Posts

Showing posts from July, 2017

ছন্দকলা / ড. মোহাম্মদ আমীন

ছন্দ: যে বিশেষ রীতিতে পদবিন্যাস করলে বাক্য শ্রুতিমধুর হয় তাই ছন্দ। মূলত শিল্পিত বাকরীতির নামই ছন্দ। দল বা অক্ষর: বাকযন্ত্রের প্রয়াসে একঝোঁকে শব্দের যতটুকু উচ্চারিত হয় তাকে দল বা অক্ষর বলে। কলা: উচ্চারিত ধ্বনির ক্ষুদ্রতম অংশের পারিভাষিক নাম কলা। মুক্ত ও রুদ্ধ উভয়প্রকার দলই অপ্রসারিত উচ্চারণে এক কলা এবং প্রসারিত উচ্চারণে দুই কলা বলে গণ্য হয়। মাত্রা: কোন বস্তুর পরিমাপের আদর্শ মানকে বলা হয় মাত্রা। বাংলায় এক বিশেষ রীতিতে ছন্দের পরিমাপের একককে বলা হয় মাত্রা। মাত্রা নির্ণিত হয় দলের বা কলার সংখ্যা অনুযায়ী। 

বাংলা বানান / ড. মোহাম্মদ আমীন

কয়েকটি বহুল ব্যবহৃত শব্দের বানান/৩: তিরস্কার, ত্বরান্বিত (তরান্বিত নয়), দণ্ডবৎ, দরুন, দারুণ, দামি, দায়ী, দারিদ্র্য, দরিদ্রতা, দিগ্‌ভ্রম,দিগ্‌ভ্রান্ত, দিগ্‌হারা, দিঘি, দিঙ্‌নির্ণয় (দিক্‌নির্ণয় নয়), দিঙ্‌নির্দেশ, দিঙ্‌নির্দেশনা, দিশারি,দীর্ঘসূত্রী, দুরুচ্চার্য, দুরূহ, দুর্গ, দুষ্কৃতকারী, দূর্বা (ঘাস), দূষণীয় (দোষনীয় নয়), দৃক্‌পাত, দেওয়াল (দেয়াল নয়), দৌড়ঝাঁপ,  দৌরাত্ম্য, দ্বন্দ্ব, ধনাঢ্য, ধরন, ধারণ, ধারণা, ধূমপান, ধ্যানধারণা, ধ্বংসোন্মুখ, নগণ্য, নচেৎ, নতুন, নূতন, নভশ্চর, নয়তো, নাগাড়, নানি। কটূক্তি (কটুক্তি নয়), কণা, কণ্ঠস্থ, কত, কতগুলো, কথামতো, কথোপকথন,  কদাচিৎ, কপর্দকশূন্য, কয়েক বার, কেরানি, করণিক, কর্তৃবৃন্দ,  কর্মকর্তৃবৃন্দ, কাঁঠালচাঁপা,কল্যাণীয়াসু (মহিলার ক্ষেত্রে) কল্যাণীয়েষু (পুরুষের ক্ষেত্রে),কাঙ্ক্ষিত, কাচ, কিম্ভূত,  কূটনীতি, কূপ, কূলকিনারা,  কৃচ্ছ্রতা (কৃচ্ছতা নয়),  কেননা, ক্বচিৎ, ক্রূর, ক্ষান্ত, ক্ষুণ্ন,  খুঁটিনাটি,  খুনীখুশি, খেলাধুলা, খোঁজ, খোঁজখবর,  খোঁয়াড়, গড্ডলিকা (গড্ডালিকা নয়),  গণনা, গণপূর্ত, গরিষ্ঠ। নারায়ণ, নারায়ণগঞ্জ, নিয়মতান্ত্রিকভাবে,

জাদুকর না কি যাদুকর / ড. মোহাম্মদ আমীন

বাংলা একাডেমির অভিধানে প্রথামে 'যাদু' বানান প্রমিত ছিল। পরবর্তীকালে সেটা সংস্কার করে 'জাদু' শব্দকে প্রমিত করা হয়েছে। কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃক প্রণীত ১৯৩৬ খ্রিষ্টাব্দের বাংলা বানানের নিয়মে বলা আছে অসংস্কৃত (তদ্‌ভব, দেশি ও বিদেশি) শব্দে 'য' না লিখিয়া 'জ' লেখা বিধেয়।  অতএব 'জাদুকর' বানানই প্রমিত। 

হাইফেন এর ব্যবহার / ড. মোহাম্মদ আমীন

বাংলা ভাষায় বহুল ব্যবহৃত যতি চিহ্নের মধ্যে হাইফেন অন্যতম। বাক্যের সঙ্গে নয়, শব্দের সঙ্গে হাইফেনের সম্পর্ক। এটি দেখতে ড্যাশের মত হলেও দৈর্ঘ্যে ড্যাশের চেয়ে ছোট। এর ব্যবহার বিরামচিহ্নের ন্যয় নয়। শব্দের বর্ণসমষ্টির সংযোগ প্রকাশের জন্য হাইফেন ব্যবহার করা হয়। হাইফেনে কোন বিরাম দিতে হয় না। ১. বাক্যস্থ সমাসবদ্ধ পদে হাইফেনের বহুল ব্যবহার লক্ষ্য করা যায়। হাইফেন দিয়ে সমাসবদ্ধ পদ চিহ্নিত করা হয়। যেমন: আম-জাম-কলা সবগুলো লাল-পাত্রে রাখা হয়েছে। ২.অনুগামী ও অনুকার শব্দে হাইফেন বসাতে হয়। যেমন: মাল-পত্র গাড়িতে তোল। ডর-ভয় বলতে তোমার কিছু নেই। ৩. দুই বা দুইয়ের বেশি পদের সমাসে সাধারণত হাইফেন বসে। যেমন: বাপে-পুতে লড়াই, কে কারে ডরাই। আমি-তুমি-সে। টাকা-পয়সা-ধন-দৌলত, যা আছে নে। উল্লেখ্য দ্বন্দ্ব সমাস ছাড়াও অন্যান্য সমাসবদ্ধ পদে হাইফেন বসানো যায়। যেমন: আল্লাহ-সৃষ্ট । ৪. দুইয়ের বেশি শব্দ মিলিত হয়ে একটি শব্দ গঠন করলে হাইফেন বসানো হয়। শব্দের দ্বিত্ব ঘটলে হাইফেন ব্যবহার করা হয়। যেমন: ঝগড়া-রত- বুড়ো-লোক, কেঁদে-কেঁদে দেখায় শোক। ৬.যেখানে সন্ধি সম্ভব নয় কিংবা সন্ধি করা উচিত নয় সেখানে হাইফেন বসে। যেমন: মহা-প্রল

দ্বন্দ্ব সমাস / ড. মোহাম্মদ আমীন

দ্বন্দ্ব শব্দের আভিধানিক অর্থ বিরোধ, কলহ, ঝগড়া, বিবাদ, ‍যুদ্ধ , মল্লযুদ্ধ, জোড়া, যুগল, মিথুন ,ও সমাসবিশেষ। দ্বন্দ্ব সমাসে প্রত্যেক পদের অর্থপ্রাধান্য থাকে। দ্বন্দ্ব সমাস মূলত সমপ্রাধান্যপূর্ণ উভয় পদের সমাস। এই সমাসে দুটো পদকে অর্থ ঠিক রেখে জোড়া বেঁধে দেওয়া হয়। সুতরাং দ্বন্দ্ব শব্দের আভিধানিক অর্থ জোড়া হিসেবেই জানলে বুঝতে সহজ হবে। সংজ্ঞা: যে সমাসে প্রত্যেকটি সমস্যমান পদের অর্থপ্রাধান্য থাকে এবং সংযোজক অব্যয়লোপে সমস্ত পদ হয়, তাকে দ্বন্দ্ব সমাস বলে। যেমন- নদী ও নালা= নদী-নালা, এখানে নদী পূর্বপদ ও নালা পরপদ। দুটি পদেরই অর্থের প্রাধান্য সমস্ত পদে রক্ষিত হয়েছে। দ্বন্দ্বসমাসের নিয়মাবলি: ১. দ্বন্দ্ব সমাসে অপেক্ষাকৃত ছোট আকারের পদটি আগে বসে। যেমন- মা ও বাবা= মা-বাবা। ২. পূর্বপদ ও পরপদ উভয় পদ বিশেষ্য। যেমন- ছেলে ও মেয়ে= ছেলে-মেয়ে, ভাই ও বোন= ভাই-বোন ইত্যাদি। ৩. পূর্বপদ ও পরপদ উভয় পদ বিশেষণ হয়। যেমন- ধনী ও গরিব= ধনী-গরিব, কাঁচা ও পাকা= কাঁচা-পাকা ইত্যাদি। ৪.পূর্ব ও পরপদ উভয় পদ ক্রিয়াপদ হয়। যেমন- ভাঙে ও গড়ে= ভাঙে-গড়ে, নাচ ও গান= নাচ-গান ইত্যাদি। ৫. পূর্ব ও পরপদ উভয় পদ সর্বনাম। যেমন- যাকে ও তাকে

কর্মধারায় সমাস / ড. মোহাম্মদ আমীন

যেখানে বিশেষণ (বা বিশেষণভাবাপন্ন ) পদের সাথে বিশেষ্য (ও বিশেষ্যভাবাপন্ন) পদের যে সমাস হয় এবং পরপদের অর্থই প্রদানরূপে প্রতীয়মান হয় তাকে কর্মধারয় সমাস বলে। পুনশ্চ: কর্মধারয় সমাসে সমান বিভক্তিযুক্ত বিশেষণ ও বিশেষ্য কিংবা বিশেষ্য কিংবা বিশেষণ পদের মিলন হয় এবং পরপদে বিশেষ্যের অর্থ প্রধান হয়। যেমন- নীল যে পদ্ম= নীলপদ্ম। সহজ উদাহরণ হল- এই সমাস পিতৃতান্ত্রিক সমাস। পিতা ও মাতা কিংবা মাতা ও পিতার মিলনে সৃষ্ট সন্তান আমাদের সমাজে পিতার নামেই যেমন পরিচয় লাভ করে এই সমাসেও তদ্রুব বিশেষণ ও বিশেষ্য মিলিত হয়ে বিশেষ্যেরই প্রাধান্যতা সৃষ্টি করে। নিয়মাবলী: ১. কর্মধারয় সমাসে সাধারণত বিশেষণ পদ আগে বসে। যেমন- পরম যে ধার্মিক= পরমধার্মিক, খাস যে মহল= খাসমহল , ফুল যে হাতা= ফুলহাতা ইত্যাদি। ২.কর্মধারয় সমাসে সাধারণত যে-সে, যেই-সেই, যা-তা , যিনি-তিনি, ন্যায়, সদৃশ্য, রূপ , মতো, মতন ইত্যাদি ব্যাসবাক্য ব্যবহৃত হয়। যেমন- যে শান্ত সেই শিষ্ট= শান্তশিষ্ট। ৩. দুটি বিশেষ্য পদে একই ব্যক্তি বা বস্তু বোঝালেও কর্মধারয় সমাস হয়। যেমন- যিনি জজ তিনিই সাহেব= জজসাহেব। ৪. কাজের ধারাবাহিকতা বোঝালে বা পরপর ঘটলে কৃদন্ত বিশেষণ পদেও কর্ম

বহুব্রীহি সমাস / ড. মোহাম্মদ আমীন

যে সমাসে সমস্যমান পদগুলোর কোনোটির অর্থ প্রধানভাবে না বুঝিয়ে সমাসবদ্ধ পদটিতে অন্য কোনো অর্থ বোঝায়, তাকে বহুব্রীহি সমাস বলে। অথচ দ্বন্দ্ব সমাসে সমস্যমান পদের অর্থপ্রাধান্য থাকে। মনে রাখতে হবে: ১. বহ্রব্রীহি সমাসে সমস্যমান পদগুলোর কোনটির অর্থের প্রাধান্য পায় না, সমস্যমান পদের সাথে সম্পর্কিত তৃতীয় পদের অর্থ প্রাধান্য পায়। যেমন- ‘বহু’ অর্থ অনেক এবং ‘ব্রীহি’ অর্থ ধান। কিন্তু বহুব্রীহি সমাসে এর কোনটি না বুঝিয়ে অনেক ধানের বা সম্পদের মালিক এমন ব্যক্তিকে বুঝিয়েছে। বহু ব্রীহি আছে যার= বহুব্রীহি। ২. এরূপ সমাসে ব্যাসবাক্যে সর্বনাম ‘যে’ শব্দের ‘যা’ ‘যায়’ ‘যাতে’ ‘যার’ ইত্যাদি বিভিন্নরূপের প্রয়োগ হয়। যেমন- তিন পায়া যার= তেপায়া, বিনয়ের সহিত বর্তমান= সবিনয়ে, গলায় গলায় যে মিল=গলাগলি, হাতে হাতে যে লড়াই= হাতাহাতি, কানে কানে যে কথা=কানাকানি ইত্যাদি। ৩.‘সহ’ কিংবা ‘সহিত’ শব্দের সঙ্গে অন্য পদের বহুব্রীহি সমাস হলে ‘সহ’ ও ‘সহিত’ এর স্থলে ‘স’ হয়। যেমন- বান্ধবসহ বর্তমান= সবান্ধব, সহ উদর যার= সহোদর ইত্যাদি। ৪. বহুব্রীহি সমাসে পরপদে মাতৃ, পত্নী, পুত্র, স্ত্রী ইত্যাদি শব্দ থাকলে এ শব্দগুলোর সঙ্গে ‘ক’ যুক্ত হয়। যেম

শুভসন্ধ্যা না কি শুভ সন্ধ্যা / ড. মোহাম্মদ আমীন

কোনটি শুদ্ধ? ‘শুভসন্ধ্যা’ না কি ‘শুভ সন্ধ্যা’ ? বাক্য ও উদ্দেশ্য বিবেচনায় দুটোই শুদ্ধ আবার গড়মিল হলে দুটোই অশুদ্ধ।   ‘শুভসন্ধ্যা’ একটি শব্দ। ‘শুভ’ শব্দের অর্থ কল্যাণ, মঙ্গল, সৌভাগ্য প্রভৃতি। শুভসন্ধ্যা, শুভবিকাল, শুভরাত্রি, শুভক্ষণ প্রভৃতি শব্দ ওই সময়কে সৌভাগ্যপূর্ণ, মঙ্গলময় বা কল্যাণকর নির্দেশ করে। ‘শুভ সন্ধ্যা’ একটি জোড়শব্দ, এটি একটি সরল বাক্যও বটে। বস্তুত ইংরেজদের অনুকরণে আশীর্বাদ জ্ঞাপনে ‘শব্দজোড়’ ব্যবহার করা হয়। যেমন  : শুভ সকাল, শুভ অপরাহ্ণ। সুতরাং ফাঁক-অফাঁকের পরিপ্রেক্ষিতে উভয়ের অর্থ, প্রয়োগ ও উদ্দেশ্য ভিন্ন হয়ে যায়।   কোনো সময়কে কাঙ্ক্ষিত, মঙ্গলময় বা কল্যাণকর হিসেবে নির্দেশ করার ক্ষেত্রে ‘শুভ’ শব্দের সঙ্গে সময়-নির্দেশক শব্দটিকে একসঙ্গে রাখা বিধেয়। সময়কে ‘শুভ’ নির্দেশ করার পরিবর্তে ওই সময়ে কোনো ব্যক্তিবিশেষের কল্যাণ, মঙ্গল, আশীর্বাদ বা সৌভাগ্য কামনা করা হলে ‘শুভ’ ও সময়জ্ঞাপক শব্দটি ফাঁক রেখে লেখা সমীচীন। যেমন : ‘শুভ সন্ধ্যা।’, ‘শুভ সকাল।”, ‘শুভ রাাত্রি।’ এসব জোড়শব্দ দিয়ে সময়কে নির্দেশ করা হয়নি বরং ব্যক্তিবিশেষের কল্যাণ কামনা করা হয়েছে। যেমন : “সেই শুভসন্ধ্যায় তোমার চ

আত্মহনন ও আত্মহত্যা / ড. মোহাম্মদ আমীন

হনন ও হত্যার অর্থ অভিন্ন।আত্ম অর্থ নিজ। সুতরাং আত্মহত্যা ও আত্মহনন শব্দের অর্থও অভিন্ন। আভিধানিক অর্থ অভিন্ন হলেও প্রায়োগিক অর্থে ভিন্নতা রয়েছে।  হনন আর হত্যা শব্দ দুটো একটা আরেকটার সমার্থক হলেও হনন শব্দটা মানুষের বেলায় অধিক ব্যবহার হতে দেখা যায়। যেমন- পিতৃহনন, গুরুহনন, শত্রুহনন, শত্রুহনন ইত্যাদি। হত্যা সকল প্রাণীর ক্ষেত্রে ব্যবহার হয়ে থাকে।   যেমন- মানুষ হত্যা, গোহত্যা, প্রাণীহত্যা, ভ্রাতৃহত্যা, পিতৃহত্যা, ইত্যাদি। তেমনি, আত্মহনন বা আত্মহত্যা শব্দ দুটো একটা আরেকটার সমার্থক এবং মানুষের ক্ষেত্রে এবং কিছু কিছু পশু যারা নিজেই নিজেকে হত্যা করে তেমন পশুর ক্ষেত্রে ব্যবহার হয়ে থাকে। একজাতীয় ইঁদুর, হাতি, ডলফিন প্রভৃতি প্রাণী নাকি মানুষের ন্যায় আত্মহত্যা করে থাকে।

হরতাল কোন সমাস / ড. মোহাম্মদ আমীন

হর ও তাল = হরতাল; হয়। তারপরও হরতাল দ্বন্দ্ব সমাস নয়। এটি অব্যয়ীভাব হবে। হর অর্থ প্রত্যেক আর তাল অর্থ   তালা  । অর্থাত্‍ ব্যুত্‍পত্তিগত অর্থে প্রত্যেক অফিসে বা কর্মস্থলে   তালা ।  হর ও তাল = দ্বন্দ্ব সমাস নয় কেন? হরতাল হচ্ছে তালের অভাব = অব্যয়ীভাব কেন? পূর্বপদ লোপ করে শুধু তালের অভাব বুঝিয়ে অব্যয়ীভাব সমাস কেন?

লক্ষ্মীতে ম কেন? / Subhasis Chirakalyan Patra

লক্ষ্মী বানানে ম আসে কেন ? লক্ষ্মী বানানে ম আসে কেন ? প্রশ্নটি খুব গুরুত্বপূর্ণ এবং আকর্ষণীয়। অনেকে কারণটি বুঝতে পারেন না এবং লক্ষ্মী বানান 'লক্ষী' লিখে যদি কাজ চলে যায় তাহলে আর লক্ষ্মী লিখতে চান না। বিষয়টি আমি যতটুকু বুঝেছি তা সংক্ষেপে বলব। সেই সঙ্গে লক্ষ্মী শব্দটির ক্রিয়াভিত্তিক-বর্ণভিত্তিক অর্থও বলব। শব্দের বানান ও অর্থ অঙ্গাঙ্গি জড়িত। প্রথমে মৎপ্রণীত পদ্যাভিধান 'বর্ণসঙ্গীত' থেকে লক্ষ্মী শব্দের সূত্র বলছি : লক্ষ্ ধাতুতে ঈ যোগ করিলে লক্ষ্মী হইয়া যায়, নীতিমানদের লক্ষ করে যে লক্ষ্মী বলিব তায়। অসুরেরা যবে নীতিহীন হল লক্ষ্মী তাদের ছেড়ে, দেবতার ঘরে উড়িয়া গেলেন পেচকের পিঠে চড়ে। প্রথমে লক্ষ্মী শব্দের অর্থ বলি। লক্ষ্মী শব্দটি আসে লক্ষ্ ধাতুর সঙ্গে ঈ প্রত্যয় যুক্ত করে। এর ক্রিয়াভিত্তিক অর্থ হল 'যিনি নীতিমানদের লক্ষ করেন'। অমরকোষের বিখ্যাত টীকাকার শ্রীচন্দ্রমোহন তর্করত্ন মহাশয় লক্ষ্মী শব্দের এই ক্রিয়াভিত্তিক অর্থ করেছেন। লক্ষ ধাতুর সঙ্গে ঈ প্রত্যয়টি যুক্ত হওযার সময় একটি বর্ণের (এখানে ম-এর) আগম হয়। ব্যাকরণে একে বর্ণাগম বলে। এই কারণেই লক্ষ্মী বানান 'লক্ষী&

বহুবচন করুন / ড. মোহাম্মদ আমীন

পুরুষবাচক শব্দের শেষে ‘অক্’ থাকলে স্ত্রীবাচক শব্দে ‘ইকা’ হবে।  যেমন- অধ্যাপক>অধ্যাপিকা, অভিভাবক> অভিভাবিকা, গায়ক>গায়িকা, ঘাতক>ঘাতিকা, নায়ক>নায়িকা, নাটক>নাটিকা,পাঠক> পাঠিকা, বাহক>বাহিকা, বালক>বালিকা, সম্পাদক>সম্পাদিকা, প্রেরক>প্রেরিকা, সাধক>সাধিকা, শ্যালক> শ্যালিকা , শিক্ষক>শিক্ষিকা ইত্যাদি।

সালাম স্বামী / ড. মোহাম্মদ আমীন

প্রাণপ্রিয় স্বামী সালাম,  প্রথমে আমার সালাম । জান, তুমি জান গত শুক্কুর বার শুক্কুর এসেছে সুখীকে নিয়ে। বাড়ির অবস্থা বাড়াবাড়ি পর্যায়ে চলে গেছে।ফুটো চাল ভিজিয়ে দিয়েছে চাল। খানা খানা শূন্য। নানা চাল দিয়ে তোমার নানা তোমার মতো চালচুলোহীনকে বর আখ্যায়িত করে আমার বর করেছিলেন। কেউ চায় না বলে তুমি চায়না চলে গেছ। কাল দুবাই থেকে কালবোশেখী হয়ে তোমার দুভাই চলে এসেছে। তোমার বাবা তাল করে সব তাল থালায় ভরে গুদামখানায় তালা দিয়ে রেখেছে। কিছু পাব না বলে আমি পাবনা চলে এসেছি।  প্রিয়  জামাই  তুমি সুঃখী হও তোমার মেয়ে সুখীর  জামাই    শুক্কুরকে নিয়ে।

নেত্রকোণার শব্দকিছু / Shahadat Hussain Shalascaux

ইঁদুর - উন্দুর/ চিহা।   বানর---বান্দর।   বেডরোম/কামড়া ---কোডা।   পাঠা - হাডা। পাখি - হক্কি।   শেয়াল - হেয়াল। সাপ - হাপ।   বেজি - নেউল। ঘুঘু - ডুহি।   বক- বগুলা। ফুল - হুল।   পানি - হানি। খোঁজা --বিচরানি।   এখানে --এইহানো।   ওখানে --হেইনো। যদি --জুদি।   লেখালেখি--- লেহালেহি।   মোটামুটি ---আধামাদা।   হাসিস না --কিজাইস না।   ঢেঁকি ---ঢেঁহি।   বেজন্মা --বিজরমা।   পিশাচ -হিশাশ।   মধ্যে ---মুইধ্যানো।   পুকুর - হুসকুনি/ দিঘী।     কাজ - কাম। ঝাড়ু - হাছুন।   পাতিল- হাইতলা।   টয়লেট - লেপটিন বা টাট্টি।     গ্লাস - গেলাইস। বাটি - বাডি।   মটর সাইকেল - হুনডার বারান্দা - উশারা।   আখ - উঁক।   লুঙ্গি - তবন।   গেঞ্জি- গুঞ্জি দোকান - দোহান।   মিষ্টি - গুল্লা।   হাত পাখা - বিছুন/ হাংকা / ফাংকা।     মশারী - মশুউর।   ডাল - ডাইল।   তরকারী - ছালুন।   মিষ্টি --মিইডা।     তরকারী'র ঝুল- হউরা।   ডাটা - ডেংগা। ডাটা শাক - ডেংগা হাগ।   পেয়াজ - হেইয়াজ।   বেগুন - বাইংগন পেপে - হাবদা।   টমেটো --গুডি বাইঙ্গল।     শুটকি মাছ- হুরি / হুটকি মাছ।

বাক্যশুদ্ধি / Yusuf Imran

নিচের বাক্যগুলোতে ব্যবহৃত ক্রিয়াগুলো খেয়াল করেন। এই বানানগুলো অনেক সময় আমরা অনেকে, অনেক ভালো লেখকও উল্টাপাল্টা করে ফেলি। অশুদ্ধ: সে তাড়াতাড়ি পড়া ভুলে। শুদ্ধ: সে তাড়াতাড়ি পড়া ভোলে। অশুদ্ধ: সে টেবিলে   কলম   খুঁজে। শুদ্ধ: সে টেবিলে   কলম   খোঁজে। অশুদ্ধ: আমি টেবিলে   কলম   খোঁজি। শুদ্ধ: আমি টেবিলে   কলম   খুঁজি। অশুদ্ধ: সে টেবিলে   কলম   খোঁজছে। শুদ্ধ: সে টেবিলে   কলম   খুঁজছে। অশুদ্ধ: নিচ থেকে সে   কলম   তোললো। শুদ্ধ: নিচ থেকে সে   কলম   তুললো। অশুদ্ধ: আমি তোলি। সে তুলে।   শুদ্ধ: আমি তুলি। সে তোলে। অশুদ্ধ: সে তাড়াতাড়ি পড়া ভোলে যায়। শুদ্ধ: সে তাড়াতাড়ি পড়া ভুলে যায়। অশুদ্ধ: চিঠিটি সে খোলে দেখলো না।   শুদ্ধ: চিঠিটি সে খুলে দেখলো না।   অশুদ্ধ: অবশেষে সে চিঠিটা খোললো। শুদ্ধ: অবশেষে সে চিঠিটা খুললো। অশুদ্ধ: একা না হলে সে চিঠি খুলে না। শুদ্ধ: একা না হলে সে চিঠি খোলে না। অশুদ্ধ: একা না হলে সে চিঠি খোলবে না। শুদ্ধ: একা না হলে সে চিঠি খুলবে না। অশুদ্ধ: বদমাশদের রোখে দাঁড়াও। শুদ্ধ: বদমাশদের রুখে দাঁড়াও। অশুদ্ধ: ওদেরকে রুখো। শুদ্ধ: ওদেরকে রোখো। অশুদ্ধ: আমরা ওদেরকে রোখবো। শুদ্ধ: আমরা ওদ

তা / র্তৃ’-যুক্ত শব্দের আচরণ / ড. মোহাম্মদ আমীন

কয়েকটি ব্যাতিক্রান্ত ক্ষেত্র ব্যতীত অন্যান্য ক্ষেত্রে তৎসম তৃচ-প্রত্যয়ান্ত বা অন্তে ‘তা’ বা ‘র্তা’ যুক্ত কোনো শব্দের শেষে কোনো চিহ্ন/বর্ণ কিংবা শব্দ/শব্দাংশ যুক্ত হলে ওই ‘তা’ বা ‘র্তা’ পরিবর্তিত হয়ে যথাক্রমে ‘তৃ’ ও ‘ র্তৃ ’ রূপ ধারণ করে। যেমন : ১. কর্তা : কর্তৃবৃন্দ, কর্তৃগণ, কর্তৃমণ্ডলী, কর্তৃপক্ষ, কর্তৃভবন, কর্তৃরূপ, কর্তৃবিয়োগ, কর্তৃহীন, কর্তৃতর্পণ, কর্তৃবৎ, কর্তৃস্থানীয়, কর্তৃভক্তি, কর্তৃহন্তা, কর্তৃকুল প্রভৃতি। ২. কর্মকর্তা : কর্মকর্তৃবৃন্দ, কর্মকর্তৃগণ, কর্মকর্তৃবৎ, কর্মকর্তৃভবন, কর্মকর্তৃমণ্ডলী, কর্মকর্তৃতুল্য, কর্মকর্তৃপরিষদ, কর্মকর্তৃসংঘ, কর্মকর্তৃহীন, কর্মকর্তৃবিয়োগ প্রভৃতি। ৩. দাতা : দাতৃবৃন্দ, দাতৃগণ, দাতৃমণ্ডলী, দাতৃভক্তি, দাতৃমৃত্যু, দাতৃবিয়োগ, দাতৃহীন, দাতৃবৎ, দাতৃবন্দনা, দাতৃসদন, দাতৃসংঘ, দাতৃকুল প্রভৃতি। ৪. মাতা : মাতৃস্নেহ, মাতৃভাষা, মাতৃদুগ্ধ, মাতৃভক্তি, মাতৃকুল, মাতৃত্ব, মাতৃস্তন্য, মাতৃকল্যাণ, মাতৃবৎ, মাতৃবন্দনা, মাতৃভূমি, মাতৃমৃত্যু, মাতৃবিয়োগ, মাতৃহীন প্রভৃতি। ৫. পিতা : পিতৃব্য, পিতৃপুরুষ, পিতৃগৃহ, পিতৃঋণ, পিতৃতর্পণ, পিতৃধর্ম, পিতৃসত্য, পিতৃষ্বসা, পিতৃহন্তা, প

ষ্ণ্য এবং তা প্রত্যয় / ড. মোহাম্মদ আমীন

‘ষ্ণ্য’ ও ‘তা’ তৎসম তদ্ধিত প্রত্যয়। বিশেষ্য-বিশেষণ রূপান্তর এবং নতুন শব্দ গঠনে প্রত্যয় দুটির ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ।উভয় প্রত্যয়ের প্রতিক্রিয়া অভিন্ন। অর্থাৎ কোনো শব্দের পর ‘ষ্ণ্য’ প্রত্যয় যুক্ত হলে যে অর্থ হয়, ‘তা’ প্রত্যয় যুক্ত হলেও একই অর্থ হয়। যেমন দরিদ্র+ ষ্ণ্য= দারিদ্র্য এবং দরিদ্র+ তা = দরিদ্রতা। দারিদ্র্য আর দরিদ্রতা একই অর্থ বহন করে। কিন্তু সমস্যা হয় তখন, যখন দুটি প্রত্যয় একসঙ্গে প্রয়োগ করা হয়। তখন প্রযুক্ত শব্দ বাহুল্য দোষে দুষ্ট হয়ে যায়। যেমন : দরিদ্র শব্দের সাথে ‘ষ্ণ্য’ এবং ‘তা’ একইসঙ্গে যুক্ত করলে গঠিত হয় দারিদ্র্যতা। শব্দটি  বাহুল্য দোষে দুষ্ট এবং অশুদ্ধ। এরকম কয়েকটি শব্দ- কৃপণ> কার্পণ্য অথবা কৃপণতা; কার্পণ্যতা অশুদ্ধ জড়> জাড্য অথবা জড়তা; জাড্যতা অশুদ্ধ কবি> কাব্য অথবা কবিতা; কাব্যতা অশুদ্ধ দৃঢ়> দার্ঢ্য অথবা দৃঢ়তা; দার্ঢ্যতা অশুদ্ধ দুর্বল> দৌর্বল্য অথবা দুর্বলতা; দৌর্বল্যতা অশুদ্ধ মধুর> মাধুর্য অথবা মধুরতা; মাধুর্যতা অশুদ্ধ দীন> দৈন্য অথবা দীনতা; দৈন্যতা অশুদ্ধ কঠিন > কাঠিন্য অথবা কঠিনতা; কাঠিন্যতা অশুদ্ধ অলস> আলস্য অথবা অলসতা; আলস্যতা

শব্দরাশি / ড. মোহাম্মদ আমীন

চাকরি, সাক্ষী, সাক্ষ্য, এতদ্দ্বারা, এতদসংক্রান্ত, উপর্যুক্ত/উপরিউক্ত, উল্লিখিত, ইতোমধ্যে, ইতঃপূর্বে, পথিমধ্যে, সুষ্ঠু, অদ্যাবধি, যথাবিহিত, আকাঙ্ক্ষা, কাঙ্ক্ষিত, দাবি, জারি, সেবা, পরিষেবা, স্বচ্ছ, সচ্ছল, দ্বন্দ্ব, দূর, দূর-দূরান্ত, দূরীকরণ, অদূর, দূরত্ব, দূরবীক্ষণ, দূষিত, দূষণ, দূষণীয়, দুর্গা, দুর্গ, দুর্দান্ত, দুরবস্থা, দুরন্ত, দুর্নীতি, দুর্যোগ, দুর্ঘটনা, দুর্নাম, দুর্ভোগ, দুরাকাঙ্ক্ষা, দুর্দিন, দুর্বল, দুর্জয়, দুরারোগ্য, দুরূহ, ভুবন, ভূমি, অদ্ভুত, ভুতুড়ে, ভস্মীভূত, ভূত, বহির্ভূত, ভূতপূর্ব, ভূমিকা, ভূমিষ্ঠ, ভূয়সী, ভুক্ত, ভুক্তি, ভুল, ভুয়া, মুহূর্ত, মুমূর্ষু, বিদ্যা, বিদ্বান, উচিত, ফেরত, ফেরতযোগ্য, জগৎ, জগতে, বিদ্যুৎ, বিদ্যুতে, ভবিষ্যৎ, ভবিষ্যতে, আত্মসাৎ, আত্মসাতে, যাবৎ, সাক্ষাৎ, সাক্ষাৎকার, সাক্ষাতে, পাইকারি, সরকারি, দরকারি, তরকারি, মস্কারি, সহকারী, আবেদনকারী, সাহায্যকারী, পরিবেশনকারী, দর্শনকারী, তদারককারী, দুষ্কৃতকারী, অনিষ্টকারী, অনুসারী, কর্মচারী, প্রতীকী, যাত্রী, ছাত্রী, ধনী, মীমাংসা, মনীষী, সীমা, সীমাহীন, ইদানীং, তদানীং, সমীচীন, সর্বাঙ্গীণ, গোষ্ঠী, ঋণগ্রহীতা, লক্ষ্মী, হীরক, ন

ভূ এবং ভুবন / ড. মোহাম্মদ আমীন

‘ভূ’ মানে ভূমি, মাটি, পৃথিবী প্রভৃতি। ভূগোল, ভূমণ্ডল, ভূমিকম্প, ভূপৃষ্ঠ, ভূতল, ভূধর, ভূম, ভূম্যাধিকারী, ভূলোক, ভূর্লোক প্রভৃতি বানানে ‘দীর্ঘ ঊ-কার’ হলেও ‘ভুবন’ বানানে ‘হ্রস্ব উ-কার। ভূগোল, ভূমণ্ডল, ভূমিকম্প, ভূপৃষ্ঠ, ভূতল, ভূধর, ভূম, ভূম্যাধিকারী, ভূলোক, ভূর্লোক প্রভৃতি শব্দের উৎসমূল ‘ভূ’ বা ‘ভূমি’ বা ‘মাটি’ কিন্তু ভুবন শব্দের উৎসমুল ‘ভূ’ বা মাটি নয়। ভারতীয় পুরাণে বর্ণিত ‘সপ্তস্বর্গ ও সপ্তপাতাল’কে একত্রে ভুবন বলা হয়। ভুবন নিজেই একটি নির্দিষ্ট অর্থ স্বাধীনভাবে ধারণ করে। ‘ভুবন’ এর ‘ভু’ যেমন মাটি নয়, তেমনি এর অন্তর্গত ‘ বন ’ কোনো জঙ্গলও নয়। কাজেই নজরুল ‘ত্রিভুবনের প্রিয় মোহাম্মদ’ গজলে ‘ত্রিভুবন’ বলতে শুধু পৃথিবীকে প্রকাশ করেননি, ‘সপ্ত স্বর্গ ও সপ্ত পাতাল’ও বুঝিয়েছেন। তবে ‘ভূ’ বা ‘ভূমি’ বা ‘মাটি’ যেহেতু ‘ভুবন’-এর একটি অংশ তাই অনেকে ভুবন শব্দটি ‘পৃথিবী’র একটি সমার্থক শব্দ হিসাবেও ব্যবহার করে থাকেন। ************************************************* সূত্র: বাংলা শব্দের পৌরাণিক উৎস, ড. মোহাম্মদ আমীন

কাইসর বা কায়সার / ড. মোহাম্মদ আমীন

‘কাইসর/কায়সর’ শব্দের আভিধানিক অর্থ সম্রাট,  রাজা , বাদশাহ বা প্রচণ্ড ক্ষমতাধর ব্যক্তি। ল্যাটিন শব্দ Caesar হতে কাইসর/কায়সার শব্দটির উৎপত্তি। এখন  রাজা- বাদশা  নেই, তবে ক্ষমতাধর ব্যক্তির অভাব নেই।  রাজা -বাদশার মতো ক্ষমতাধর ও শক্তিশালী বোঝাতে শব্দটির প্রচলন এখনও দেখা যায়। তবে এটি আগের মত প্রচলিত নয়। এক সময় শব্দটির বহুল প্রচলন ছিল।

অ-কার এবং ও-কার / ড. মোহাম্মদ আমীন

বাংলা ভাষায় এমন অনেক শব্দ আছে, যা 'অ'-ধ্বনির বিবৃত ও সংবৃত উচ্চারণের জন্য অনেক সময় অর্থ অনুধাবনে বিভ্রান্তি দেখা যায়। তাই ওই পদগুলোর অর্থ অনুধাবনে বিভ্রান্তি এড়াতে 'অ'-ধ্বনির সংবৃত উচ্চারণ বুঝানোর জন্য 'ও'-কার ব্যবহার করা হয়। উদাহরণ হিসেবে 'ভাল' শব্দটি উল্লেখ করা যায়। যখন 'ভাল' শব্দটির অন্ত্য-'অ'-এর উচ্চারণ বিবৃত (ভাল্) হয়, তখন শব্দটি দ্বারা 'কপাল'; 'ভাগ্য' ইত্যাদি বুঝায়। আবার 'ভাল' শব্দটির অন্ত্য-'অ'-এর উচ্চারণ সংবৃত (ভালো) হলে শব্দটি দ্বারা গুণ বুঝানো হয়। তাই 'ভাল' শব্দটি গুণ হিসেবে ব্যবহৃত হলে অন্ত্য-'অ'- এর সংবৃত উচ্চারণ বুঝাতে শেষে 'ও'-কার লেখা হয়।   তবে যেসকল শব্দে 'অ'-ধ্বনির বিবৃত ও সংবৃত উচ্চারণের জন্য অর্থগত কোনো সমস্যা দেখা দেয় না, সেসকল শব্দে 'ও'-কার ব্যবহার সমীচীন নয়।

কানা বগীর ছা / ড. মোহাম্মদ আমীন

ছড়াকে অনেকে অর্থহীন বলে থাকেন। অর্থপূর্ণ শব্দ দিয়ে ছড়া লেখা হয়। তাই কোনো ছড়া অর্থহীন হতে পারে না। বরং আপাত অর্থহীনতার আড়ালে লুকিয়ে থাকে ব্যাপক অর্থ ও বিস্তৃত অনুবোধ। খান মুহম্মদ মঈনুদ্দিনের ‘কানা বগীর ছা’ ছড়াটির ভাবার্থ দেখুন। ঐ দেখা যায় তাল গাছ ঐ আমাদের গাঁ, ঐ খানেতে বাস করে কানা বগীর ছা । ও বগী তুই চাস কি? পান্তা ভাত খাস কি ? পান্তা আমি খাই না পুঁটি মাছ পাই না, একটা যদি পাই; অমনি ধরে গাপুস গুপুস খাই। শব্দার্থ : তাল গাছ : আকাশ পর্যন্ত বিস্তৃত সবুজে সমৃদ্ধ, সমৃদ্ধতার চিহ্ন। কানা বগী : সাধারণ মানুষ, কৃষক, মজুর, শ্রমজীবী। চাস : লোভ-লালসা, চাওয়া পাওয়া। পান্তা ভাত : প্রকৃতির অবারিত দান। পুঁটি মাছ : সাধারণ বিষয়-বস্তু, চাহিদা। গাপুসগুপুস : খুব আনন্দ, মহাতৃপ্তি। ভাবার্থ : আমাদের গ্রাম মাটি হতে আকাশ পর্যন্ত বিস্তৃত সবুজে সমৃদ্ধ। সেই সবুজ সমৃদ্ধ গ্রামে কোনো রুই-কাতলা বাস করে না। যারা বাস করে তারা, অধিকাংশই কৃষক, মজুর, শ্রমজীবী। ওই সাধারণ মানুষগুলোর লোভ-লালসা নেই বললেই চলে। ওরা কিছুই চাই না।ওখানে প্রাকৃতিক ঐশ্বর্য্য এতই অবারিত যে, না চাইতে সব এসে ভীড় করে। তাই এসবের জন্য গ্রামবাসীকে লোভাতুর

শ্বশুর ও শাশুড়ি / ড. মোহাম্মদ আমীন

‘শ্বশুর’ ও ‘শাশুড়ি’ বানান নিয়ে আমার মতো ঝামেলায় কেউ পড়েছে কি না জানি না। অামার এক শিক্ষক বুদ্ধি দিলেন ঝামেলা মুক্তির। অশ্বের ‘শ্ব’ এবং ‘শিশুর’ শুর মিলে হয় শ্বশুর।‘শাশুরি’ বানান লিখতে গেলে প্রথমে ‘শাল’ এর কথা মনে করবে। তারপর, ‘শাল’ এর ‘শা’ ‍এর পাশে মুড়ি (আবরণ) বসিয়ে দাও। ব্যাস, শাশুড়ি পেয়ে যাবে। আরও সহজভাবে বলা যায় : ১.শ্বশুর (শ্ব+ শুর) :  অশ্ব শিশুর মালিক| ২.শাশুড়ি( শা +শু+ড়ি) : শালে শুয়ে মুড়ি। 

কবিতায় ভুল / ড. মোহাম্মদ আমীন

Image
‘সংকল্প’ জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের লেখা একটি বিখ্যাত কবিতা। পঞ্চম শ্রেণির পাঠ্যপুস্তকের বাংলা বইয়ে অন্তর্ভুক্ত এ কবিতাটিতে পাঁচটি ভুল করা হয়েছে। যেমন : প্রথম লাইনে আছে, ‘থাকব না কো বদ্ধ ঘরে’। এটি হবে ‘থাকব নাকো বদ্ধ ঘরে’। ‘পাতাল ফেড়ে নামব নিচে’ -এর স্থলে হবে, ‘পাতাল ফেড়ে নামব আমি’। ‘উঠব আবার আকাশ ফুঁড়ে’ বাক্যাংশের স্থলে হবে, ‘উঠব আমি আকাশ ফুঁড়ে।’ বিশ্বজগৎ-এর মাঝখানে হাইফেন (-) দিয়ে লেখা হয়েছে ‘বিশ্ব-জগৎ’। অথচ একই বইয়ের অন্য জায়গায় ‘বিশ্বজগৎ’ শব্দটি হাইফেন ছাড়া লেখা হয়েছে।

ইকড়ি মিকড়ি / ড. মোহাম্মদ আমীন

Image
ইকড়ি মিকড়ি চাম-চিকড়ি, চামের কাঁটা মজুমদার। ধেয়ে এল দামোদর দামোদরের হাঁড়ি-কুঁড়ি। দাওয়ায় বসে চাল কাঁড়ি। চাল কাঁড়তে হল বেলা, ভাত খাওগে দুপুরবেলা। ভাতে পড়ল মাছি, কোদাল দিয়ে চাঁছি। কোদাল হল ভোঁতা খা কামারের মাথা। অনেক আগে ছড়াটি মুখস্থ করেছিলাম কিন্তু অর্থ জানতাম না। শিক্ষক বলতেন, ‘অর্থহীন, শিশুদের মজার জন্য রচিত।’ কলিম খান ও রবি চক্রবর্তীর বঙ্গীয় শব্দার্থকোষ পড়ে জানলাম, ছড়াটি অর্থহীন নয়। ছড়াকার অসাধারণ দক্ষতায় চিরন্তন বাংলার সাধারণ মানুষের আর্থ-সামাজিক অবস্থা তুলে ধরেছেন। প্রাচীন বাংলার মতো এখনও সাধারণ মানুষের আর্থ-সামাজিক অবস্থা অভিন্ন রয়ে গেছে। একটুও পরিবর্তন হয় নি। একটি ছোট্ট ছড়ায় ছড়াকার কিভাবে চিরন্তন বাংলাকে কালজয়ী ভাষায় তুলে ধরেছেন দেখুন : ইকড়ি : গতিশীলভাবে কর্মফল সংগ্রহ করি [অর্থাৎ সংসার পরিপালনের জন্য সারাদিন কঠোর পরিশ্রম করি]। মিকড়ি : সীমায়িত কর্মফল সংগ্রহ করি [অর্থাৎ তারপরও হয় না, তাই আরও কিছু উপার্জনের চেষ্টা করি]। চাম : (আমাদের) চড়ে বেড়ানোর বা রুজি-রোজগারের এলাকায়। চিকড়ি : (ঘুরে ঘুরে) কর্মফল চয়ন করে আনি [রোজগার বা ফসল নিয়ে আসি]। চামের কাঁটা মজুমদার : রাজকর্মচারী মজুমদা

প্রত্যয়ন ও প্রত্যায়ন / ড. মোহাম্মদ আমীন

‘প্রত্যয়ন’ ও ‘প্রত্যায়ন’ শব্দের সঙ্গে ‘প্রত্যয়’, ‘প্রত্যয়নপত্র’ ও ‘সত্যায়ন’ শব্দের নিবিড় আত্মীয়তা রয়েছে। ‘প্রত্যয়’ শব্দের অর্থ প্রতীতি, বিশ্বাস, নিশ্চয়াত্মক ধারণা, নিঃসন্দিগ্ধতা প্রভৃতি, এটি বিশেষ্য। ‘সত্যায়ন’ শব্দের অর্থ হচ্ছে, সত্যতা নিশ্চিতকরণ, ইংরেজি পরিভাষায় attestation । এটি বিশেষ্য পদ। ‘প্রত্যয়নপত্র’ শব্দের অর্থ হচ্ছে, যে পত্রে কোনো দলিলের নির্ভুলতা প্রতিপাদন করা হয়। ‘প্রত্যয়িত’ শব্দের অর্থ, নির্ভুল বলে প্রতিপাদন করা হয়েছে এমন, সত্যায়িত, ইংরেজি পরিভাষায় attested. এটি বিশেষণ।   ‘প্রত্যয়ন’ শব্দের অর্থ, নির্ভুল বলে প্রতিপন্নকরণ, সত্যায়ন প্রভৃতি। এর ইংরেজি পরিভাষা attestation। এটি বিশেষ্য। তাহলে, জেলাম্যাজিস্ট্রেটের সনদের একটি অংশ “এই মর্মে প্রত্যয়ন করা যাচ্ছে যে, করিম সাহেবের বড়ো ছেলের নাম জাফর।” কথাটির অর্থ হবে : “এই ‘মর্মে নির্ভুল বলে প্রতিপন্নকরণ করা/ নিশ্চিতকরণ করা যাচ্ছে যে, করিম সাহেবের বড়ো ছেলের নাম জাফর।” এখানে ‘প্রত্যয়ন’ শব্দ দিয়ে সত্যতা নিশ্চিত করার বিষয়টি প্রাধান্য পেয়েছে। যেমন : জেলাম্যাজিস্ট্রেটের সনদ নিশ্চিত করলেন যে, করিম সাহেবের বড়ো ছেলের নাম জাফর।   ‘প্রত্যায়

প্রত্যয়-পাঠ / অভিজিৎ অভি

ব্যাকরণের সবচেয়ে কঠিন অধ্যায় হল প্রকৃতি-প্রত্যয় (ব্যক্তিগত অভিমত)। তবে কিছু সহজ নিয়ম দিয়ে অনেকগুলো জটিল শব্দের প্রত্যয় সহজে ব্যাখ্যা করা যায়। আজ তেমন একটি নিয়ম দেখা যাক। নিয়ম: উ+অ=ব। ষ্ণ একটি তৎসম তদ্ধিত প্রত্যয়, এর ‘ষ’ ও ‘ণ’ ইৎ হয়ে যায় বা হারিয়ে যায় এবং শুধু ‘অ’ থাকে। যদি প্রকৃতির শেষে ‘উ’ থাকে, তাহলে উ আর অ মিলে ‘ব’ হয়ে যায়। এর সাথে আদিস্বরের বৃদ্ধিও(অ>আ, ই,ঈ>ঐ, উ,ঊ> ঔ, ঋ>আর) ঘটে। এই নিয়মের কতগুলো শব্দ: মনু+ষ্ণ=মানব ধাতু+ষ্ণ=ধাতব বস্তু+ষ্ণ=বাস্তব পাণ্ডু+ষ্ণ=পাণ্ডব ভৃগু+ষ্ণ=ভার্গব কুরু+ষ্ণ=কৌরব সুষ্ঠু+ষ্ণ=সৌষ্ঠব বন্ধু+ষ্ণ=বান্ধব যদু+ষ্ণ=যাদব পশু+ষ্ণ=পাশব ঋজু+ষ্ণ=আর্জব গুরু+ষ্ণ=গৌরব লঘু+ষ্ণ=লাঘব রঘু+ষ্ণ=রাঘব বসু+ষ্ণ=বাসব জন্তু+ষ্ণ=জান্তব দনু+ষ্ণ=দানব বিষ্ণু+ষ্ণ=বৈষ্ণব মধু+ষ্ণ=মাধব

য- প্রত্যয় / মোরশেদ হাসান

য-প্রত্যয় যুক্ত হয়ে বিশেষ্য হলে পদান্তে তা-প্রত্যয় যুক্ত করে আবার বিশেষ্য করা রীতিসিদ্ধ নয়।  যেমন- কৃপণ + য = কার্পণ্য + তা = কার্পণ্যতা, দীন  + য = দৈন্য + তা = দৈন্যতা, দরিদ্র + য = দারিদ্র্য + তা = দারিদ্র্যতা, সুজন + য = সৌজন্য + তা = সৌজন্যতা, গম্ভীর + য = গাম্ভীর্য + তা = গাম্ভীর্যতা, মধুর + য = মাধুর্য + তা = মাধুর্যতা, নিপুণ + য = নৈপুণ্য + তা = নৈপুণ্যতা, লবণ + য = লাবণ্য + তা = লাবণ্যতা, কঠিন + য = কাঠিন্য + তা = কাঠিন্যতা।

তা আর ত্ব / ড. মোহাম্মদ আমীন

‘তা’ ও ‘ত্ব’  বিশেষ্য পদের চিহ্ন। কোনো কোনো বিশেষণ পদের সঙ্গে -তা, আবার কোনো কোনোটায় –ত্ব যোগ করে বিশেষণ পদকে বিশেষ্য পদে পরিবর্তন করতে হয়।  যেমন- অমর> অমরতা, অমরত্ব, নবীন> নবীনতা, নবীনত্ব, নূতন> নূতনত্ব, পঙ্গু> পঙ্গুত্ব, পশু> পশুত্ব, কৃপণ> কৃপণতা, জড়> জড়তা, মূর্খ> মূর্খতা, শত্রু> শত্রুতা, সফল> সফলতা ইত্যাদি। তবে কোথায় তা বসবে আর কোথায় ত্ব তার কোন স্বচ্ছ নিয়ম নেই।

ঊ-কার ব্যবহারের নিয়ম/ নীলিমা চৌধুরী

০১. তৎসম শব্দে ঊ-কার/ঊ ব্যবহৃত হয়। যেমন : ঊর্মি, ঊর্ণা,  বধূ , প্রতিভূ। ০২. সন্ধিঘটিত কতিপয় শব্দে ঊ-কার ব্যবহৃত হয়। যেমন : মরু + উদ্যান = মরূদ্যান, কটু + উক্তি = কটূক্তি, লঘু + ঊর্মি = লঘূর্মি।   ০৩. সমাসবদ্ধ পদের পূর্বপদের ঊ-কার বহাল থাকে। যেমন : কূটনীতি, ঘূর্ণিপাক, পূর্ণমান, রূপরস।   ০৪. সমাসবদ্ধ পদের মধ্যাংশে ঊ-কার হয়। যেমন : উপকূল, ভূতপূর্ব, পটভূমি, জন্মভূমি ইত্যাদি।"