স্থিরভাবে রেখে দিলে তরলের মধ্যে বিদ্যমান ময়লা, কর্দম, গাদ প্রভৃতি অধঃক্ষেপ হিসেবে পাত্রের নিচে জমা হয় বা পতিত হয়। এভাবে অপ্রয়োজনীয় জিনিসকে পাতনের মাধ্যমে পৃথক করাকে পাতন প্রক্রিয়া বলে। তবে প্রত্যেক বিশুদ্ধকরণ প্রক্রিয়ায় সামান্য কিছু ময়লা থেকে যায়, যেগুলো কোনো অবস্থাতেই পাতন হয় না বরং ওগুলোকে পাতন করতে গেলে বিশুদ্ধকরণ প্রক্রিয়ার উদ্দেশ্যই ভণ্ডুল হয়ে যায়। বার বার চেষ্টা করেও যে ময়লাগুলোকে পাতন করা যায়-না এবং বহিষ্কার অসম্ভব হয়ে দাঁড়ায় কিন্তু প্রায়োগিক ক্ষেত্রে ওই আংশিক অসিদ্ধ তরলের প্রয়োজনীয়তা অত্যাবশ্যক হয়ে দাঁড়ায়, তখন পাতন না হওয়া সত্ত্বেও পাতন হয়েছে ধরে নিয়ে তরলকে বিশুদ্ধ গণ্য করা হয়। তরলে বিদ্যমান যে ময়লার পাতন ঘটেনি, সেগুলোকে বলে নিপাতন বা (নি + পাতন) = (নাই + পাতন)।
ব্যাকরণেরণের ক্ষেত্রেও একই কথা প্রযোজ্য। বৈয়াকরণবৃন্দ ভাষায় সমতায়ন, স্বেচ্ছাচারিতা রোধ ও প্রমিতকরণের লক্ষ্যে বিদ্যমান অনিয়ম দূরীভূত করে ব্যাকরণ-সিদ্ধ প্রায়োগিক বিধান প্রতিষ্ঠা করতে গিয়েও কিছু কিছু ক্ষেত্রে নিপাতনের মতো সমস্যায় পড়েন। সংখ্যায় বেশি না-হলেও কিছু কিছু অনিয়মকে সিদ্ধতা বা নিয়মের মধ্যে আনা যায় না বা ব্যাকরণের সাধারণ নিয়ম দ্বারা পাতন করা যায় না বরং এগুলোকে পাতন বা বহিষ্কার করতে গেলে পুরো ব্যাকরণই অনিয়মে ভরে যাবার শংকা থেকে যায়।আবার অনিয়মগুলো এমন যে, এগুলোকে নানা কারণে ফেলেও দেওয়া যায় না এবং ফেলে দিলে সিদ্ধতার উদ্দেশ্য সিদ্ধ হলেও মূল উদ্দেশ্যসহ প্রায়োগিক ক্ষেত্র সংকুচিত হয়ে যায়। ফলে বৈয়াকরণগণ এসব নিপাতিত বিষয়কে পাতন হয়েছে ধরে নিয়ে সিদ্ধ ঘোষণা করেন।
কতগুলো সন্ধি কোনো নিয়ম অনুসারে হয় না; এগুলোকে নিপাতনে সিদ্ধ সন্ধি। যেমন : বৃহস্পতি, তস্কর, বনস্পতি, পরস্পর, গবাক্ষ, ষোড়শী, মনীষা, অন্যান্য, আশ্চর্য, পতঞ্জলি, কুলটা প্রভৃতি সন্ধির নিয়ম ভেঙে গঠিত। তাই এগুলো নিপাতনে সিদ্ধ সন্ধি।আর্ষপ্রয়োগও একপ্রকার নিপাতনে সিদ্ধ বিষয়।নিয়মানুগ না হওয়া সত্ত্বেও সিদ্ধ ধরাকে বলা হয় নিপাতনে সিদ্ধ।
Comments
Post a Comment